হোয়াইট হাউজে যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরুর আগে গাজার উত্তরে ভয়াবহ বোমাবর্ষণের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় ফিলিস্তিনিরা। সোমবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নতুন করে সরে যাওয়ার নির্দেশ জারি করার পর গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় ট্যাংক ও বিমান হামলা চালানো হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
৬০ বছর বয়সী গাজা নগরীর বাসিন্দা সালাহ বলেন, বিস্ফোরণের শব্দ থামছেই না। তারা স্কুল ও ঘরবাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। যেন ভূমিকম্প হচ্ছিল। টিভিতে শুনি যুদ্ধবিরতি আসছে। কিন্তু আমাদের আশপাশে শুধু মৃত্যু আর ধ্বংস।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমবারের হামলায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০ জন জেইতুন এলাকায়।
বিমান হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটির জেইতুন এলাকায় প্রবেশ করে। পাশাপাশি উত্তরের একাধিক স্কুলে বোমাবর্ষণ চালানো হয়। এসব স্কুলে শত শত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য না করলেও তাদের দাবি, হামাস যোদ্ধারা সাধারণ মানুষের ভিড়ে লুকিয়ে থাকে। হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সোমবার হোয়াইট হাউজে পৌঁছানোর কথা ছিল ইসরায়েলের কৌশল বিষয়কমন্ত্রী রন ডারমারের। তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সেখানে গাজা যুদ্ধবিরতি, ইরান ও সম্ভাব্য আঞ্চলিক কূটনৈতিক সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।
সেদিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, গাজায় সমঝোতা করুন, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনুন।
তবে বাস্তবে যুদ্ধবিরতির কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং ইসরায়েল নতুন করে গাজার উত্তরাঞ্চলে মানুষদের দক্ষিণে চলে যেতে বলেছে। তাদের ভাষ্য, ওই অঞ্চলে আবার হামাস সক্রিয় হয়েছে।
মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির নতুন উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনও নতুন তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি। এক হামাস কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ ও গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার না করলে অগ্রগতি সম্ভব নয়। তবে ইসরায়েল বলছে, হামাসকে নিরস্ত্র ও ভেঙে না দিলে যুদ্ধ থামানো যাবে না। হামাস সেই দাবি মানতে রাজি নয়।
ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভাও সোমবার বৈঠকে বসে গাজায় পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার ইসরায়েলের সেনাপ্রধান জানান, স্থল অভিযানের মূল লক্ষ্যগুলো অর্জনের পথে। রবিবার নেতানিয়াহু বলেছেন, জিম্মি উদ্ধারের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে ২০ জন জিম্মি জীবিত রয়েছেন বলে ধারণা করছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ মানুষ হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে গাজায় নিয়ে যায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে, যা আজও চলছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। জাতিসংঘ বলছে, গাজার ৮০ শতাংশ অঞ্চল এখন সেনা-নিয়ন্ত্রিত এলাকা বা পুনর্বাসন নির্দেশনার আওতায় রয়েছে। প্রায় ২৩ লাখ মানুষের গাজা উপত্যকা এখন গভীর মানবিক সংকটে।