তেহরান, বাগদাদ ও বৈরুতে শুক্রবার জুমার নামাজের পর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। ইরানের ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার প্রতিবাদে সংগঠিত এসব বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন সাধারণ মানুষ। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বিক্ষোভে প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, তেহরানে বিক্ষোভকারীরা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নিহত কমান্ডারদের ছবি বহন করছেন, কেউ কেউ ইরান ও হিজবুল্লাহর পতাকা হাতে নিয়ে শ্লোগান দিচ্ছেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজনের হাতে ছিল ব্যানার, যাতে লেখা, ‘আমি আমার নেতার জন্য জীবন উৎসর্গ করব’। এখানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির প্রতি আনুগত্যের বার্তা দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, শুধু তেহরান নয়, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবরিজ এবং দক্ষিণের শিরাজসহ ইরানের বিভিন্ন শহরে একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে।
তেহরানে জুমার নামাজ পরিচালনাকারী ইমাম মোহাম্মদ জাওয়াদ হাজ আলী আকবারি বলেন, ইসরায়েল হতাশা থেকে ইরানকে আক্রমণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, ওরা আমাদের জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চায়। এটা এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। তাদের পরিকল্পনা নিখুঁত ছিল, কিন্তু হিসাবটা ছিল হাস্যকর।
গত সপ্তাহে ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় আকাশ হামলা চালায়, যার জবাবে তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এই হামলা ও পাল্টা হামলায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে।
ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া ধর্মীয় নেতা মোক্তাদা সদরের অনুসারীরাও বাগদাদের সদর সিটি এলাকায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ করে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী স্লোগান দেয় হাজারো বিক্ষোভকারী।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আবু হুসাইন নামের এক ট্যাক্সি চালক বলেন, এটি অন্যায় যুদ্ধ। ইসরায়েলের কোনও অধিকার নেই ইরানকে আঘাত করার।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নয়। আসল উদ্দেশ্য হলো মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া।
বাগদাদ ছাড়াও কুফা শহরে ইসরায়েল ও আমেরিকার পতাকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ করে প্রতিবাদকারীরা। ইরাক একদিকে যেমন ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারও।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হিজবুল্লাহর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দক্ষিণাঞ্চলে শত শত মানুষ ইরান, হিজবুল্লাহ ও লেবাননের পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় নামেন। কেউ কেউ খামেনির ছবিও বহন করেন।
৬০ বছর বয়সী আদনান জায়তুন বলেন, জায়নবাদী ইসরায়েলি শত্রুর বিরুদ্ধে ইরানের পাশে দাঁড়ানো আমার দায়িত্ব।
যদিও হিজবুল্লাহ এখনও ইরানের হয়ে সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর কোনও ঘোষণা দেয়নি।
১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ফাদেল সাআদ বলেন, আমরা এসেছি আমেরিকা ও ইসরায়েলকে দেখাতে যে, আমরা অপরাজেয়, ঘরবাড়ি ধ্বংস হলেও আমাদের মনোবল ভাঙবে না।
ইরান-সমর্থিত হুথি গোষ্ঠীর ডাকে ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ বিভিন্ন এলাকায়ও বিশাল বিক্ষোভ হয়। হুথি নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার তথ্যমতে, লাখো মানুষ সেখানে বিক্ষোভে অংশ নেয়।
এদিকে ইরান-সমর্থিত ইরাকি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধে নামে তাহলে তারা ওয়াশিংটনের আঞ্চলিক স্বার্থে হামলা চালাবে।