ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে ৫০ শতাংশ মানুষ জানেন না যে, তাদের ডায়াবেটিস হয়েছে। কারণ, তাদের মধ্যে কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। যদিও প্রতি ১০ জন মানুষের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ৫৪ কোটি ডায়াবেটিস রোগী আছেন। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালে ৬৪ কোটি ডায়াবেটিস রোগী পাওয়া যাবে।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ উপলক্ষে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনসিডিসি), বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস) ও দৈনিক সমকাল আয়োজিত ‘ডায়াবেটিস চিকিৎসা: বর্তমান ও আগামীর ভাবনা' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সমকালের সম্মেলন কক্ষে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দীন আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। গোলটেবিল আলোচনা সঞ্চালনা করেন সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা অনেক আছে এবং বেড়ে গেছে। আমি মনে করি, তা কোটিরও বেশি। কাজেই এটা আশঙ্কাজনক। অল্প বয়সে অনেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে, আবার ডায়াবেটিস নিয়েও অনেকে জন্মগ্রহণ করছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে সেটি তেমন ক্ষতিকর না। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে না থাকলে নীরবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন মানুষ অনেক সচেতন। গ্রামে গেলে দেখা যায়, এখন সকালে অনেকেই হাঁটে এবং মিষ্টি খায় না। কিন্তু সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। ডায়াবেটিস কেন হয়, এটি যদি মানুষকে আমরা আরও বেশি করে জানাতে পারি, তাহলে মনে হয় আমাদের উপকারে আসবে। আমাদের দেশে কিডনি রোগী বাড়ছে। তার অন্যতম একটি কারণ ডায়াবেটিস। স্থুলতা একটা বড় কারণ। সচেতনতা খুব জরুরি।’
এনসিডিসি’র লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন তথ্য উপস্থাপন করতে গিয়ে জানান, প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে যে কয়জন মানুষ মারা যাচ্ছে, তার মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ৯০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি চলে যাচ্ছে ডায়াবেটিস চিকিৎসার পেছনে। ডায়াবেটিসের ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে উপসর্গ পাওয়া যায়। অর্থাৎ নীরব ঘাতক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমাদেরকে এগুলো স্ক্রিনিংয়ের মধ্যে আনতে হবে। কিছু মেকানিজম আমাদের তৈরি করতে হবে, যাতে আমরা ডায়াবেটিস রোগীদের সামলাতে পারি। ১০ শতাংশ রোগী জানেন ডায়াবেটিস কী, কিন্তু চিকিৎসা সম্পর্কে জানেন না। মাত্র ১৩ শতাংশ রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন।
তিনি আরও জানান, আমাদের অর্ধেক রোগী ডায়াবেটিস রোগের কেয়ারের জন্য অ্যাক্সেস পান। বাসায় বসে ডায়াবেটিস রোগের সেলফ কেয়ার পান মাত্র ২১ ভাগ রোগী। ডায়াবেটিস রোগের আধুনিক চিকিৎসা বাংলাদেশেই আছে। এই রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত মুখে খাওয়ার কার্যকরী ওষুধ সরকার বিনামূল্যে দিচ্ছে। ডায়াবেটিসের কারণে রোগীদের হাসপাতালে দ্বিগুণ সময় অতিবাহিত করতে হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের বার্ষিক আয়ের ৯-১০ শতাংশ চলে যায় চিকিৎসা ব্যয়ে।
আলোচনায় অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ডায়বেটিস দিবস করা হয়েছে মূলত জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য। নিরাময় থেকে প্রতিরোধ করাই শ্রেয়। এরজন্য দরকার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম। প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ জানেন না যে তার ডায়াবেটিস আছে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়ে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন। উপজেলা পর্যায়ে যদি আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি, তাহলে এই স্ক্রিনিংয়ের কাজ আরও জোরদার হবে।’
আলোচনা শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন— স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা এম এ ফয়েজ, অধ্যাপক ডা. শাহ মুনির হোসেন প্রমুখসে