X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘এখনও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অপব্যবহার হচ্ছে’

বাহাউদ্দিন ইমরান
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:০০আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:০০

সফলতা এবং অপব্যবহার দুটো নিয়েই আলোচনা-সমালোচনায় আছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচার প্রক্রিয়া।এ নিয়ে বারবার সমালোচনা ও পর্যবেক্ষণ এসেছে দেশের উচ্চ আদালত থেকে।এসব মামলায় নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বাংলা ট্রিবিউন-এর সঙ্গে কথা বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান। ইতোমধ্যে জনস্বার্থে মামলা পরিচালনার জন্য তিনি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক প্রো-বোনো অ্যাওয়ার্ড।

বাংলা ট্রিবিউন: ভ্রাম্যমাণ আদালতের গুরুত্ব কতটুকু?

ইশরাত হাসান: অবশ্যই গুরুত্ব আছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় যখন (ভ্রাম্যমাণ আদালত) পরিচালিত হয়, তখন অনেকে সতর্ক হয়ে যান। আদালত ভ্রাম্যমাণ হওয়ায় অনেকের মনেই সচেতনতা ও ভীতি কাজ করে। বিশেষ করে কাঁচাবাজারগুলোয় মূল্য তালিকা টানানো থেকে শুরু করে ভেজাল পণ্য সরবরাহকারীরাও ভয়ে থাকেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হচ্ছে না।

বাংলা ট্রিবিউন: ভ্রাম্যমাণ আদালতের অপব্যবহার কীভাবে হচ্ছে?

ইশরাত হাসান: ভ্রাম্যমাণ আদালতের অপব্যবহার সবসময়ই হয়ে আসছে। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে যে আইন দ্বারা গড়ে তোলা হয়েছে তার ৬ ধারায় বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা আছে। মূলত ছোট ছোট বিষয়ে বিচারের জন্য এই আদালত গঠন করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নিজেরাই অনেকসময় আইন মানছেন না।

তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যতবার মামলা এসেছে ততবারই সতর্ক করা হয়েছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিতে বলা হয়েছে। তারা একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের বেশি ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন না বলে আইনে বলা আছে। কারণ ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে তারা মূল বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নন। ঘটনাস্থলে কিছু ঘটলে তখনই সাজা দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে যিনি অপরাধ ঘটিয়েছেন তাকে দায় স্বীকার করতে হবে। সেটার ভিত্তিতেই সাজা দেওয়া যেতে পারে।

অনেকে শর্ত ভাঙছেন। কোনও অভিযোগে দ্রুত স্বীকারোক্তি নিয়ে অপরাধীদের জেলেও পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেক সময় এমনও হয়েছে যে, ধর্ষণের অভিযোগকে যৌন হয়রানি দেখিয়ে বিচার করে ফেলছেন। ফলে পরে ধর্ষণের অভিযোগ তুললেও দ্বিতীয়বার বিচার পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

বাংলা ট্রিবিউন: ভ্রাম্যমাণ আদালত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে চালানোর যৌক্তিকতা কতটুকু?

ইশরাত হাসান: যারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন তাদের অনেকেরই আইনের ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। ভারত অনেক আগে থেকেই জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। কেননা, এ আদালতের পরিধি সীমিত। কিন্তু জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা বেশি। এ ছাড়াও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের আইনের স্থগিতাদের মূলভিত্তিগুলো সম্পর্কে অনেকাংশে ধারণা থাকে না। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের কার্যক্রম আইনের দৃষ্টিতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আমাদের দেশে হাইকোর্টের রায়ে অনেক আগেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানোর বিষয়টি অসাংবিধানিক হয়ে আছে। তবে সে রায় আপিল বিভাগে স্থগিত রয়েছে। স্থগিতাদেশ বাতিল হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা সম্ভব হবে না।

বাংলা ট্রিবিউন: ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিরুদ্ধে কোনও মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে কি?

ইশরাত হাসান: বেশকিছু মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষ করে, ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক ১২১টি শিশুকে সাজা দেওয়ার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছিলাম। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওই কার্যক্রম নিয়ে দেশের বাইরে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। মামলাটিতে হাইকোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। কেননা, শিশু আইন থাকা সত্ত্বেও তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার হয়। কলা চুরির অপরাধেও ৭-৮ বছরের শিশুদের সাজা দেওয়া হয়েছিল। তাদের অনেকের স্বীকারোক্তি না থাকা সত্ত্বেও সাজা হয়েছিল।

সম্প্রতি আরেকটি মামলা নিয়ে কাজ করছি। দেখা গেছে, ইদানিং ভোক্তা অধিকার আইনের ওপর তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে জরিমানা করছেন। জরিমানার এখতিয়ায়া সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা নির্ধারিত থাকার পরও অনেকাংশে তারা এর কয়েকগুণ বেশি জরিমানা করছেন। আইনের ধারার সঠিক ব্যাপ্তি না জেনেই তারা এসব করছেন।

বাংলা ট্রিবিউন: ভ্রাম্যমাণ আদালতের অপব্যবহার রোধে করণীয় কী?

ইশরাত হাসান: ভ্রাম্যমাণ আদালতের অপব্যবহার রোধ করতে হলে কোনও ব্যক্তি ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে অন্তত একবছর প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিৎ। তাদের সিডিউলে প্রায় দেড় শ’ আইন রয়েছে। সেসব আইন সম্পর্কে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

পাশাপাশি জনগণকেও আইন সম্পর্কে জানাতে হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট স্বাক্ষর দিতে বললেই না বুঝে কেউ স্বাক্ষর দিতে পারেন না। সেটাও জনসাধারণকে জানানো উচিৎ। আবার অপরাধ স্বীকার না করলে সাজা দেওয়া যাবে না। গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে সেটাকে লঘু না বানিয়ে বিচারের জন্য স্থানীয় পুলিশকে এজাহার করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বিচার করে সাজা দিতেই হবে- এমন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পরে যদি ভুল বিচারের শিকার ভুক্তভোগী ক্ষতিপূরণ চেয়ে বসে, তবে তা সরকারের দায় বাড়াবে।

বাংলা ট্রিবিউন: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ইশরাত হাসান: বাংলা ট্রিবিউনকেও ধন্যবাদ।

/এফএ/এমএস/
সম্পর্কিত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
ড. ইউনূস মহাসমুদ্র, তিনি কেন পুকুর চুরি করবেন: দাবি আইনজীবীর
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
সর্বশেষ খবর
জাবি ছাত্রলীগের সেই ৩ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ 
জাবি ছাত্রলীগের সেই ৩ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ 
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৮
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
বেচাকেনা জমজমাট, কম দামে ভালো পাঞ্জাবিতে আগ্রহ ক্রেতাদের
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
‘মাঝেমধ্যে ভাবি, আইপিএল কি আদৌ ক্রিকেট’
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়