X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ থেকে ২৪১৫ ‘নাগরিক’ ফেরত নেবে মিয়ানমার

বিদেশ ডেস্ক
৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ২২:১৯আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ২৩:১৫

জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা একদল রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের ‘নাগরিক’দের মধ্য থেকে ২৪১৫ জনকে ফেরত নেবে দেশটি। ২০১৭ সালের মধ‌্যেই তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে মিয়ানমার সরকারের। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক কিয়াও জায়া’র বরাত দিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

হাজার বছর ধরে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে বসবাস করে আসলেও তাদের দেশটির নাগরিকত্ব দিতে রাজি নয় মিয়ানমার সরকার। বরং রোহিঙ্গা মুসলিমরা বাংলাদেশ থেকে গিয়ে সেখানে আবাস গড়েছে বলে দাবি করে দেশটি। তবে মিয়ানমারের এমন দাবি সবসময়ই প্রত্যখ্যান করে আসছে বাংলাদেশ।

মিয়ানমারের এই কর্মকর্তা রয়টার্সের কাছে বাংলাদেশ থেকে ২৪১৫ ‘নাগরিক’ ফেরত নেওয়ার কথা বললেও সুনির্দিষ্টভাবে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কিছু বলেননি। বরং দেশটি যেহেতু রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবেই স্বীকার করে না ফলে এ বিষয়ে অনিশ্চয়তারও অবসান ঘটছে না।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক কিয়াও জায়া রয়টার্সকে বলেন, তাদের হিসেবে বাংলাদেশে মিয়ানমারের মাত্র দুই হাজার ৪১৫ জন নাগরিক রয়েছেন। তিনি দাবি করেন, তার দেশ সবসময়ই নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

নিজ দেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। তবে বাংলাদেশ বলছে, মিয়ানমারের উচিত তাদের ফিরিয়ে নেওয়া। শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে বসবাস করছে মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যের অন্তত তিন লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম। তবে এ সংখ্যক বার্মিজ নাগরিকের উপস্থিতির কথা মানতে রাজি নন মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার কোনও ধারণা নেই।

জনশূন্য পোড়া একটি রোহিঙ্গা গ্রাম

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। গত কয়েক দশক ধরেই তারা সেখানে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে দেশটিতে নতুন করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হতাহত হন বহু রোহিঙ্গা মুসলিম। বাংলাদেশ বলছে, জীবনের তাগিদে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমের সংখ্যা ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। আর জাতিসংঘের হিসাবে এ সংখ্যা ৩৪ হাজার।

মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর হত্যাধর্ষণগণধর্ষণের মতো বর্বরোচিত অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গাদের বহু গ্রাম। দেশটিতে অব্যাহত রোহিঙ্গা নির্যাতন মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা। সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছেজাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করতে মিয়ানমার সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

চলমান জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে জীবন বাঁচাতে রাখাইন রাজ্যের হাজার হাজার রোহিঙ্গার দৃষ্টি এখন বাংলাদেশ সীমান্তে। মাথায় একটাই চিন্তাকিভাবে নরককুণ্ড থেকে বেরিয়ে আসা যায়সেই নরক থেকে বেরিয়ে আসা একজন লালু বেগম। তার ভাষায়১০ বছরের অধিক বয়সের কোনো বালককে পেলেই তারা তাদের হত্যা করে। পুরুষদের সেনাবাহিনীর গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই নারী জানানতাদের সম্প্রদায়ের নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছেপরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হচ্ছে।

লালু বেগম সেনাবাহিনী যখন আসে তখন আমরা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাই। আমি জানি না আমার স্বামী জীবিত আছেন নাকি তিনি মৃত।

লালু বেগম বর্তমানে কক্সবাজারের কুতুপালং এলাকায় অবস্থান করছেন। তিনি সিএনএনকে জানানতার গ্রামের বহু নারী সরকারি সেনাদের হাতে ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন।

লালু বেগম বলেনতারা যখন কোনও সুন্দর নারী দেখে তখন তারা তাদের কাছে পানি চায়। এরপর তারা ঘরে ঢুকে তাদের ধর্ষণ করে।'

স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবিতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের দুটি গ্রামে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর তাণ্ডবের আগের ও পরের চিত্র। ছবি: এইচআরডব্লিউ।

রাখাইন রাজ্যে আনুমানিক ১০ লাখ রোহিঙ্গার বাস। জাতিসংঘের ভাষায় এরা বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী। এমনকি বংশ পরম্পরায় হাজার বছর ধরে সেখান বসবাস করে আসা এ জনগোষ্ঠীর শুধু নাগরিকত্ব অস্বীকারই নয়, তাদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয় ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি পর্যন্ত ব্যবহার করতে রাজি নয় মিয়ানমার সরকার। তারা এ সম্প্রদায়ের মানুষদের অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করে। অথচ বহু মানুষই মিয়ানমারে তাদের পূর্বপুরুষদের শিকড় প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

লালু বেগম বলেনআমাদের গ্রাম যখন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তখন আমরা অন্য গ্রামে চলে যাই। অব্যাহতভাবে অবস্থান বদলাতে থাকি। এভাবে আসতে আসতে আমরা নদীতীরে আসি।

তিনি বলেনএই আসার পথে অনেকেই তাদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন।

লালু বেগমের ভাবী নাসিমা খাতুন সিএনএনকে বলেনযাত্রা শুরু করার সময়ে আমরা ছয়জন ছিলাম। আমরা পরিবারের তিন সদস্যকে হারিয়েছি। আমার স্বামী ও এক পুত্রকে হত্যা করা হয়েছে। আরেক পুত্র নিখোঁজ রয়েছে।

জাতিসংঘ শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থার কর্মকর্তা জন ম্যাককেসিক বলেছেনমিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশ রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর যৌথ নিপীড়নচালাচ্ছে। জাতিসংঘের দাফতরিক সংজ্ঞা অনুযায়ী এথনিক ক্লিনজিং বা জাতিগত নিধন হলো সেই প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে হুমকি দিয়ে অথবা শক্তি প্রয়োগ করে কোনও একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড থেকে কোনও জাতিগত অথবা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে নির্মূল করে অপর কোনও জাতির একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়।আর তাদের হত্যা-ধর্ষণ-শিশু নির্যাতন-অগ্নিসংযোগ এবং লুটতরাজ ওই নির্মূল প্রক্রিয়ারই অংশ।

বাংলাদেশ থেকে ২৪১৫ ‘নাগরিক’ ফেরত নেবে মিয়ানমার

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে২০১২ সালে মিয়ানমার সরকারের মদদপুষ্ট উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের তাণ্ডবে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা নিহত হন। ঘর ছাড়তে বাধ্য হন ১ লাখেরও বেশি মানুষ। আর এ বছর অক্টোবর মাসের ৯ তারিখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। আর তখন থেকেই শুরু হয় সেনাবাহিনীর দমন প্রক্রিয়া। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবিএরপর থেকেই রাখাইন রাজ্যে 'ক্লিয়ারেন্স অপারেশনচালিয়ে যাচ্ছেন তারা। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইসলামি চরমপন্থা দমনে কাজ করছেন বলে দাবি করছেন তারা। আর তা এমন কঠোর প্রক্রিয়ায় চালানো হচ্ছে যে সেখানে সংবাদমাধ্যমকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

জন ম্যাককিসিক বিবিসিকে বলেননিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বাহিনী রাখাইন রাজ্যে মানুষকে গুলি করে হত্যা করছেশিশুদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছেনারীদের ধর্ষণ করছেঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছেলুটপাট চালাচ্ছেনদী পেরিয়ে তাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে

তিনি বলেনএখন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বলা খুব কঠিন যে তারা সীমান্ত উন্মুক্ত করে রেখেছে। কেননা এতে মিয়ানমার সরকারের জাতিগত নিধন প্রক্রিয়াকেই ত্বরান্তিত করা হবে। চূড়ান্ত অর্থে রোহিঙ্গাদের নির্মূল করার লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা হত্যাকাণ্ড এবং তাদের বিতাড়ন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবে।’ সূত্র: রয়টার্স, প্রেস টিভি, কোকোনাট ইয়াঙ্গুনবিবিসি বাংলাবিজনেস স্ট্যান্ডার্ডসিএনএন।

/এমপি/

সম্পর্কিত
তাইওয়ান প্রণালিতে আবারও চীনা সামরিক বিমান শনাক্ত
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
লাইয়ের অভিষেক পরবর্তী চীনা সামরিক মহড়া নিয়ে সতর্ক অবস্থানে তাইওয়ান
সর্বশেষ খবর
বৃষ্টির অপেক্ষায় নার্সারি ও গাছপ্রেমীরা
বৃষ্টির অপেক্ষায় নার্সারি ও গাছপ্রেমীরা
নিজ্জর হত্যার অভিযোগে কানাডায় তিন ভারতীয় গ্রেফতার
নিজ্জর হত্যার অভিযোগে কানাডায় তিন ভারতীয় গ্রেফতার
পিকআপের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গিয়ে ২ শ্রমিক নিহত
পিকআপের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গিয়ে ২ শ্রমিক নিহত
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
সর্বাধিক পঠিত
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের