মোহাম্মদ আলীর জন্মশহর কেন্টাকির লুইসভিলে এখন শোকের মাতম। প্রিয় মানুষটির মৃত্যু মানতে পারছেন তারা। বিগত স্মৃতিগুলো সামনে এনে তারা যেন সদ্য প্রয়াত আলীকে জীবন্ত রাখার চেষ্টা করছেন।
শনিবার ভোরের আলো ফোটার পর পরই সেখানকার বাসিন্দারা জেনে গেছেন তাদের প্রিয় মানুষটি আর নেই। আর শোনা যাবে না সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ আন্দোলনের জোরালো কণ্ঠস্বরটি। চিরতরে না ফেরার দেশে চলে গেছেন বিশ্বের অনেকের কাছে ‘সর্বকালের সেরা বক্সার’ হিসেবে বিবেচিত মোহাম্মদ আলী।
১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি লুইসভিলায় জন্মগ্রহণ করেন আলী। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগ পর্যন্ত তার নাম ছিল ক্যাসিয়াস ক্লে। বাবা ক্যাসিয়াস মারকেলাস ক্লে সিনিয়র এর নাম অনুসারে একই নাম রাখা হয়েছিল তার। মাত্র ১২ বছর বয়সে বক্সিং-এর জগতে পা রাখা এই মুষ্টিযোদ্ধা জিতে নেন কোটি ভক্তের মন। তিন বারের ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন এবং অলিম্পিক লাইট-হেভিওয়েট স্বর্ণপদক বিজয়ী ছিলেন তিনি।
অনেক বছর ধরেই স্ত্রী লোনির সঙ্গে আরিজোনার বাড়িতে থাকতেন আলী। জীবনের শেষগুলোতেও আরিজোনাতেই ছিলেন তিনি। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আরিজোনার একটি হাসপাতালেই। তবে কিংবদন্তী এ বক্সারের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে তার জন্ম শহর লুইসভিলেতে। শুক্রবার তার শেষকৃত্য হবে।
৭৪ বছর বয়সী এই বক্সার কয়েক দশক ধরে যে পারকিনসন্স রোগে ভুগছিলেন সেটা সবারই জানা ছিল। তবুও তার এ হঠাৎ চলে যাওয়াকে এখনও মেনে নিতে পারছেন না লুইসভিলের বাসিন্দারা। অনেকেই ভিড় করছেন মোহাম্মদ আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্মিত জাদুঘর মোহাম্মদ আলী সেন্টারে। সেখানে আলীর প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন তারা।
মোহাম্মদ আলী সেন্টারে সর্বপ্রথম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কেভিন ইসমাইল নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমি ভাবিনি তিনি এতো দ্রুত চলে যাবেন।’
জাদুঘরটিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর এবং মোমবাতি জ্বালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ৩৯ বছর বয়সী আর্নল্ড মাথিস। তিনি বলেন, ‘আমি কাঁদলাম। খবরটি শুনে আমি বাচ্চাদের মতো কাঁদলাম। এটি খুবই পরাবাস্তব অনুভূতি। আমি জানি তিনি মৃত। কিন্তু এখনও তা মেনে নিতে পারছি না।’
স্থানীয় টেলিভিশন, রেডিও স্টেশন এমনকি দৈনিক সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় আলীকে উল্লেখ করা হচ্ছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ হিসেবে। লুইসভিলে সিটি হলের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
লুইসভিলের মানুষ আলীকে নিয়ে কতটা গর্বিত ছিলেন সেটা বোঝা যায় শহরটির মেয়র গ্রেগ ফিসচারের বক্তব্য থেকে। শোকাহত জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদ আলী গোটা বিশ্বের, কিন্তু তার জন্মশহর একটিই। লুইসভিলের এ কণ্ঠস্বর প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলতেন, কিন্তু আমরা যেভাবে তার কথা শুনতে পারতাম তা আর কেউ পারত না। আমরা কেউ ভাই হিসেবে, কেউ চাচা হিসেবে আবার কেউ উৎসাহদাতা হিসেবে তার কথা শুনতাম।’
লুইসভিলের প্রায় সব বাসিন্দারই বোধহয় আলীকে নিয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও গল্প রয়েছে। আলীর শৈশবের বাড়িটিকেই জাদুঘর বানানো হয়েছে এবং গত সপ্তাহ থেকেই তা উন্মুক্ত করা হয়েছে। ইন্টেরিওর জাদুঘরটিকে এমনভাবে সজ্জিত করেছেন যে দেখে মনে হবে ৫০ এর দশকের শিশু আলী এখনও সেখানে আছেন।
শনিবার দুপুর পেরোতেই গোলাপি রংয়ের বাঙলোটির সামনের দরজা বেলুন, ফুল আর শোক নোটে ভরে যায়।
স্ত্রী ভায়োলেটকে নিয়ে জাদুঘরে আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন লরেন্স মন্টগোমারি। ৫ বছর বয়সী আলীর সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়েছিল তাদের। তখন আলীর নামছিল ক্যাসিয়াস ক্লে। লরেন্স বলেন, ‘আমি খুব কষ্টে আছি। আমি খুব ভালো একজন বন্ধুকে হারালাম।’
লরেন্স জানান, আলী প্রায় সময় তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। তাদেরকে বিভিন্ন জাদু দেখাতেন।
মোহাম্মদ আলীর ভাই রহমান আলীও জাদুঘরে গেছেন বড় ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। তিনি বলেন, ‘আমি অশ্রু আটকে রাখতে পারছি না। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিনগুলোর একটি। আমার ভাই না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ভালো হতো যদি তার আগে আমিই চলে যেতে পারতাম।’
বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রহমান বলেন, ‘আমার ভাই এতো সম্মান আর ভালোবাসা পেয়েছেন দেখে আমিও সম্মানিত বোধ করছি। মোহাম্মদ আলীর বিকল্প হতে পারে না। মহান হওয়ার জন্যই জন্ম তার।’ সূত্র: বিবিসি
/এফইউ/বিএ/