X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কটা ভারতের মাথাব্যথা নয়’

রঞ্জন বসু, দিল্লি প্রতিনিধি
২৯ নভেম্বর ২০১৬, ২২:২১আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০১৬, ২২:২৫

জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে একমাত্র বাঙালি সেনা প্রধান। পরম বিশিষ্ট সেবা পদকে ভূষিত এই সাবেক সেনাধ্যক্ষ ১৯৬৫-র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় লড়েছেন খুলনা-যশোর ফ্রন্টেও।বাহিনী থেকে অবসরের পর এক বিরল পদক্ষেপে পশ্চিমবঙ্গের সব রাজনৈতিক দল একমত হয়ে তাকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিল এবং পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবেও জেনারেল রায়চৌধুরী অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকারের গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে তিনি এই সফর, আর ভারত-বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে। তাঁর সেই সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ:

শঙ্কর রায়চৌধুরী

জেনারেল, সংবাদমাধ্যমে লেখা হচ্ছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর চীনের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে, আর সেটা মোকাবিলা করাটাই মনোহর পারিকারের সফরের প্রধান উদ্দেশ্য। আপনি কী মনে করেন?

শঙ্কর রায়চৌধুরী: আমি প্রথমেই চীনের কথাটা বাদ দিতে চাই। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ কী ধরনের সম্পর্ক রাখবে, সেটা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা একটা ইস্যু। এর সঙ্গে ভারতের কোনও সম্পর্ক নেই। একটা সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাদের নিজস্ব নীতি অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক রাখতেই পারে। সেখানে কারও কিছু বলার থাকতে পারে না। ফলে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই সফরকে লিঙ্ক করার আমি কোনও কারণ দেখি না। কারণ, তিনি সেখানে যাবেন ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে। সেই সফরকে ভারত-বাংলাদেশের প্রিজম দিয়েই দেখা উচিত । এর সঙ্গে আর কোনও কিছুর সম্পর্ক টানার কোনও মানে হয় না।

কিন্তু হ্যাঁ, বাংলাদেশে আমাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই সফর অবশ্যই একটা দারুণ পদক্ষেপ। দুটো দেশের মধ্যে যে চমৎকার বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক আছে এবং বিশেষত এখন সেই সম্পর্ক যে সুসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাতে এটা অত্যন্ত ইতিবাচক একটা সিদ্ধান্ত বলেই আমি মনে করি। তাছাড়া, যতদূর মনে পড়ে বহুদিন হলো ভারতের কোনও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশে যাননি ,কিংবা আদৌ কোনও দিন গেছেন কি?

না,অন্তত সাম্প্রতিক অতীতে কোনও ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশে যাননি ...

শঙ্কর রায়চৌধুরী: হ্যাঁ, আমারও সেরকম কিছু মনে পড়ছে না। মি. পারিকারের আগে এ কে অ্যান্টনি অনেক বছর দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন, তিনি তো যাননি বটেই। তবে ভারতের সেনাপ্রধানরা অবশ্য অনেকেই বেশ ঘন ঘন ঢাকা সফর করে থাকেন। জেনারেল ভি পি মালিক বা জেনারেল বিক্রম সিং গেছেন। বর্তমান সেনাধ্যক্ষ দলবীর সিং সুহাগও তো গত বছরেই ঘুরে এলেন। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সফর অবশ্যই খুব বিরল। তাই আমি আবার বলব, দুটো দেশের মধ্যে দারুণ একটা সুসম্পর্ক চলছে। আর সেই পটভূমিতেই মি. পারিকার সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা খুব ভাল কথা।

সামরিক শক্তি ও সামর্থ্যের বিচারে ভারত ও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে অনেক ফারাক আছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এরকম দুটো প্রতিবেশীর মধ্যে আসলে কী ধরনের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে?

শঙ্কর রায়চৌধুরী: এখানে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক মানে সহযোগিতা। প্রতিরক্ষা খাতে যতভাবে এই দুই দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা করবে, তত সেই সম্পর্ক মজবুত হবে। ভারত বরাবরই তা করে এসেছে। আর সব সময়ই সহযোগিতা করতে প্রস্তুতও আছে।

আসলে দুটো দেশের মধ্যে প্রগাঢ় সহযোগিতা ও বন্ধুত্বতো আছে চিরকালই। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি শাখা থেকেই অফিসার ও অফিসার পদমর্যাদার নিচের সেনা সদস্যরা বহুদিন ধরেই ভারতে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে আসেন। ভারতও তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে।
বেশ কয়েক বছর হলো দুদেশ মিলে তো যৌথ সামরিক মহড়াও করছে ...

শঙ্কর রায়চৌধুরী: ঠিকই বলেছেন, যৌথ মহড়াও হচ্ছে সাফল্যের সঙ্গে। আমাদের সেনা অফিসাররাও নিয়মিত বাংলাদেশের স্টাফ কলেজগুলোতে যান। ফলে একটা চমৎকার বন্ধুত্বের সম্পর্কও গড়ে উঠেছে দুই বাহিনীর মধ্যে। আমরা তাতে খুবই খুশি এবং ভারত চায় সম্পর্কটা এভাবেই চলতে থাকুক।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সেনাবাহিনী কী ভূমিকা পালন করেছিল সেটা সবাই জানেন। কিন্তু তারপর বিগত সাড়ে চার দশকে দুটো স্বাধীন দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক কি আশানুরূপভাবে এগিয়েছে? আপনি কী মনে করেন?

শঙ্কর রায়চৌধুরী: দেখুন ‘আশানুরূপভাবে’ কথাটা আমি ইন্টারপ্রেট করব না। ব্যাখ্যাও করব না। করব না কারণ, এটা করা যায় না। সময়ে সময়ে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বদলাতে থাকেই। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে সম্পর্ক আছে, তা সার্বিকভাবে এতদিন ভালই চলেছে, ভালই আছে আমি বলব। তবে এটাও ঠিক, বাংলাদেশের ভেতরে যখনই কোনও ক্ষমতার রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে, তখনই সেই সম্পর্ককে নতুন করে ‘রিক্যালিব্রেট’ করার প্রয়োজন হয়েছে।

এটাও তো ঠিক যে বাংলাদেশে কোনও কোনও জমানায় সেনাবাহিনীর ভেতর ইসলামিকরণের প্রভাব বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, সেটাও নিশ্চয় ভারতকে স্বস্তিতে রাখেনি ? এমনকি পাকিস্তানের প্রভাব বিস্তারের কথাও শোনা গেছে ...

শঙ্কর রায়চৌধুরী: ওই জন্যই আমি বলছিলাম নানা সময়ে একটা দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বদলায়। তবে সব কিছুর পরেও বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক সম্পর্ক বেশ ভালো। আর ‘পিপল টু পিপল কনট্যাক্ট’ বা দুদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সম্পর্ক তো ভীষণই ভালো। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ আজকাল নানা কাজে ভারতে আসেন, বেড়াতে আসেন। এই কিছুদিন আগে খবরের কাগজে একটা ছবি দেখছিলাম, ভারতে বড় অঙ্কের নোট অচল হয়ে যাওয়ার পর কলকাতায় আসা এক বাংলাদেশি দম্পতি বিরাট বিপদে পড়েছিলেন। শহরের অচেনা মানুষজন যেভাবে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন, তা সত্যিই ভাবা যায় না।

কাজেই আমি বলব, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সহমর্মিতা আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক চিরকালই আছে। আর দুদেশের মানুষের মধ্যে আত্মীয়তার টান তো সাঙ্ঘাতিক। রাজনৈতিক সম্পর্কও তো বেশ ভালোই বলতে হবে। বড় কোনও সিরিয়াস সমস্যা তো দুদেশের মধ্যে আছে, তেমনটা বলা যাবে না। তো এভাবে চললে মন্দ কী?

এতদিন বাদে ভারতের কোনও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশ যাচ্ছেন। আপনি যেমনটা বলছিলেন, দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভালো, বড় কোনও সমস্যাও নেই। কিন্তু এরকম একজন মন্ত্রীর সফর সেই সম্পর্কে কি কোনও বাড়তি মাত্রা যোগ করতে পারে? বা কোনও পার্থক্য গড়ে দিতে পারে?

শঙ্কর রায়চৌধুরী: পার্থক্য বলতে সে রকম কিছু না। তবে কী, মনে রাখতে হবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতের কেবিনেটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সিনিয়র একজন সদস্য। এই মাপের একজন মন্ত্রীকে যখন সরকার এত বছর বাদে বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তিনি সেখানে সরকারের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবেন, তা থেকেই বোঝা যায় বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ভারত কতখানি গুরুত্ব দিচ্ছে।

জেনারেল রায়চৌধুরী, বাংলা ট্রিবিউনকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।

শঙ্কর রায়চৌধুরী: ধন্যবাদ আপনাকেও।

এপিএইচ/

আরও পড়ুন: ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারিকার আসছেন কাল

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মে, ২০২৪)
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত
চট্টগ্রামে লরি চাপায় মৃত্যু বেড়ে তিন
চট্টগ্রামে লরি চাপায় মৃত্যু বেড়ে তিন
রাজধানীতে রিকশাচালকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার
রাজধানীতে রিকশাচালকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক