প্রশ্ন: ছোটবেলা থেকেই আমার মা আমাকে অন্য শিশুর সাথে তুলনা করতো আর বকাঝকা করতো। পরীক্ষার ফল যতই ভালো হোক না কেন, আমাকে বকা শুনতেই হতো, কারণ আমি প্রথম হতে পারিনি। মাকে কখনোই আমি খুশি করতে পারিনি। তখন থেকেই হীনমন্যতায় ভুগি। আমার আত্নবিশ্বাসের অভাব রয়েছে অনেক। কীভাবে এগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি?
উত্তর: ইতিবাচক কথা বা সাজেশন যেমন আমাদের মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রোগ্রাম রান করে, তেমনি নেতিবাচক কথা বা সাজেশন আমাদের মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রোগ্রাম রান করে. সন্তানের দুর্বলতাকে বড় করে দেখা বা অন্যদের কাছে দেখানো, নিজের সন্তানকে অন্যের সন্তানের সাথে তুলনা করা ইত্যাদি ভুল আচরণের কারনে সন্তানের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়। এর ফলে পরবর্তী জীবনে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিসহ বেশ কিছু মনোদৈহিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অতীতের নেতিবাচক প্রভাব কাটাতে এই পরামর্শগুলো অনুসরণ করুন-
১। দৈনন্দিন রুটিন: প্রতিদিনের কাজের তালিকা তৈরি করে ধীরে ধীরে আপনার পড়াশোনা ও জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান।
২। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা: নিয়মিত ব্যায়াম করুন, সঠিক পুষ্টি সম্পন্ন খাদ্য নির্বাচন করুন এবং যথেষ্ট ঘুম নিশ্চিত করুন।
৩। নিজের জন্য সময় নিন: আপনার মনোবল ফিরিয়ে আনার প্রথম ধাপ হলো নিজের জন্য সময় নেওয়া। শান্তিপূর্ণ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকুন।
৪। লক্ষ্য নির্ধারণ ও পরিকল্পনা: জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং তাকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে নিন। প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ করুন।
৫। আত্মবিশ্বাস: নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। পরাজয় ও সফলতা জীবনের অংশ। প্রতিদিন নিজেকে ভালোবাসার এবং পড়াশোনায় সাফল্যের ম্যাসেজ দিন।
৬। পরামর্শ নেওয়া: যদি প্রয়োজন হয়, শিক্ষা বিষয়ক পরামর্শ নিন। এটি আপনার সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে।
৭। স্ট্রেস পরিচালনা: স্ট্রেস পরিচালনা শিখুন। যোগা, ধ্যান, দীর্ঘশ্বাস নেওয়া ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে মনোবল বাড়ান। এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে আপনি হারানো মনোবল ফিরিয়ে আনতে পারবেন।
প্রশ্ন: আমার ক্লাস্টোফোবিয়া রয়েছে। বদ্ধ স্থানে আমি প্রচণ্ড ভয় পাই। মনে হয় অতলে হারিয়ে যাচ্ছি। অনেক বছর ধরে এই ভয় বয়ে বেড়াচ্ছি। এটা কি কখনও ভালো হয়? হলে কীভাবে?
উত্তর: ক্লাস্টোফোবিয়া বা বদ্ধ স্থানের ভয় ভালো করার জন্য আপনাকে ধৈর্য্যসহকারে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে যেতে হবে-
১। শ্বাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন: শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। তারপর মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। সবশেষে মনে মনে ১-২-৩-৪-৫-৬ গুনতে গুনতে পেট ভিতর দিকে টেনে নাক দিয়েই ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। যখনই মনে হবে তখন একটানা কয়েবার এরকম করুন।
২। অনুশীলন: অনুশীলনের মাধ্যমে ক্লাস্টোফোবিয়া বা বদ্ধ স্থানের ভয় কাটানো সম্ভব। এজন্য আপনাকে ইচ্ছা করে বদ্ধ স্থানে যেতে হবে ও সেখানে অবস্থান করতে হবে। প্রথম প্রথম আপনজনদের সাহায্য নিন। পরবর্তীতে আপনি নিজেই একা একা এই অনুশীলন করতে পারবেন।
৩। সামাজিক দক্ষতা উন্নয়ন: ক্ষুদ্র সামাজিক সংলগ্নতা বাড়ানোর মাধ্যমে সামাজিক দক্ষতা শিখুন এবং আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ান।
৪। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ: পরিস্থিতির সাথে যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ করে দেখুন এবং সম্ভাব্য ফলাফল বিবেচনা করুন।
৫। নিরপেক্ষ আত্মমূল্যায়ন: নিজের ইতিবাচক ও নেতিবাচক সকল চিন্তা ও বৈশিষ্ট্যকে সমানভাবে মেনে নিন এবং ভালো দিকগুলোর ওপর মনোনিবেশ করুন। অর্থাৎ, নিজেকে ভালো মন্দ সকল বৈশিষ্ট্যসহ মেনে নিতে হবে।
৬। মেডিটেশন: হিলিং মেডিটেশন এবং রিভার্স মেডিটেশনের মাধ্যমে আপনার ক্লাস্টোফোবিয়ার সমস্যা আপনি অনেকটা নিজে নিজেই নিরাময় করতে পারবেন।
৭। মানসিক চিকিৎসকের সাহায্য: যদি এই সমস্যা গুরুতর হয়, তবে একজন মানসিক চিকিৎসকের সাথে দেখা করার পরামর্শ দেওয়া হলো।