ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতায় নির্মাণাধীন এক ফ্লাইওভার ধসে পড়ার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ৭৮ জন। বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই মৃতের সংখ্যা বাড়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে উদ্ধার হয়েছে আরও ৩ জনের মরদেহ। উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কয়েকটি কাটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও। মিলেছে এক শিশুর স্কুলের রক্তমাখা ব্যাগ। রক্তে ভেজা ব্যাগে যে বইপত্র পাওয়া গিয়েছে, তাতে লেখা মহেশ্বরী গার্লস স্কুলের নাম। সেখানকার তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীর ব্যাগ-বইয়ে রক্তের দাগ দেখেই বোঝা যায়, শিশুটিও আক্রান্ত হয়েছে বৃহস্পতিবারের ওই বিপর্যয়ে।
গুরুতর আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতরা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, আরজি কর ও অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা ২৫ মিনিটে গণেশ টকিজের কাছে ভেঙে পড়ে নির্মাণাধীন বিবেকানন্দ ফ্লাইওভারের একাংশ। এ সময় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন অনেকে। বৃহস্পতিবার সারা রাত ধরে চলে উদ্ধার কাজ। কলকাতা পুলিশ ও দমকল কর্মীদের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সেনা সদস্যরা শুক্রবার সকালে ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে বের করে আনেন আরও দুই জনের মরদেহ। এছাড়া আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় শুক্রবার।
ফ্লাইওভারের ধসে পড়া ১৫০ মিটারের প্রশস্ত অংশটি সাত ঘণ্টা চেষ্টার পর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে কংক্রিট ও ধাতব পদার্থের ধ্বংসস্তূপে অনেকে আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রাইভেট কার, ট্যাক্সি সহ যাত্রীবাহী বাসও ফ্লাইওভারের ধসে পড়া অংশে চাপা পড়তে দেখেছেন তারা।
এদিকে, ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ার ঘটনায় নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আইভিআরসিএল-এর বিরুদ্ধে সরাসরি ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি, যারা সেতু তৈরিতে কাঁচামাল সরবরাহ করেছিল, তাদের বিরুদ্ধেও একই ধারায় মামলা করা হয়েছে। সেতু যাদের দেখাশোনা করার কথা ছিল, তারা তা ঠিক মতো করেছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত রাতেই নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের ৭ জন শ্রমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লালবাজার থানায় নিয়ে আসা হয়। রাতভর তাদের দফায় দফায় জেরা করা হয়। পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতেই নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের বালি, হাওড়া, উত্তরপাড়া, আনন্দপুর এবং হায়দ্রাবাদের অফিসে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, উদ্ধার হওয়া কিছু মরদেহ এমনভাবে থেঁতলে গেছে বা পুড়ে গেছে, এমনকি পরিবারের সদস্যরাও স্বজনদের মরদেহ চিনতে পারছেন না। সরকারি কর্মকর্তারা এখনও পর্যন্ত মোট ১২ জনকে শনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন। রাতভর চলা উদ্ধারকাজে ১৪-১৫টি ক্রেন অংশ নেয়। ঘটনাস্থলে বড় যে লোহার পাতটি পড়ে আছে তার নিচে একটি লরি চাপা পড়ে রয়েছে, তার ভেতরে ঠিক কতোজন আটকে আছেন বা মারা গেছেন সেটি এখনও বলা সম্ভব হচ্ছে না।
ফ্লাইওভারের আশেপাশের সাধারণ মানুষ শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, এতো বড় বিপর্যয় তারা এর আগে কখনো দেখেননি। তারা আশঙ্কা করছেন, ফ্লাইওভারের বাকি অংশটুকুও ভেঙে পড়তে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ফ্লাইওভারের বাকি অংশটুকু এখনই ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ধসে পড়া অংশটির নিকটবর্তী স্থানে তারা তদন্ত করে দেখবেন, তেমন কোনও সম্ভাবনা আছে কিনা।
উদ্ধারকাজে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার ওয়াশিংটন সফররত মোদি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ফোন করে এ আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় এ খবর নিশ্চিত করে। সূত্র: বিবিসি, আনন্দবাজার, টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি।
/এসএ/