X
শনিবার, ১১ মে ২০২৪
২৮ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা নিয়ে কোন অনুমানটা সঠিক হয়েছে?

উদিসা ইসলাম
১৮ আগস্ট ২০২১, ১১:০০আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২১, ১১:০০
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই সারাবিশ্ব এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে যাচ্ছে। গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হচ্ছে একের পর এক। আর এসব গবেষণা লব্ধ ফল কিংবা পর্যবেক্ষণ থেকেই এসেছে একের পর এক পূর্বানুমানও। তবে এর বেশিরভাগই সঠিক হয়নি। এমনকি কোনও কোনও পূর্বানুমানের ফল হয়েছে ঠিক তার উল্টো। করোনাকালে গবেষক, চিকিৎসক কিংবা হাসপাতাল ব্যবস্থাপকদের পূর্বানুমানের মধ্যে ‘শীতে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে’-এটি বেশ আলোচিত। কিন্তু এতে ফল হয়েছে উল্টো, বরং তীব্র গরমে এর প্রকোপ আকাশচুম্বী হয়েছে।
আবার করোনা প্রতিরোধী টিকা এলেই ‘জীবন স্বাভাবিক হতে পারে’- এমন পূর্বানুমানের ফলটাও ভিন্ন চিত্রের। এমন তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশে মাস্ক পরা বন্ধ করার পর আবারও পরতে বাধ্য হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই টিকা কার্যকারিতা নিয়ে কিছু বলাও যাবে না। সবকিছুকেই ট্রায়াল ধরে নিতে হবে। অন্তত দশ বছর পরে বোঝা যাবে ‘আসলে কী লাভ হলো’।
গত ২৩ এপ্রিল ২০২১ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দল বাংলাদেশ কমো মডেলিং গ্রুপ বলেছিল- জুন মাসের আগে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। বাংলাদেশ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত দলটি গাণিতিক মডেলিং ব্যবহার করে করোনার পূর্বাভাস জানার চেষ্টা করেন। গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে মে মাসের শেষ নাগাদ করোনা পরিস্থিতি বর্তমান অবস্থাতেই থাকবে। তবে জুন মাস থেকে পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এবছর জুন-জুলাই মাসে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটতে দেখা গেল। এসময় সর্বোচ্চ একদিনে ২৬৪ জনের মৃত্যুও দেখেছে বাংলাদেশ।
এবছর ৫ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের হার ৩-৪ শতাংশে ওঠানামা করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে ভাইরাস আপনা-আপনি চলে যায়। বাংলাদেশে যেহেতু ৩ শতাংশে নেমে এসেছে, তাই আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তার এই পূর্বানুমান পুরোপুরি ভুল প্রমাণ করে চলতি বছর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তীব্র প্রকোপে পড়ে বাংলাদেশ।
শীত নাকি গ্রীষ্ম
করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই জোরালো গবেষণা চলছে এই ভাইরাসের সঙ্গে আবহাওয়ার সম্পর্ক নিয়ে। শুরুর দিকেই বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, দক্ষিণ এশিয়ায় গ্রীষ্মকালে আবহাওয়া যেমন উষ্ণ থাকে, তাতে হয়তো কোভিড সংক্রমণ ঠেকানো যাবে। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্ত সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ক্লাউস স্টোহর গেল বছরের শেষের দিকে বলেছিলেন, ‘শ্বাসপ্রশ্বাসের অন্যান্য রোগের সঙ্গে করোনাভাইরাসের আচরণে খুব একটা ফারাক নেই। এই ধরনের রোগ প্রতি শীতেই ফিরে আসে।
ঠিক একই রকম অনুমান করেছিল ব্রিটেনের অ্যাকাডেমি অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসও। তাদের পূর্বানুমান ছিল, চলতি বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যে কোভিডে সংক্রমণ ও মৃত্যু- দুটোই বাড়বে এবং তা হবে গত শীতকালের মতোই। একইভাবে ভারতের আইআইটি ভুবনেশ্বরও প্রায় একই সময়ে একটি সমীক্ষায় জানিয়েছিল, তাপমাত্রা কমলে তা করোনার সংক্রমণ বাড়ার জন্য সহায়ক হবে। অর্থাৎ শীতে বিপদের আশংকাও বাড়বে।
এই অনুমান যে ভুল হয়েছে, তার বড় প্রমাণ বাংলাদেশের সংক্রমণের চিত্র। এখানে এবছর গেল জুন থেকে সংক্রমণের যে ভয়াবহতা দেখা যাচ্ছে, গত শীতে তা প্রায় কয়েকগুণ কম ছিল।
কবে সব ‘স্বাভাবিক’ হবে?
করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সেটি নিয়ে অন্তত চারটি পূর্বানুমান রয়েছে। এক সময় জানানো হয় ল্যাবরেটরি থেকে ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর করোনা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটিয়েছে। পরে জানা গেল, এই অনুমানটি সঠিক নয়। উৎস নিয়েই এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারা এই ভাইরাস থেকে কবে স্বাভাবিক হবে বিশ্ব তা নিয়ে যদিও পূর্বানুমান করেননি কেউ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা নিয়ে সাবধানে চলার পরামর্শের বাইরে তেমন কিছু বলছেন না।
তাহলে কী করা যাবে প্রশ্নে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জামিল ফয়সাল বলেন, আমরা পরিস্থিতি বুঝে বুঝে পরামর্শ দিচ্ছি। শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করার কোনও বিকল্প নেই। এমন নিয়ম হোক যে শাস্তির ভয়ে হলেও মানুষ মাস্ক পরবে।
করোনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তের জায়গায় আসা ছাড়া কোনও পূর্বানুমানের সুযোগ নেই উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ডা নাজমুল ইসলাম বলেন, এটা আনপ্রেডিকটেবল আচরণ করেছে বারবার। এমনকি এই যে নানা ধরনের টিকা নেওয়া হচ্ছে। এগুলোও একরকমের ট্রায়াল। আগামী ১০ বছর পরে হয়তো বলা যাবে আসলে কতটা কার্যকর হলো এই টিকা। বৈজ্ঞানিক হিসাব নিকাশ করে বারবার নানা ধরনের ‘হতে পারে’ বলে যা কিছু বলা হয়েছে তার অনেক কিছু সেভাবে হয়নি, উল্টো কিছু হয়েছে।
তবে করোনা বিষয়ে একটি বিষয়ে সব গবেষকই একমত এবং এর কোনও মতান্তরও নেই। সেটি হলো- করোনার প্রকোপ ঠেকাতে এখন পর্যন্ত সঠিক উপায়ে শতভাগ মাস্ক ব্যবহারের কোনও বিকল্প নেই।
/ইউএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নেতানিয়াহুর কঠোর সমালোচনা করলো আমিরাত
নেতানিয়াহুর কঠোর সমালোচনা করলো আমিরাত
‘কর্তৃপক্ষের’ আদেশের দায় কার?
‘কর্তৃপক্ষের’ আদেশের দায় কার?
ঘুম ঘুম চোখে ট্রাক উঠিয়ে দিলেন চা দোকানে, প্রাণ গেলো ২ জনের
ঘুম ঘুম চোখে ট্রাক উঠিয়ে দিলেন চা দোকানে, প্রাণ গেলো ২ জনের
পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্পে ভাঙচুর ও গুলি বর্ষণ
পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্পে ভাঙচুর ও গুলি বর্ষণ
সর্বাধিক পঠিত
ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি নয়, মামলা নেওয়ার নির্দেশ
ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি নয়, মামলা নেওয়ার নির্দেশ
সরকারি গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার, তুলছেন ভ্রমণ বিলও
সরকারি গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার, তুলছেন ভ্রমণ বিলও
একই গ্রাম থেকে নির্বাচিত হলেন তিন চেয়ারম্যান
একই গ্রাম থেকে নির্বাচিত হলেন তিন চেয়ারম্যান
ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য করার পক্ষে ভোট দিলো সাধারণ পরিষদ
ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য করার পক্ষে ভোট দিলো সাধারণ পরিষদ
পাঁচ ‘বুবলী’ নিয়ে থানায় অপু!
পাঁচ ‘বুবলী’ নিয়ে থানায় অপু!