অঘোষিত সফরে তাইওয়ানে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা। মার্কিন নৌ বাহিনীর দুই তারকা এ কর্মকর্তা হচ্ছেন রিয়াল অ্যাডমিরাল মাইকেল স্টাডমেন। গত কয়েক বছরে তাইওয়ান সফরকারী মার্কিন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। সূত্রের বরাত দিয়ে রবিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিয়াল অ্যাডমিরাল মাইকেল স্টাডমেন মূলত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক গোয়েন্দা কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে থাকেন। ফলে তার মতো একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সফল স্বভাবতই চীনকে একইসঙ্গে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে তুলবে। কেননা, তাইওয়ানকে নিজের বিচ্ছিন্নতাকামী প্রদেশ হিসেবে বিবেচনা করে চীন।
তাইওয়ানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো রয়টার্সকে এ সফরের কথা নিশ্চিত করলেও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন।
রবিবার তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা তাইওয়ান সফর করেছেন। তবে এটি কোনও প্রকাশ্য সফর ছিল না উল্লেখ করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এর আগে গত শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক সংলাপ উদ্যোগের আওতায় প্রথমবারের মতো উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হয় যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ান। বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদী একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে পারস্পারিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তবে তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে বিবেচনা করা চীন এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বেইজিংয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ‘তাইওয়ান প্রশ্নের তীব্র স্পর্শকাতরতা ওয়াশিংটন অবশ্যই উপলব্ধি করতে পারবে।’
তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায় নিতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম একটি উদ্যোগ হলো উভয় পক্ষের অর্থনৈতিক সংলাপ। এর অধীনে উচ্চ-পর্যায়ের সরকারি সফর ছাড়াও তাইওয়ানের কাছে শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এর সবকিছুতেই ক্ষুব্ধ হয়েছে বেইজিং।
উল্লেখ্য, চীন-তাইওয়ান বিরোধের সূত্রপাত ১৯২৭ সালে। ওই সময়ে চীনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে গৃহযুদ্ধ। ১৯৪৯ সালে মাও জে দংয়ের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা জাতীয়তাবাদী সরকারকে উৎখাতের মধ্য দিয়ে এ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটায়। জাতীয়তাবাদী নেতারা পালিয়ে তাইওয়ান যান। এখনও তারাই তাইওয়ান নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাথমিকভাবে ওই সময় যুদ্ধ বন্ধ হয়ে পড়লেও উভয় দেশই নিজেদের চীনের দাবিদার হিসেবে উত্থাপন শুরু করে। তাইওয়ানভিত্তিক সরকার দাবি করে, চীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের দ্বারা অবৈধভাবে দখল হয়েছে। আর বেইজিংভিত্তিক চীন সরকার তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্নতাকামী প্রদেশ হিসেবে বিবেচনা করে।