ভারতে থাকা কথিত বাংলাদেশিদের এর আগে ‘উইপোকা’ বলে সম্বোধন করেছেন স্বয়ং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি অমিত শাহ। আর ‘ঘুষপেটিয়া’ (অনুপ্রবেশকারী) বলে গালাগালি তো নিত্যই লেগে আছে। কিন্তু এবার কথিত বাংলাদেশিদের নিয়ে বিচিত্র এক তথ্য জানালেন শীর্ষস্থানীয় আর এক বিজেপি নেতা– ‘শুধু পোহা (চিড়া) খাওয়া দেখেই নাকি বোঝা যায় তারা বাংলাদেশি কিনা!’
এই বিজেপি নেতার নাম কৈলাস বিজয়বর্গী, তিনি দলের জাতীয় স্তরের সাধারণ সম্পাদক এবং রীতিমতো দাপুটে নেতা। আদতে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের লোক হলেও গত বেশ কয়েক বছর ধরে দল তাকে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে। তাই তিনি সে রাজ্যেই বহু সময় কাটান এবং সেই সুবাদে তিনি এখন বাংলা বুঝতেও পারেন। কিন্তু প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও সেখানকার মানুষজন নিয়ে তার ধারণা যে কী রকম, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে কলকাতার এক আলোচনা সভাতেই।
কিন্তু ঠিক কী বলেছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গী, যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গেছে সারা ভারতজুড়ে?
ভারতে ঢুকে বাংলাদেশিরা কীভাবে কাজকর্ম বাগিয়ে নিচ্ছে, সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই তো ইন্দোরে আমার বাড়ির সামনে একটা কনস্ট্রাকশনের কাজ হচ্ছিল। আমি কয়েকদিন ধরে লক্ষ করলাম, ওখানে মজুররা সকাল-বিকাল খালি পোহা (চিড়া বা চিড়ার পোলাও) খাচ্ছে।’
‘আমি ওদের ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম ওরা নাকি রুটি খেতে চায় না, আর হিন্দিও বলতে পারে না। ওরা দুবেলা শুধু পোহা পেলেই খুশি, আর তাই ঠিকাদারও ওদের খালি পোহা-ই দিয়ে যাচ্ছে।’
‘এই শুধু পোহা খাওয়ার বিচিত্র খাদ্যাভ্যাস দেখেই আমার সন্দেহ হলো ওরা নির্ঘাত বাংলাদেশি। কিন্তু পুলিশে কোনও অভিযোগ জানাইনি আমি, তার আগে ওরা নিজে থেকেই ওখান থেকে চলে যায়!’ জানিয়েছেন বিজয়বর্গী।
তার এই মন্তব্য সামনে আসতেই ভারতজুড়ে হুলস্থুল পড়ে গেছে বলা যেতে পারে।
পোহা বা চিড়ার পোলাও ভারতের বহু রাজ্যেই সুলভ, সস্তা ও জনপ্রিয় একটি স্ন্যাক্স বলে পরিচিত– সেই পোহা খাওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশি হওয়ার কী সম্পর্ক, সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন নেটিজেনরা। সঙ্গে চলছে কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ।
#পোহা এদিন দুপুর থেকেই ভারতে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভীষণভাবে ট্রেন্ডিং, যার কারণ বোঝাও শক্ত নয়! পলিটিক্যাল স্যাটায়ারিস্ট আকাশ ব্যানার্জি, যিনি ‘দেশভক্ত’ নামে ইউটিউব ও ডিজিটাল চ্যানেল চালান; তিনি টুইট করেছেন, ‘এই অ্যান্টি-ন্যাশনাল খাবার #পোহা আমার সামনে প্লেটে কে এনে দিলো?’
মারাঠি সাংবাদিক নিখিল ওয়াগলে লিখেছেন, পুনে-মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় পোহা দারুণ জনপ্রিয় একটি খাবার। ‘আর এই পোহা খাওয়া দিয়ে যদি বাংলাদেশি চেনা যায় তাহলে তো আমি বলবো আমাদের পরিবার সাত পুরুষের বাংলাদেশি!’
সাবেক ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষ্মণ, গৌতম গম্ভীরদের ইন্দোরে পোহা ও জিলাপি খাওয়ার পুরনো একটি ছবি রিটুইট করে জনৈক মহম্মদ আবু নাসের আলম লিখেছেন, ‘পোহা আর জিলিপি খেতে গিয়ে ধরা পড়লেন কয়েকজন বাংলাদেশি!’
মাহক মোহন নামে আরেকজন টুইটার ব্যবহারকারী আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পুরনো একটি সাক্ষাৎকারের লিঙ্ক পোস্ট করেছেন, যেখানে কৈলাস বিজয়বর্গীর ‘বস’ নিজে বলেছিলেন, ‘পোহা আর খিচুড়ি ছাড়া আমার একদিনও চলে না!’
বেস্ট সেলার লেখক দেবদূত পট্টনায়ক টুইটারে নিরীহ একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, ‘পোহা কি ভারতীয় খাবার নয়?’
বেশিরভাগ মন্তব্য অবশ্য রসিকতার সীমাতেই আটকে আছে। তবে অনেকে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীকে এই মওকায় একহাত নিতেও ছাড়ছেন না। কিন্তু সার্বিকভাবে বাংলাদেশিদের সম্পর্কে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা কী অদ্ভুত ও বিচিত্র সব ধারণা পোষণ করেন গোটা ঘটনায় সেটা নিঃসন্দেহে আরও একবার স্পষ্ট হয়ে উঠলো।
First Beef eaters were anti- nationals.
— Advaid (@Advaidism) January 24, 2020
Now Poha eaters are anti- nationals.
At this rate everyone other dish other than Khichdi and Rajma Chawal will be under the scanner. https://t.co/zLrAwtZMcn
VVS and BJP MP @GautamGambhir were recently seen enjoying Jalebi and 'Poha' https://t.co/oXzCd5byh6 pic.twitter.com/brXFpRJcAk
— Mohammed Zubair (@zoo_bear) January 24, 2020