X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় পিছিয়ে যাচ্ছে’

আবিদ হাসান
১৭ জুন ২০২১, ১৯:০০আপডেট : ১২ জুলাই ২০২১, ২২:২১

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রাজনীতি, আধিপত্য বিস্তার, শিক্ষা ও গবেষণায় পিছিয়ে থাকার কারণ এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপ করেছেন ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা।

বাংলা ট্টিবিউন: বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে ছাত্র সংগঠনের কী ভূমিকা ছিল? ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে সেটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

গোলাম মোস্তফা: স্বাধীনতাসহ স্বাধীনতা পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্র সংগঠনের উল্লেখযোগ্য ভুমিকা ছিল। মানুষের অধিকার, শিক্ষা- সবগুলো আন্দোলনে  ছাত্র সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ছাত্রদের আত্মদানের মধ্য দিয়েই যাবতীয় গণযুদ্ধ সম্পূর্ণ হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: স্বাধীনতার এক শ’ বছরে কী আশা করেন?

গোলাম মোস্তফা: আমাদের তরুণদের বা ছাত্রদের একটাই প্রত্যাশা। যে কারণে আমার স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছি, যে আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে, যে তিনটি মূলনীতি- সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার তা যেন ততদিনে নিশ্চিত হয়। আর সামাজিক বৈষম্য থাকবে না এমন দৃশ্যই দেখতে চাই। প্রতিষ্ঠা হবে ন্যায়বিচার। দুর্নীতিমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশই আমাদের প্রত্যাশা।

বাংলা ট্রিবিউন: ক্যাম্পাসে রাজনীতির সংস্কৃতির পরিবর্তন আসছে কি? কী ধরনের পরিবর্তন দেখছেন?

গোলাম মোস্তফা: ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে দুটি ধারা- একটা গণতন্ত্রের পক্ষে, শিক্ষার পক্ষে, শিক্ষার্থীদের অধিকারের পক্ষে। আরেকটি সরকারে সমর্থনপুষ্ট। তারা সবসময় একটা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য ছাত্রদের বিপক্ষে দাঁড়ায়। শিক্ষাঙ্গনে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। বিভিন্ন সরকারের পরিবর্তনে সরকার দলীয় ক্যাডার পরিবর্তন হয়, তবে এ সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়নি।

বাংলা ট্রিবিউন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ওপর এখন রাজনৈতিক প্রভাবটা কেমন?

গোলাম মোস্তফা: বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বর্তমান সময়ে অবশ্যই রাজনৈতিক প্রভাব আছে। স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ আছে। উপাচার্যকে নিয়োগ দেন আচার্য। আর আচার্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া কিছুই করতে পারেন না। আমরা ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আগেও বলেছি গণতান্ত্রিক সিন্ডিকেট করে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হোক। শিক্ষকরা দলীয় লেজুড়বৃত্তিক হয়ে পড়ছে। ফলে শিক্ষার উন্মুক্ত দিক বিঘ্নিত হচ্ছে।

বাংলা ট্রিবিউন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষে পা দিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি কোন দিকে? বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে আমাদের গৌরবের ঢাবি ক্রমান্বয়ে পেছাচ্ছে। এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে?

গোলাম মোস্তফা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ, স্বাধীনতার ৫০ বছর এগুলো তো একেকটি মাইলফলক হওয়ার কথা ছিল। এগুলো মানুষ অর্জন দিয়ে উদযাপন করবে। সেই জায়গায় এখন নৈরাশ্য আর হতাশা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংক নিচের দিকে যাচ্ছে, এটা সত্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ গবেষণা করা। সেই জায়গায় পিছিয়ে যাচ্ছে। গবেষকের ওপর যখন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় তখন গবেষণা হয় না। করোনাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তাদের সহযোগিতা করা হয়নি। গবেষণা খাতে বরাদ্দ কম। দলীয়ভাবে নিয়োগের কারণে শিক্ষকতায় আগ্রহ থাকলেও তরুণরা এতে আসছেন না। যারা আসছে তারা এটাকে জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবে নিচ্ছে। যার কারণে গবেষণা তাদের কাছে মুখ্য নয়। যা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিছু গবেষণা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে। যার ফলে অন্যরাও আগ্রহ হারাচ্ছে।

বাংলা ট্রিবিউন: ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রমকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? সহাবস্থান আছে?

গোলাম মোস্তফা: সকল সংগঠনে সেই অর্থে সহাবস্থানের পরিবেশ নেই। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে কিছুটা আছে। তারা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ছাত্রদের স্বার্থে কথা বলে। যৌথ প্লাটফর্মে কাজ করে। আরেকটি দল আছে, তাদের মূলকাজ হলো দলীয় লেজুড়বৃত্তি আর সরকারি ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত লাভ। ছদ্মবেশে তারা ছাত্রদের পক্ষে কথা বলে। সুযোগ বুঝে বিপক্ষে দাঁড়ায়।

বাংলা ট্রিবিউন: হলগুলোতে ক্ষমতাসীনদের একক আধিপত্য রয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ, এ বিষয়ে কী বলবেন?

গোলাম মোস্তফা: বিএনপির সময় ছাত্রদল, আওয়ামী লীগের সময় ছাত্রলীগ হলগুলো দখল করে থাকে এটা সত্য। তাদের নিপীড়নে অনেক শিক্ষার্থী প্রাণও হারিয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ভিন্নমত গ্রহণের প্রবণতা কেমন আছে?

গোলাম মোস্তফা: ভিন্নমত গ্রহণের প্রবণতা অনেকের মধ্যে আছে। অনেকের মধ্যে নেই। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা প্রগতিশীলতায় বিশ্বাস করে, তারা সকল মতকেই প্রাধান্য দেয়। যারা এসবে বিশ্বাসই করে না, সহনশীলতায় বিশ্বাস করে না, যারা মুখোশধারী, তারা আধিপত্য বিস্তারে বিশ্বাসী, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিশ্বাসী। এগুলোর ফলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়।

 

 

 

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
জাপার অফিস ভাঙচুর: নুরসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বললেন আদালত
জাপার অফিস ভাঙচুর: নুরসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বললেন আদালত
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!