X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
করোনা ভাইরাস

যেভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করেছে হংকং

বিদেশ ডেস্ক
১২ মার্চ ২০২০, ১৮:২২আপডেট : ১২ মার্চ ২০২০, ২০:৫৭

চীনের পর প্রথম যে কয়েকটি দেশ বা অঞ্চলে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল, তার মধ্যে একটি হংকং। চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে লাগোয়া এই স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলটিতে প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় গত ২৩ জানুয়ারি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেখানে ১২২ জনের শরীরে এ ভাইরাস পাওয়া গেছে। এর প্রকোপে মারা গেছেন মাত তিন জন। বিশ্বের অন্যান্য দেশ বা অঞ্চলগুলোর চেয়ে হংকং-এ সংক্রমণ ও মৃতের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ফলে অঞ্চলটি কিভাবে তার বাসিন্দাদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করলো, সে প্রশ্নটি  সামনে উঠছে। যেভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করেছে হংকং
হংকং-এ করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বিবিসি-র সঙ্গে কথা বলেছেন হংকং প্রবাসী বাংলাদেশি প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান। তিনি সাত বছর ধরে সেখানে রয়েছেন।

মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান বিবিসি-কে বলেন, ২৩ জানুয়ারি হংকংয়ে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। আমার মতে, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে তাদের সবচেয়ে বেশি যেটা সাহায্য করেছে তা হলো তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা। ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসের সময় চীনের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল হংকং। সেখানকার সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত সচেতনতা মেনে চলার দিক থেকে যথেষ্ট সচেতন। এখানে প্রায় শতভাগ মানুষের মুখে মাস্ক পরা। সবার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলছে। কিন্তু তারা চেষ্টা করছে ভিড়, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে। ব্যক্তিগত সচেতনতা পালন করছেন তারা। সাধারণ জ্বর সর্দি থাকলেও কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে না।

সরকারিভাবেও যথেষ্ট সতর্কতা ও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। প্রতিটি ভবনের প্রবেশপথে, সেটি রেস্টুরেন্ট, আবাসিক ভবন বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাই হোক না কেন, সেসব জায়গায় দেখা যায় নিরাপত্তা রক্ষীরা সবার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করছে। মাস্ক না পরে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।

মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান বিবিসি-কে বলেন, আমার অফিস বিল্ডিংয়ের প্রত্যেকটি গেটের সামনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা রয়েছে। যারাই প্রবেশ করবেন, তাদের সবারই হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে ঢুকতে হবে। আর প্রত্যেক ভবনের গেটেই করোনা ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।

হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ মানুষ কবে থেকে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে? অঞ্চলটি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যেসব সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা করোনা ভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগেই নেওয়া হয়েছিল।

চীনের উহানে যখন করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব দেখা দিলো তখন থেকেই এখানকার সাধারণ মানুষ ও সরকার পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে। কারণ সার্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় হংকংয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। অনেকটা বলা যেতে পারে, জনগণের সচেতনতাই বাধ্য করেছে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে।

জানুয়ারির শুরুতে হংকং-এর মেডিক্যাল সংশ্লিষ্ট পেশায় থাকা সবাই একযোগে ধর্মঘটে যায়। তাদের দাবি ছিল, চীনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করা না হলে তারা কাজ করা বন্ধ করে দেবে। ওই ধর্মঘটের ফলশ্রুতিতেই সরকার কিছু পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়।

হংকং ও চীনের মধ্যে মোট ১৪টি বর্ডার পয়েন্ট ছিল। এর মধ্যে ১০টি এখনও বন্ধ। আর বাকি যে চারটি বর্ডার পয়েন্ট রয়েছে সেখান থেকে যারাই হংকংয়ে প্রবেশ করে তাদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন করতে হয়।

হংকং প্রবাসী বাংলাদেশি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান

‘কঠোর পদক্ষেপ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন’

চীন থেকে হংকংয়ে প্রবেশ করা প্রত্যেককে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখা সরকারিভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরে এটি আইনে পরিণত করা হয়। কোয়ারেন্টাইন যথাযথভাবে হচ্ছে কিনা তা মনিটর করছে পুলিশ প্রশাসন।

সরকারিভাবে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টিনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা ঘরে থাকছেন তাদেরও নিয়মিত ফোন করে খোঁজখবর রাখছে প্রশাসন। শুরুর দিকে দুই জন কোয়ারেন্টাইন ভঙ্গ করেছিল। তাদের খুঁজে বের করে আবারও কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।

জানুয়ারির শুরু থেকে সব পাবলিক লাইব্রেরি, পাবলিক জিমনেসিয়াম বন্ধ রয়েছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। সরকারি অফিসগুলোতে কাজের পরিধি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আর যেসব অফিসে সম্ভব সেসব অফিসে কর্মীদের ঘরে থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।

এই ধরণের নিষেধাজ্ঞার কারণে হংকংয়ের জীবনযাত্রা কতটা পরিবর্তিত হয়েছে? হংকংয়ে সারা পৃথিবী থেকে পর্যটনের উদ্দেশ্যে মানুষ যায়। এখানে বিভিন্ন ধরণের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন সবই ব্যহত হয়েছে এসব পদক্ষেপের ফলে। ব্যবসা বাণিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে বড় ধরণের প্রভাব পড়েছে। রেস্টুরেন্ট ও হোটেল ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হবে ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিদের। প্রত্যেককে ১০ হাজার হংকং ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক লাখ টাকা করে দেওয়া হবে।

হংকংয়ে বাংলাদেশিদের কী অবস্থা?

সরকারি হিসেবে হংকংয়ের প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন প্রায় দুই হাজারের মতো। প্রতি বছর বাংলাদেশিরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করে। যেমন প্রতি বছরের মতো এবারও ২১শে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। সেটি বাতিল করা হয়েছে। গত দুই থেকে তিন মাসে সাধারণ আড্ডার হারও অনেক কমে গেছে। হংকংয়ে থাকা বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীদের, যারা অপেক্ষোকৃত কম আয় করে থাকেন, তাদের মাস্ক ও জরুরি ওষুধপত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। হংকং-এর বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গৃহকর্মীদের এসব সরবরাহ করা হচ্ছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

/এমপি/
সম্পর্কিত
ডিএনসিসি ও চীনের আনহুই প্রদেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক চুক্তি সই
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
দক্ষিণ চীনে বন্যা, সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এক লাখ মানুষকে
সর্বশেষ খবর
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী