X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে সংঘর্ষ : আজারবাইজানের ‘একপক্ষীয় অস্ত্রবিরতি’ ঘোষণা

বিদেশ ডেস্ক
০৩ এপ্রিল ২০১৬, ১৬:৪৮আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০১৬, ১৬:৪৮
image

বিবাদপূর্ণ নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনীয় ও আজারবাইজানি বাহিনীর মধ্যে সংঘাতে ৩০ সেনা ও বেশ কজন বেসামরিক নিহত হওয়ার পর রবিবার অঞ্চলটিতে ‘একপক্ষীয় অস্ত্রবিরতি’ ঘোষণা করেছে আজারবাইজান। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, সংঘাত বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজারবাইজানিরা এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। বিবাদপূর্ণ এ অঞ্চলটি নিয়ে এবারের সংঘাতকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এদিকে নিজ নিজ দেশের নিহতের সংখ্যা উল্লেখ করে নতুন এ সংঘাত শুরুর জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছে দুই দেশ।

সংঘের্ষে দুই বাহিনীর তরফেই বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে

১৯৯৪ সালে রাশিয়া নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পাদনে মধ্যস্থতা করেছিল। কিন্তু তারপরেও দুপক্ষের মধ্যে মাঝে মধ্যেই বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। এরই ধারবাহিকতায় শনিবার নতুন করে দুদেশের মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। রবিবারও তা অব্যাহত থাকে। এমন অবস্থায় আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা দফতরের বিবৃতিতে ঘোষণা দেওয়া হয় যে দেশটি একপক্ষীয় অস্ত্রবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে নিজেদের বাহিনীর ওপর হামলা হলে তার পাল্টা জবাব দেওয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়। এদিকে রবিবার সংঘাত চলার সময় দুই কারাবাখ সেনা আহত হন বলে দাবি করেছে আর্মেনিয়া।

এর আগে শনিবার আজারবাইজানের দেওয়া এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, আর্মেনীয় বাহিনী তাদের ১২ সেনা সদস্যকে হত্যা করেছে এবং লড়াই চলার সময় একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে।

নাগোর্নো কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা

অন্যদিকে আর্মেনীয় প্রেসিডেন্ট সার্জ সার্কিসিয়ান পাল্টা দাবি করেন, সংঘাতে তার দেশের ১৮ জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন এবং ৩৫ জন আহত হয়েছেন।

তবে ওই সেনা সদস্যরা কারাবাখে ইয়েরাভান সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী নাকি আর্মেনীয় সেনাবাহিনীর সদস্য সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

চলমান সংঘাতে দুই দেশই আলাদা করে উল্লেখযোগ্য সফলতা পাওয়ার দাবি করছে। এক ফেসবুক পোস্টে আর্মেনীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আর্টসরুন হোভহানিসিয়ান বলেন, ‘আর্মেনীয় সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে। দুই পক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তবে জনবল আর সরঞ্জামাদির দিক দিয়ে বিরোধী পক্ষ অনেক বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। একটি আজারবাইজানি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করা হয়েছে।’

আর্মেনীয়রা একটি আজারবাইজানি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার দাবি করেছে

আর আজারবাইজানিরা বলছে, তাদের বাহিনী কারাবাখের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখলে নিয়েছে।

সংঘাতের জন্য দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক দোষারোপও অব্যাহত রয়েছে। আজারবাইজান বলছে, আর্মেনিয়ার মদদপুষ্ট কারাবাখের বাহিনী তাদের ওপর ভারী অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর পর তাদের বাহিনী পাল্টা হামলা চালাতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে আর্মেনিয়ার সরকার এই ঘটনার জন্য আজারবাইজানকেই দোষারোপ করেছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য দুই পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া যাকারোভা জানান, মস্কো উত্তেজনা কমানোর জন্য পদেক্ষপ নিচ্ছে। তিনি বলেন, 'দুপক্ষকেই সহিষ্ণুতা প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে এবং অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। ইউরোপের নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা ওএসসিইর সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়া আলোচনাও শুরু করেছে যাতে সহিংসতা আর বাড়তে না পারে।'

মানচিত্রে আজারবাইজান-আর্মেনিয়া

১৮শ ও ১৯শ শতকে আজারবাইজান নামের দেশটি পর্যায়ক্রমে রুশ ও পারস্যদেশের শাসনাধীন ছিল। রুশ গৃহযুদ্ধের সময়ে ১৯১৮ সালের ২৮শে মে তৎকালীন আজারবাইজানের উত্তর অংশটি একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও মাত্র ২ বছরের মাথায় ১৯২০ সালে বলশেভিক বাহিনী এটি আক্রমণ করে আবার রুশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে এবং ১৯২২ সালে দেশটি সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৩৬ সালে আজারবাইজান নামের সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রটি ভেঙে তিনটি আলাদা প্রজাতন্ত্র আজারবাইজান, জর্জিয়া ও আর্মেনিয়াতে রূপান্তর করা হয়। মূলত তখন থেকেই আজারবাইজানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং নাগোর্নো-কারাবাখ এলাকার খ্রিস্টান আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।

নাগোর্নো-কারাবাখের জনগণ আর্মেনিয়ার সাথে একত্রিত হতে চায়। ১৯৯১ সালের ২০শে অক্টোবর আজারবাইজান স্বাধীনতা লাভ করলে এই দ্বন্দ্ব সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নেয়।  চারবছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রাণ হারায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। ১৯৯৪ সালের মে মাসে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নাগোর্নো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখণ্ডের মধ্যে হলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর অঞ্চলটির সংসদ আর্মেনিয়ার সঙ্গে থাকার পক্ষে ভোট দেয়। ১৯৯৪-এর যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর থেকে এই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে আর্মেনীয়র বিদ্রোহী গোষ্ঠী। সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি

/এফইউ/বিএ/

সম্পর্কিত
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করবেন ট্রাম্প
মার্কিন অস্ত্র সহায়তা স্থগিতে রুশ হামলা জোরদারের শঙ্কায় ইউক্রেন
লন্ডনে মা‌কে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে লায়েক মিয়া অভিযুক্ত
সর্বশেষ খবর
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
জাপার অফিস ভাঙচুর: নুরসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বললেন আদালত
জাপার অফিস ভাঙচুর: নুরসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বললেন আদালত
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!