X
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
১৬ আষাঢ় ১৪৩২

মাতৃমৃত্যু কমাতে হবে অর্ধশতাধিক

উদিসা ইসলাম
২৮ মে ২০২৩, ১৭:০০আপডেট : ২৮ মে ২০২৩, ১৭:৪২

দেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমলেও এখনও তা উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। বছরে ৩ হাজার ৭০০ মায়ের মৃত্যু হচ্ছে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে। অর্থাৎ, প্রতি দিন গড়ে ১০ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু হার কমিয়ে আনতে হবে। প্রতি এক লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে এখন ১২৩ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে বছরে। সেই হিসাবে সাত বছরের মধ্যে আরও প্রতি লাখ শিশু প্রসবে আরও ৫৩ জন মায়ের মৃত্যু কমাতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় এ সংখ্যাটি নামাতে হবে প্রতি লাখে ৭০ এ। তবে মাতৃস্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগামী সাত বছরের মধ্যে তা অর্জন করা দুরূহ হতে পারে।

বাংলাদেশে ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গত ২০ বছরে মাতৃমৃত্যু হার ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। সর্বশেষ ২০২০ সালে গর্ভাবস্থা বা প্রসবজনিত জটিলতার কারণে প্রতি ১ লাখ নারীর মধ্যে মারা গেছেন ১২৩ জন। ২০০০ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৪১ জন। সেই হিসাবে উল্লিখিত ২০ বছরে প্রতি ১ লাখ নারীর মধ্যে মৃত্যু কমেছে ৩১৮ জন। তথ্যমতে, আগামী সাত বছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব মনে হলেও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, এখন শেষদিকে এসে সেটা খুব দ্রুত কমার সুযোগ কম।

চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের  তৈরি করা ‘মাতৃমৃত্যুর প্রবণতা: ২০০০ থেকে ২০২০ সাল’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে বিশ্বে প্রতি দুই মিনিটে একজন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে।

প্রতিবেদনে মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে গুরুতর—রক্তপাত, সংক্রমণ, অনিরাপদ গর্ভপাত থেকে জটিলতা এবং এইচআইভি/এইডসের মতো জটিলতা অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এসব জটিলতার বেশিরভাগ প্রতিরোধযোগ্য বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু ও বাল্যবিবাহের হার কমছে এবং গর্ভনিরোধক প্রবণতার হার বাড়ছে। গত ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনএফপিএ’র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টিন ব্লোখুস সংস্থাটির বাংলাদেশ কার্যালয়ে প্রতিবেদন প্রকাশকালে বলেন, ‘মাতৃমৃত্যু ও বাল্যবিবাহের হার কমছে এবং গর্ভনিরোধক প্রচলনের হার বাড়ছে। এই উল্লেখযোগ্য সাফল্য সত্ত্বেও তিন শূন্য এবং এসডিজি অর্জনে আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে।’

 

ইউএনএফপিএ’র বিশ্বের জনসংখ্যা এবং জনসংখ্যার প্রধান উন্নয়ন এবং মূল প্রবণতা বিশ্লেষণ করে স্টেট অফ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ প্রকাশিত ‘মাতৃমৃত্যু প্রবণতা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মাতৃমৃত্যু কমার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এই ২০ বছরে সবচেয়ে বেশি মাতৃমৃত্যু কমেছে ভুটানে ৭৯ দশমিক ৫ শতাংশ ও সবচেয়ে কম কমেছে মালদ্বীপে ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ। এরপর ভারতে কমেছে ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালে ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ, পাকিস্তানে ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কায় ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ।

‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২১’-এ মাতৃমৃত্যু অংশে বলা আছে— মাতৃমৃত্যুর অনুপাত নারীদের বয়সের ওপর অনেকখানি সম্পর্কিত। বয়সভিত্তিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রসূতিদের মধ্যে মাতৃমৃত্যু হার অনেক কম। এক লাখ জীবিত জন্মের বিপরীতে মৃত্যু ৬৯ জন। শহরের তুলনায় গ্রামে মাতৃমৃত্যু হার বেশি। শহরাঞ্চলে এটি প্রতি লাখে ১৪০ জন, আর গ্রামে এর অনুপাত ১৭৬ জন। ক্লিনিকে সেবা গ্রহণকারী প্রসূতিদের মধ্যে সর্বনিম্ন মাতৃমৃত্যুর অনুপাত সবচেয়ে কম, ১২ জন এবং সর্বোচ্চ বাড়িতে প্রসূতি সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে এ হার সর্বোচ্চ, ৭৩ জন।

লক্ষ্য নির্ধারিত থাকলে তা অর্জনে সহায়ক হয় উল্লেখ করে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের গাইনোকলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিলকিস বেগম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সবার আগে গর্ভকালীন মায়েদের রোগ ও ঝুঁকি চিহ্নিত করতে হবে। আমাদের ১৩ হাজার কমিউনিটি হাসপাতাল আছে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বহু মাঠকর্মী আছেন, যারা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সেবা দেন। এখন যেটা দরকার সেটা হলো—সেই কর্মীদের সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বা মা ও তার পরিবারের সদস্যদের একটা সমন্বয় সাধন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গর্ভকালে অন্তত ৮ বার মায়ের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। এই ৮ বার পরীক্ষা করার নির্দিষ্ট কারণ আছে। সেটা যদি অন্তত চারবারও নিশ্চিত করা যায়, তা মায়ের ঝুঁকি কমাবে। সেই সেবাটা অন্তত নিশ্চিত করতে হবে।’

আরও পড়ুন:

বাড়িতে প্রসবের কারণে কমানো যাচ্ছে না মাতৃমৃত্যু

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ঢাকায় চিকিৎসায় এসে একই পরিবারের ৩ জনের রহস্যজনক মৃত্যু
ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু 
রাজশাহী মেডিক্যালে এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন রিমান্ডে
সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন রিমান্ডে
টিকটক কেনার মতো ধনবান লোক খুঁজে পেয়েছেন ট্রাম্প
টিকটক কেনার মতো ধনবান লোক খুঁজে পেয়েছেন ট্রাম্প
আবু সাঈদ হত্যা: ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল
আবু সাঈদ হত্যা: ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল
শাহে আলম মুরাদ আবারও রিমান্ডে 
শাহে আলম মুরাদ আবারও রিমান্ডে 
সর্বাধিক পঠিত
ঘরে ঢুকে নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা এলাকাবাসীর
ঘরে ঢুকে নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা এলাকাবাসীর
এনবিআরের শীর্ষ ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
এনবিআরের শীর্ষ ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
ব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন পাওয়ার বিষয়ে যা জানালেন উপদেষ্টা আসিফ
ব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন পাওয়ার বিষয়ে যা জানালেন উপদেষ্টা আসিফ
এনবিআরের সব চাকরি ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ ঘোষণা
এনবিআরের সব চাকরি ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ ঘোষণা
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রী সাভারে উদ্ধার
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রী সাভারে উদ্ধার