X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘জীবিত অবস্থায় তো আর মাটি দিতে পারবো না’

জাকিয়া আহমেদ
২৫ আগস্ট ২০১৭, ২১:০৫আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০১৭, ২১:০৫

‘১৫ থেকে ১৬ বছর আগে প্রথমে পায়ের পাতায় ছোট একটা টিউমার হয়, গুরুত্ব দেই নাই। তারপর থেকে ধীরে ধীরে টিউমার বড় হতে থাকে, আর এই অবস্থা (পা দেখিয়ে) হয় আড়াই থেকে তিনবছর আগে। ঘরে কেউ না থাকলে পানিটুকুও ঢেলে খেতে পারি না, বিছানায় বসে থাকা ছাড়া আমার কোনও কাজ নাই। মেয়ে আর স্বামী দেখে রাখে, তারা আর কি করবো, জীবিত অবস্থায় তোর আর মাটি দিতে পারবো না।’
বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রিজিয়া বেগম (২৫ আগস্ট) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চতুর্থ তলায় ব্লু ইউনিটে রিজিয়া বেগমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। পাশে বসা ছিলেন তার স্বামী আব্দুল মানিক। তিনি জানালেন, গত মঙ্গলবার তারা চিকিৎসার জন্য এসেছেন এখানে। কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা হয়েছে, আগামীকাল শনিবার চিকিৎসকরা তাকে দেখবেন।

রিজিয়া বেগম এবং আব্দুল মানিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগর থানায়। তিনি একজন দিনমজুর। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, ছোট মেয়ে স্থানীয় এক কলেজে পড়ে। কিন্তু তিনি স্ত্রীর চিকিৎসার কোনও কমতি রাখেননি, সামর্থ্যে যতটুকু কুলিয়েছে ততটুকু করেছেন। সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও চিকিৎসা করিয়েছেন অনেকদিন।

১০ বছর আগে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালেও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন বলে জানান আব্দুল মানিক। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা চিকিৎসার জন্য প্রায় দুই বছর হাসপাতালে থাকতে হবে আর খরচ জানায় প্রায় ২২ লাখ টাকা। একইসঙ্গে হাসপাতাল থেকে এও জানিয়েছিল, রোগী যদি মারা যায় তাহলে তার জন্য হাসপাতাল দায়ী থাকবে না। ‘কিন্তু আমার মতো একজন মানুষ যে সংসারই ঠিকমতো চালাতে পারে না সে কী করে ২২ লাখ টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাবে’, বলেছিলেন আব্দুল মানিক।

তিনি আরও জানান, গত বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন স্ত্রীকে। সেখানে চিকিৎসকরা রিজিয়া বেগমকে দেখেছেন, সিট খালি হলে তাদের ডাকা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদের আর ডাকেননি বলে অভিযোগ আব্দুল মানিকের। গত দেড় থেকে দুই বছরে নানা হাসপাতালে স্ত্রীর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, বিক্রি করতে হয়েছে জমি। এখন আর কিছুই অবিশিষ্ট নেই তাদের।

আব্দুল মানিক বলেন, ‘কত কিছু যে করছি, যে যা বলছে তাই করছি। ডাক্তার-ফকির-কবিরাজ কিছুই বাদ দেইনি, কিন্তু আর তো সামর্থ্যে কুলায় না। মাইরা তো ফালাইতে আর পারমু না।’

তবে গত কয়েকদিন আগে বার্ন ইউনিটে রিজিয়া বেগমের পরীক্ষার কাগজপত্র দেখে তাকে এখানে নিয়ে আসতে বললে গত মঙ্গলবার তাকে নিয়ে আসা হয়, ভর্তি করা হয় এখানে। রিজিয়া বেগম বলেন, ‘১০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে এসেছেন সিলেট থেকে, এখানে আসার পর বেশ কিছু পরীক্ষাও করতে হয়েছে বাইরে থেকে। আবার সিলেট যাবার সময়ে এতো টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দেওয়ার মতো টাকাও আমাদের কাছে নেই।’ তাই রিজিয়া বেগম সমাজের বিত্তবানদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, কেউ যদি তাকে সাহায্য করে, এখানকার চিকিৎসা খরচটা যদি সরকারিভাবে দেওয়া হয় তাহলে তিনি চিকিৎসাটা চালিয়ে যেতে পারবেন।

এদিকে, রিজিয়া বেগমের রোগটি বিরল রোগ নয় জানিয়ে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “রিজিয়া বেগমের রোগটির নাম ‘এলিফ্যান্টিয়াসিস।’ এটি দেখতে অনেকটা হাতির মতো বলেই এ রোগের এ নাম।”

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘তার চিকিৎসা পদ্ধতি হবে দীর্ঘমেয়াদি, কয়েক দফায় তার অস্ত্রোপচার করতে হবে।’

/এমও/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভুটানে আবার কোচ হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ
ভুটানে আবার কোচ হয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ
ধর্ষণ মামলা: প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন পেলেন মুশতাক-ফাওজিয়া
ধর্ষণ মামলা: প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন পেলেন মুশতাক-ফাওজিয়া
সৌদি আরব পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সৌদি আরব পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড