অনেকগুলো রাসায়নিকের সমষ্টি থ্যালেটস। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টার। এই থ্যালেটস শিশুদের ব্যবহৃত ইরেজার ও অন্যান্য পণ্যে অতিমাত্রায় উপস্থিত আছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ৪৭টি ইরেজারের মধ্যে ৩০টি নমুনাতেই ৪ ধরনের ক্ষতিকারক থ্যালেটসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
সোমবার (১৪ মার্চ) এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন— এসডো আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিং-এ ‘টক্সিক কেমিক্যালস ইন কিডস্ স্টেশনারি: থ্যালেটস ইন ইরেজারস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তথ্যটি উঠে এসেছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণাটি এসডো, ফিন্যান্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রি পাবলিক ইন্টারেস্ট ফাউন্ডেশন এবং কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থিত ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকিউপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ— ডাব্লিওআইওইএইচ যৌথভাবে পরিচালনা করেছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, থ্যালেটস প্লাস্টিক এবং অন্যান্য দ্রব্যে সংযোজন হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটা অনেক ভোগ্যপণ্যেও পাওয়া যায়। পিভিসিকে নরম এবং নমনীয় করার কাজেও এটি ব্যবহৃত হয়। এটি পণ্য থেকে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সহজেই মানুষের সংস্পর্শে আসতে পারে।
স্থানীয় ইরেজারগুলোতে থ্যালেটস-এর উপস্থিতি মূল্যায়নের জন্যই মূলত গবেষণাটি করা হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার ৯টি দেশ— বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, নেপাল এবং ফিলিপাইন থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ওনজিন ইনস্টিটিউট-এ পাঠানো হয়েছিল। নমুনাগুলো পিভিসি স্ক্রিনিং ও থ্যালেটস টেস্টিং— এই দুই পর্যায়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল।
থ্যালেটস-এর উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশের স্থানীয় দোকান থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও রঙের ৪৭টি ইরেজার সংগ্রহ করা হয়েছিল। ৪৭টি নমুনার মধ্যে ৩০টি নমুনাতেই থ্যালেটস পাওয়া গেছে। সাতটি প্রধান থ্যালেটসের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য সবগুলো নমুনায় পিভিসি স্ক্রিনিং এবং থ্যালেটস টেস্টিং করা হয়েছিল।
৩০টি নমুনায় ৭টির মধ্যে প্রধান চারটি থ্যালেটসই পাওয়া গেছে। যেগুলো হলো ডিআইবিপি, ডিবিপি, ডিইএইচপি, ডিইএইচপি এবং ডিআইএনপি। এই প্রধান ৪টি থ্যালেটস লিভারের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি প্রজনন ক্ষমতারও ক্ষতি করে। এছাড়া অ্যালার্জি ও হাঁপানি সৃষ্টি করে। পরীক্ষা করা ৩০টি নমুনার মধ্যে, ২১টি নমুনাতেই থ্যালেটস নিরাপত্তা সীমা অতিক্রম করেছে।
এসডো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত এক দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে— শিশুদের মানসিক আচরণ বিকাশেও থ্যালেটস প্রভাব ফেলে। নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই স্কুল অব মেডিসিনে ৯ বছর ধরে চলা এই গবেষণায় শিশুদের মধ্যে আগ্রাসন, মানসিক অস্থিরতা, মনোযোগের ঘাটতি এবং বিষণ্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে।
এসডোর সভাপতি সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘ইরেজার শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় স্টেশনারি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, এটি শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে থ্যালেটস এবং দৈনন্দিন পণ্যে এর উপস্থিতি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। তাদের নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।’
অন্যদের মধ্যে, ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল হেলথের নির্বাহী পরিচালক ড. ইউন-কেউন লি, আইসিডিডিআর,বি এর এনভায়রনমেন্টাল ইন্টারভেনশন ইউনিটের প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন, এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা জানান, থ্যালেটস বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের একটি গ্রুপ যা প্লাস্টিককে টেকসই করতে ব্যবহার করা হয়। এদেরকে প্লাস্টিসাইজার বলে। দৈনন্দিন ব্যবহারের ভিনাইল ফ্লোরিং, লুব্রিকেটিং তেল, এবং সাবান, শ্যাম্পু, চুলের স্প্রেতে এটি পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রসাধনী এবং প্লাস্টিক, কাগজের আবরণ, পেইন্ট ও আঠালো দ্রব্যে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। শ্যাম্পু, বডি ডিওডরেন্ট, বডি ওয়াশ, হেয়ারস্প্রে ও হেয়ার জেলেও এটি থাকে।