X
রবিবার, ২২ জুন ২০২৫
৮ আষাঢ় ১৪৩২

পরিত্যক্ত ভবন বাদ দিয়ে থাকার মতো সিট আছে: ঢামেক অধ্যক্ষ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ জুন ২০২৫, ১৬:৫৩আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ১৬:৫৩

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম বলেছেন, পরিত্যক্ত ভবন বাদ দিয়েও ছাত্রদের থাকার মতো সিট রয়েছে। কিন্তু সিনিয়র শিক্ষার্থীরা এক রুমে সর্বোচ্চ দুই-তিনজনের বেশি থাকতে রাজি না।

তিনি বলেন, মিলেমিশে থাকতে চাইলে পরিত্যক্ত ভবন এবং গণরুম ছাড়াই সব শিক্ষার্থীই সুন্দর করে থাকতে পারেন। রবিবার (২২ জুন) দুপুরে অধ্যক্ষের দফতরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

ঢামেক অধ্যক্ষ জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে কাউকে রাখতে চাই না, তবে কিছু শিক্ষার্থীর মনোভাব ও অসহযোগিতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম বলেন, ঢাকা মেডিক্যালের পরিত্যক্ত ভবনে কোনও শিক্ষার্থীর থাকার কথা নয়। সেই ভবন গত ৭ মাস আগে গণপূর্ত বিভাগ পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। তারও আগে থেকেই আমরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানিয়ে আসছি— যেন তারা ভবনটি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে আসে। বর্তমান প্রশাসন গত প্রায় ৯ মাস ধরে প্রাণপণ চেষ্টা করেছে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে আনার।

তিনি বলেন, আমরা শুধু একটি নির্দেশনা দিয়ে থেমে থাকিনি। অনেকবার তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, বোঝানোর চেষ্টা করেছি। একাধিকবার অভিভাবকসুলভ মনোভাব নিয়ে তাদের বলেছি।

অধ্যক্ষ ডা. কামরুল আলম দাবি করেন, ঢাকা মেডিক্যালের আরও কয়েকটি হল আছে, সেগুলো পরিত্যক্ত নয়। সেখানে ছাত্ররা থাকে। কিন্তু সেখানে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, ‘কে কার সঙ্গে রুম শেয়ার করবে’, এগুলো বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ চায় এক রুমে দুজন থাকুক, কেউ বলে তিনজন পর্যন্ত ঠিক আছে, এর বেশি নয়।

তিনি বলেন, এভাবে হলে তো সমস্যা হবেই। সবাই যদি একে অন্যকে একটু সহানুভূতির চোখে দেখতো, তাহলে কোনও সংকট থাকতো না। কারণ, আমরা হিসাব করে দেখেছি— নতুন ব্যাচসহ ছয়টি ব্যাচে আমাদের ছাত্র সংখ্যা ৭৫৫ জন, আর পরিত্যক্ত ভবন ও গণরুম বাদ দিলেও বাংলাদেশি মান অনুযায়ী আমরা ৭৬৬ জনকে সিট দিতে পারি। সুতরাং, সিটের ঘাটতি নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখন বিদেশি স্ট্যান্ডার্ডে যেতে পারবো না, যেখানে একজন ছাত্র একটি রুম পায়। বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সেটা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। কিন্তু ন্যূনতম নিরাপদ আবাসন নিশ্চিতে আমরা আন্তরিক।

অধ্যক্ষ দাবি করে বলেন, ছাত্ররা আমাদের আগে থেকেই কলেজ কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছে। ঈদের আগেই তারা নিজেরা কলেজে তালা লাগিয়ে দিয়েছে, ক্লাস বর্জন করেছে। অথচ মেডিক্যালের ছাত্ররা সাধারণত ঈদের আগে-পরে নিজেরা দুই-একদিন ছুটি নিতো, তবুও ক্লাস চলতো। কিন্তু এবার তারা পূর্ব ঘোষণা ছাড়া ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা একসময় নিজেরাও মেডিক্যালের ছাত্র ছিলাম। তখন এমনটা করতাম না। আন্দোলন হতে পারে, দাবি তোলা যেতে পারে, কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম একতরফাভাবে বন্ধ করে দেওয়াটা কখনোই সমাধানের পথ নয়।

অধ্যক্ষ বলেন, আমরাও চাই— ভবনগুলোর উন্নয়ন হোক। এই অবস্থায় কেউ থাকতে পারে না। ঢামেক প্রশাসনের পক্ষে এই ভগ্নদশা মেনে নেওয়া কখনোই কাম্য নয়। তবে সে জন্য ছাত্রদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা অস্বীকার করছি না। কিন্তু দায়িত্বহীনতা, বিশৃঙ্খলা ও অনমনীয় মনোভাব আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়। যদি তারা সহযোগিতা করতো, তাহলে এতদিনে আমরা একটি কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে পারতাম।

প্রসঙ্গত, ঢামেকের অ্যাকাডেমিক ভবন এবং আবাসিক হল ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায়, তা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিকল্প আবাসন এবং ছাত্রাবাস ও অ্যাকাডেমিক ভবন সংস্কারের দাবিতে গত ২৮ মে থেকে সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আসা নবীন ব্যাচ ‘কে-৮২’ তাদের সিনিয়র ব্যাচদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানও বর্জন করে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ফজলে রাব্বী হলের মূল ভবনের তৃতীয় তলায় ওয়াশরুম ও টয়লেটের সিলিং থেকে পলেস্তারা খসে পড়ায় বিপজ্জনক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ জানালার কাচ ভেঙে গেছে এবং এর আগের একটি ঘটনা— ঝড়ের সময় পুরো জানালার গ্রিল ভেঙে পড়লে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন। তৃতীয় তলার বেশ কয়েকটি কক্ষ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গত ৬ জুন ঢামেক শিক্ষার্থীরা তাদের আবাসিক হলগুলোতে জীবনের ঝুঁকির কথা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসসহ গার্লস হোস্টেল ও অ্যাকাডেমিক ভবনসহ আরও কয়েকটি ভবন এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ সাত মাস আগে ফজলে রাব্বি হলকে বসবাসের অনুপযোগী এবং পরিত্যক্ত ঘোষণা করা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে বসবাস করছেন। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, রানা প্লাজা বা জগন্নাথ হলের ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না— যা হবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি লজ্জাজনক ঘটনা।

/এসও/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
প্রেসক্লাবের সামনে থেকে আন্দোকারীদের সরিয়ে দিলো পুলিশ
স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে হল পরিদর্শনের আল্টিমেটাম ঢামেক শিক্ষার্থীদের
আজও তালাবদ্ধ ডিএসসিসির নগর ভবন, চলছে আন্দোলন
সর্বশেষ খবর
মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’: যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’: যুক্তরাষ্ট্র
গায়েবি মামলার সংস্কৃতি গোটা ব্যবসায় অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে: ড. হোসেন জিল্লুর
গায়েবি মামলার সংস্কৃতি গোটা ব্যবসায় অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে: ড. হোসেন জিল্লুর
করোনায় একদিনে ৫ জনের মৃত্যু
করোনায় একদিনে ৫ জনের মৃত্যু
জামিনে মুুক্তি পেলেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হক
জামিনে মুুক্তি পেলেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হক
সর্বাধিক পঠিত
ইউরোপীয়দের প্রস্তাবকে অবাস্তব বললেন ইরানি কর্মকর্তা
ইউরোপীয়দের প্রস্তাবকে অবাস্তব বললেন ইরানি কর্মকর্তা
ট্রাম্পের সমালোচনার পর ইরান নিয়ে সুর পাল্টালেন তুলসি গ্যাবার্ড
ট্রাম্পের সমালোচনার পর ইরান নিয়ে সুর পাল্টালেন তুলসি গ্যাবার্ড
ইরানে মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে উচ্চ সতর্কতা জারি
ইরানে মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে উচ্চ সতর্কতা জারি
‘জুলাই যোদ্ধাকে’ মারধরের অভিযোগে এসআই বরখাস্ত
‘জুলাই যোদ্ধাকে’ মারধরের অভিযোগে এসআই বরখাস্ত
ঝুঁকিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা, বন্ধ হচ্ছে প্রতিষ্ঠান
ঝুঁকিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা, বন্ধ হচ্ছে প্রতিষ্ঠান