X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি রাজপরিবারে কী ঘটছে?

বিদেশ ডেস্ক
১৪ মার্চ ২০২০, ১৬:৩৯আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২০, ১৬:৪১

অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার অভিযোগ এনে ৭ মার্চ (শনিবার) ভোরে গ্রেফতার করা হয় বাদশাহ সালমানের ভাই রাজপুত্র আহমাদ বিন আবদুল আজিজ, সাবেক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ও নওয়াফ বিন নায়েফকে।  কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, প্রভাবশাল এই তিন ব্যক্তির বাড়িতে মুখোশধারী পুলিশ প্রবেশ করানোর মধ্য দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হলো যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের শাসনের অবশিষ্ট বিরোধিতাকারীদেরও। এর মাধ্যমে পরবর্তী বাদশাহ হওয়ার পথে তার পথের কাঁটাগুলো সরানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সৌদি রাজপরিবারে কী ঘটছে?

আল-জাজিরা বলছে, সৌদি বাদশাহ ও যুবরাজকে উৎখাতের নানা ধরনের গুজব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত শোনা যায়। এসব গুজবে থাকে মরু এলাকায় ভয়ঙ্কর সব বৈঠক আর বৈদেশিক শক্তির সমর্থনের নানা গল্প। আর এসব গুজব ডালপালা পায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদমাধ্যমগুলোতে নানা গল্প প্রচারের পর। সৌদি আরবের সরকারি সূত্রের উদ্ধৃতি ছাড়াই এসব গল্প প্রচার করা হয়। তবে এবারে তিন প্রখ্যাত সৌদি রাজপুত্রকে গ্রেফতারের খবরে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন কেন এই গ্রেফতার এবং এখনই কেন?

কেন?

এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে দুটি আলাদা ইস্যু। প্রথমটি হলো যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সব ধরনের ভিন্নমত নির্মূলের মিশন নিয়েছেন এবং রাজা হওয়ার পথ নির্বিঘ্ন করতে চান। এই বিবেচনায় রাজতন্ত্রের অভ্যন্তরের সমালোচকদের কাছে কঠোর বার্তা দেবে এই গ্রেফতার অভিযান। সৌদ পরিবারের তিন রাজপুত্রকে গ্রেফতার যুবরাজের ক্ষমতার প্রতিকী প্রদর্শনী। এছাড়া সাবেক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফকে গ্রেফতারের মাধ্যমে মোহাম্মদ বিন সালমান দেশজুড়ে এই বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন যে, কোনও বিরোধিতা সহ্য করা হবে না। মোহাম্মদ বিন সালমান

বাদশাহ সালমানের ভাই রাজপুত্র আহমেদ সম্প্রতি লন্ডন থেকে ফিরেছেন। রিয়াদে ফেরার আগে তাকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। লন্ডনে অবস্থানের সময়ে ইয়েমেনে সৌদি সেনাবাহিনীর অপকর্মের জন্য বাদশাহ এবং যুবরাজকে দায়ী করে বিতর্ক উস্কেছিলেন রাজপুত্র আহমাদ। সৌদি আরবে ফেরার পর তার অবস্থা সম্পর্কে অবগত সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলাফেরা ও যোগাযোগের ওপর নিবিড় তদারকি চালানো হলেও আহমাদকে অসম্মান করা হয়নি।

অন্যদিকে মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হওয়ার পর থেকেই গৃহবন্দি রয়েছেন সাবেক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ। সেকারণে তার পক্ষে অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত থাকা, বিশেষ করে প্রচণ্ড ক্ষমতাধর শক্তিকে উৎখাতের কলকাঠি নাড়া অসম্ভব বলে মনে হয়।

যুবরাজ হিসেবে নাম ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই সৌদি আরবের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নীতির প্রায় সবটাই ঠিক করেন তিনি। ফলে অভ্যুত্থান চেষ্টার গল্প বিশ্বাস করা বেশ কঠিন। সৌদি আরবের প্রথম রাজা ও রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আল সৌদের ছেলেদের কাছ থেকে নাতিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর সবসময়ই রাজতান্ত্রিক শাসনের ওপর মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

সৌদি আরবের রাজপরিবারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে জেষ্ঠ্যতা অনুযায়ী ভাইয়ের কাছ থেকে ভাইয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের নিয়ম প্রচলন করা হয়। ২০১৫ সালে বাদশাহ সালমান ক্ষমতায় আসার পর আরেক ভাইয়ের ছেলে মোহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজ করার মধ্য দিয়ে এই নিয়ম স্পষ্ট হয়। পরে পুত্রের কাছে উত্তরাধিকার হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় ২০১৭ সালে সালমানের পুত্র মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণা করা হয়। তবে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ করার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত ছিলো না। রাজপরিবারের উত্তরাধিকার পরিকল্পনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলের তিন সদস্য এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। রাজপুত্র আহমাদ তাদের একজন।  

এখনই কেন?

দ্বিতীয় ইস্যুটি গ্রেফতার অভিযানের সময়কে ঘিরে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ক্ষেত্র থেকে নানামুখী চাপের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে সৌদি রাষ্ট্র। এর অনেক কিছুরই দায়ই মোহাম্মদ বিন সালমানের।

তরুণদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয় যুবরাজ দায়িত্ব নিয়েই সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেন। দেশকে তেল নির্ভরতা থেকে বের করা এবং ধর্মীয় নেতাদের ক্ষমতা কমানোই এসব সংস্কারের লক্ষ্য। তবে এসব সংস্কার কর্মসূচির গতি নিয়ে ক্ষুব্ধ সমাজের অধিক রক্ষণশীল অংশটি। প্রায় এক শতাব্দী আগে রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন তার দাদা ইবনে সৌদ।

মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতি শর্তহীন কিছু সমর্থন থাকলেও তার ভবিষ্যত বাদশাহ হওয়া নিয়ে দেশটিতে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা রয়েছে। এরইমধ্যে বাড়ছে অর্থনৈতিক চাপ। রাষ্ট্রীয় ঋণে বিনোদন কেন্দ্রগুলোর নির্মাণ চলতে থাকায় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।

সামাজিক সংস্কারকে বহু সৌদি নাগরিক স্বাগত জানালেও প্রতিদিনকার জীবনযাপন ব্যয় ও বেসরকারি খাতে চাকুরি খোঁজার চাপ বাড়তে থাকায় উদ্বেগে পড়েছেন তারা। গ্যাস বিক্রি নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরব ব্যয়বহুল সামরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় এই অর্থনৈতিক চাপ কেবলই বাড়বে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে মক্কার মসজিদ ও উমরাহ হ্জ্ব বন্ধ করে দেওয়া হলেও বিনোদন কেন্দ্রগুলো খোলা রাখার সিদ্ধান্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন অনেকে। মোহাম্মদ বিন নায়েফ

কাতারের সঙ্গে সংকট নিরসনের ব্যর্থতাও সৌদি যুবরাজের ওপর প্রভাব ফেলেছে। অনেক সৌদি নাগরিকই দ্রুত একটি বিজয় আশা করেছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব হ্রাসের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম। ইয়েমেনে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ইরানের প্রভাব মোকাবিলায়। লেবাননের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে সৌদি আরবে ডেকে নিয়ে পদত্যাগ করতে বলা এবং তারপরেই তার পদত্যাগপত্র পেশ করানো হয় ইরান সমর্থিত হেজবুল্লাহকে ঠেকাতে। তবে তাতেও সফলতা আসেনি।ফলে সৌদি আরবের অভ্যন্তরে প্রশ্ন উঠেছে দেশ শাসনের জন্য মোহাম্মদ বিন সালমান আসলেই যোগ্য ব্যক্তি কিনা।

বিশ্বমঞ্চে সৌদি আরবের কর্মকাণ্ডও যুবরাজের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইয়েমেনে সৌদি হস্তক্ষেপ চূড়ান্ত সমালোচনার মুখে পড়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে যুবরাজের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত অ্যাগনেস ক্যালামার্ড।

মোহাম্মদ বিন সালমানের কর্মকাণ্ডে স্বৈরশাসকের লক্ষণ থাকলেও তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের কর্মসূচিগুলোতে উদার সমর্থন দেয় পশ্চিমা শাসকেরা। আর এই সমর্থন ও সময় ক্ষেপণের মধ্য দিয়ে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের দায় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে আপাতত উতরে গেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তাহলে রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্য ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখনই অভিযান কেন?

২০১৭ সালে যুবরাজ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ভেতরে-বাইরের সব ধরনের ভিন্নমত ও বিরোধিতাকারীদের সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন মোহাম্মদ বিন সালমান। নিরাপত্তার হিসেব নিকেশে অনেক ধরনের ঘুরপ্যাঁচ আছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। এক্ষেত্রেও তা ঘটে থাকতে পারে। এমনও হতে পারে সৌদি আরব বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর বড় ধরনের কোনও ঝড় আসছে। এতে করে যুবরাজের অবস্থানের প্রশ্নে নতুন করে আলো পড়তে পারে।

/জেজে/বিএ/
সম্পর্কিত
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
আত্মরক্ষার সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরাই নেব: নেতানিয়াহু
যেকোনও ইসরায়েলি হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুত সেনাবাহিনী: ইরান
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন