মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কর-মুক্ত মর্যাদা বাতিল করবে। শুক্রবার (২ মে) ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সোশ্যাল ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা হার্ভার্ডের কর-মুক্ত মর্যাদা বাতিল করতে যাচ্ছি। এটাই তাদের প্রাপ্য!’— তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের এই স্কুলটির বিরুদ্ধে এটি ট্রাম্পের পূর্ববর্তী হুমকির পুনরাবৃত্তি। অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে বিস্তৃত আক্রমণের অংশ হিসেবে এ ধরনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
এর জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি বলেছে, এটি মার্কিন কর কোডের অবৈধ ব্যবহার। এটি এক ধরনের অপরাধ। প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট বা হোয়াইট হাউজের কোনও কর্মচারীর পক্ষে কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইআরএস তদন্ত বা নিরীক্ষার অনুরোধ করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
হার্ভার্ড ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কারণ প্রশাসন গত মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দকৃত ২.২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান স্থগিত করছে। সাধারণত চিকিৎসা ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ওই অনুদান দেওয়া হয়।
এর আগে ১৫ এপ্রিল ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি মনে করেন হার্ভার্ডের ‘কর-মুক্ত মর্যাদা বাতিল হওয়া উচিত।’
এর কিছুদিন পর, হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র হ্যারিসন ফিল্ডস বলেন, যেকোনও আসন্ন আইআরএস পদক্ষেপ প্রেসিডেন্টের বাইরে এবং যেকোনও নিরীক্ষা বা তদন্ত ট্রাম্পের পোস্টের আগেই শুরু হয়েছিল।
শুক্রবার আইআরএস-এর প্রতিনিধিরা এমন প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি।
কর কোড অনুসারে, হোয়াইট হাউজ থেকে পাওয়া যেকোনও অবৈধ অনুরোধ আইআরএস কর্মচারীদের ইউএস ট্রেজারি ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাছে রিপোর্ট করতে হয়। এই সংস্থাও এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম ও ধনী বিশ্ববিদ্যালয় হাভার্ড বলেছে, কর-মুক্ত মর্যাদা বাতিল করা অবৈধ এবং নজিরবিহীন হবে। এই মন্তব্যে শুক্রবার মুক্ত চিন্তার পক্ষে কথা বলা বিভিন্ন গোষ্ঠী ও অন্যান্য অলাভজনক সংস্থারাও সুর মিলিয়েছে।
এক বিবৃতিতে বস্টন অঞ্চলের এই বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, হার্ভার্ডের কর-মুক্ত মর্যাদা বাতিল করার কোনও আইনি ভিত্তি নেই। এই আইনের অবৈধ ব্যবহার বৃহত্তর পরিসরে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যতের জন্য গভীর ফলাফল ডেকে আনবে।’
হার্ভার্ডসহ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ফেডারেল আয়কর থেকে অব্যাহতি পায়। কারণ তারা জনসাধারণের শিক্ষার উদ্দেশ্যে পরিচালিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয়। এই কর-মুক্ত সুবিধা ব্যক্তি দাতাদের কর-ছাড় সুবিধা দিয়ে দান করতে উৎসাহিত করে। ধনী সাবেক শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পাওয়া দান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস।
অবশ্য ২০১৭ সালের একটি আইনের পর থেকে হার্ভার্ড ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের বিনিয়োগ তহবিলের ওপর ১.৪ শতাংশ এক্সসাইজ ট্যাক্স বা অর্জিত আয়ের ওপর নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান করছে। ২০২৪ অর্থবছরে হার্ভার্ডের বিনিয়োগ তহবিল ছিল ৫৩.২ বিলিয়ন ডলার। ওই বছর তারা ৪৪ মিলিয়ন ডলারের বেশি কর দিয়েছে।