X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশজুড়ে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব কেন?

জাকিয়া আহমেদ
২২ এপ্রিল ২০২২, ০৯:০০আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২২, ১৫:৫৩

চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীতে ভর্তি। নগরীর পাশাপাশি উপজেলার ১৫টি সরকারি হাসপাতালে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত ৮ এপ্রিল নগরী ও জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি ছিলেন ২৫৭ জন।

তাদের মধ্যে উপজেলার ১৫টি হাসপাতালে ১৪০, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ৬৩, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ৩৭, চমেক হাসপাতালে ১০ ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সাত জন ভর্তি ছিলেন।

এদিকে, ডায়রিয়াতে আক্রান্ত রোগীদের চাপে শয্যা না থাকায় বারান্দায় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে চাঁদপুরের হাসপাতালে। এ জেলার মতলবের আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে ডায়রিয়া ও কলেরায় আক্রান্ত রোগীর চাপ এত ছিল যে বারান্দায় অস্থায়ী শয্যা বসিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

আবার বাগেরহাটে ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ইউনিটে শয্যা সংখ্যার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে প্রায় ২০০ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া এই রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। কেবল চট্টগ্রাম, চাঁদপুর কিংবা বাগেরহাটেই নয়, পুরো দেশজুড়ে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

সাধারণত এপ্রিল মাসে দেশে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। কিন্তু এ বছর মার্চের শুরুতেই রোগী বাড়তে শুরু করে আশঙ্কাজনক হারে। এ অবস্থায় রাজধানীতে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইসিডিডিআর,বির চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাস্তার খাবার, বাসি-পচা খাবার খেলেও ডায়রিয়া হতে পারে। তবে ডায়রিয়া হবার মূল কারণ দূষিত পানি। খাবার পানিসহ নিত্য ব্যবহার্য পানিও হতে হবে বিশুদ্ধ এবং নিরাপদ। কিন্তু কোনওভাবে যদি খাওয়ার পানির লাইনের সঙ্গে সুয়ারেজ লাইনের সংযোগ ঘটে যায় তাহলে পানি হয়ে পড়ে দূষিত।

এদিকে, ডায়রিয়াজনিত রোগ বিলুপ্ত হয়ে যায়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা একে মোকাবিলা করতে চাই।

অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে এ রোগে আক্রান্ত ঢাকা জেলায় রোগী ছিল পাঁচ হাজার ৬৭৩ জন আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছয় হাজার ৫৮৯ জন। ২০২১ সালের মার্চে রোগী ছিল ছয় হাজার ৫৮৭ জন আর চলতি বছরের মার্চে সাত হাজার একজন। আর সারাদেশে মার্চে ডায়রিয়াতে ভর্তি রোগী ছিল এক লাখ ৭০ হাজার ২৩৭ জন।

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর গত তিন বছরের ডায়রিয়া সংক্রান্ত সব রিপোর্ট এক সঙ্গে করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাতে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নাই। তবে রোগী বৃদ্ধির যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা আইসিডিডিআর,বির হাসপাতালে। বাকি হাসপাতালগুলোতে একই রকম। তবে রোগী সংখ্যা বেড়েছে-এটা ঠিক।

অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি ভালো করে হয়নি। পানির লেয়ার নিচে রয়েছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের নিত্যদিনের জীবনযাপনে যে পানি ব্যবহার করা হয় সেই পানি ততটা জীবাণুমুক্ত বা বিশুদ্ধ না। কাজেই কন্টামিনেশনের ( দূষণ) অন্যতম কারণ কিন্তু এইগুলোও।

ফুড পয়জনিং, খাবারের মান খারাপ হলে ডায়রিয়া হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ডায়রিয়া হবার মূল কারণ দূষিত পানি। শতভাগ নিরাপদ পানি না দেওয়া গেলে ডায়রিয়ার হাত থেকে মুক্তি নেই। ডায়রিয়ার জীবাণু সংক্রমণ ছাড়া ডায়রিয়া হওয়া কিছুটা অসম্ভব।

অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, হাত সাবান দিয়ে ধোওয়ার পর কলের মুখ বন্ধ করা হয়। সেই মুখটি বন্ধ করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমার হাত জীবাণুমুক্ত। কিন্তু আমার আগে যদি সেই কলের মুখ কোনও আক্রান্ত ব্যক্তি ছুঁয়ে যায়, তাহলে ধরার পর আমিও ওই জীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে পড়ব। আর এ জীবাণুর ইনকিউবিশন পিরিয়ড দুই ঘণ্টা থেকে পাঁচ দিন।

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, যতক্ষণ পর্যন্ত না শতভাগ বিশুদ্ধ পানি দেওয়া না যাবে, সেটা খাবারের পানি হোক আর নিত্য ব্যবহারের হোক—ততক্ষণ পর্যন্ত ডায়রিয়া থেকে আমাদের রেহাই নেই—বলেন ডা. নাজমুল ইসলাম।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা বিষয়ক পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটি সদস্য আবু জামিল ফয়সাল সারাদেশে ছড়িয়ে পরা ডায়রিয়ার সঙ্গে করোনার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ঢাকায় ডায়রিয়া যখন বাড়লো, তখন নিরাপদ পানির অভাবের কথা বলা হলো। কিন্তু তাহলে সারাদেশে ডায়রিয়া কেন বাড়ছে।

করোনার অন্যতম লক্ষণ বা উপসর্গ হলো ডায়রিয়া জানিয়ে তিনি এসব রোগীদের করোনা পরীক্ষা করোনার সুপারিশ করেছেন। তিনি বলেন, এসব রোগীদের কেবলই ডায়রিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের করোনা পরীক্ষার করার বিষয়ে একেবারেই নজর দেওয়া হচ্ছে না।

সারাদেশে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব কেন প্রশ্নে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডায়রিয়া একটি সংক্রামক ব্যধি, এক জায়গা থেকে ছড়িয়ে গেছে আরেক জায়গায়। রোগীর মাধ্যমে ছড়িয়েছে, পানির মাধ্যমে ছড়িয়েছে, খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়েছে।

তবে মৌসুমের একটা বিষয়ও রয়েছে জানিয়ে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, এই সিজনে ব্যাকটেরিয়া গ্রো করে বেশি। তারপরও ম্যান টু ম্যান ট্রান্সমিশনের ভূমিকা এখানে প্রধান। যদি নিরাপদ পানি, নিরাপদ খাবার পরিবেশন এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারতাম ব্যাকটেরিয়া গ্রো করলেও সেটা লোকালি শেষ হয়ে যেত, ছড়িয়ে পড়তো না। কিন্তু সেটা যেহেতু করা যাচ্ছে না, তাই দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, টার্গেটেট অ্যাপ্রোচ দরকার, যেখানে ডায়রিয়া আউটব্রেক হচ্ছে, যেখান থেকে মানুষ হাসপাতালে আসছে, সে এলাকাতে নিরাপদ পানি, নিরাপদ খাবার দিতে হবে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতে, বস্তি এলাকাতে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট দিতে হবে, নিরাপদ খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে সবার জন্য।

/এমআর/
সম্পর্কিত
গরমে ডায়রিয়া রোগী আরও বাড়ার শঙ্কা
রাতের খাবার খেয়ে অসুস্থ ১৬ মাদ্রাসাশিক্ষার্থী, সকালে হাসপাতালে
অসুস্থ মেয়েকে দেখতে এসে বাবা-মায়ের মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি