X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

মিথ-পুরাণের করণসূত্র : প্রজ্ঞা ও প্রকাশ || পর্ব-১

শিমুল মাহমুদ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৬:১৫আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৬:৩৯

মিথ-পুরাণের করণসূত্র : প্রজ্ঞা ও প্রকাশ || পর্ব-১
মানব প্রজন্মের জাতিগত অভিজ্ঞতার পুঞ্জীভূত সাংকেতিক প্রকাশই পুরাণ। ইতিহাস ও ঐতিহ্য; এবং এই ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে যেভাবে মানব পরিবারের আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশগত স্তরসমূহ জড়িয়ে থাকে, সেই স্তরসমূহের ব্যাখ্যা বা পাঠ উদ্ধার সম্ভব মিথ-পুরাণের আলোকে।

পুরাণই প্রথম ও একমাত্র বিষয় যার সাহায্যে আদিম জনগোষ্ঠী জগৎ ও জীবনের স্বরূপ অর্থাৎ মর্মার্থ বুঝতে চেষ্টা করেছিল। আলোচ্য নিবন্ধে মানব প্রজন্মের চেতনাগত বিকাশের সাথে মিথের সম্পর্ক নির্ণয় এবং সেই সম্পর্ক আমাদেরকে কীভাবে আমাদের শেকড় থেকে পাঠ গ্রহণ করতে সাহায্য করে তা আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছে।
মানবজীবন নির্দিষ্ট। মানবজীবন একটি নির্দিষ্ট দেহের ভেতর সীমাবদ্ধ। অথচ মানব দেহের বৈশিষ্ট্য এই নির্দিষ্ট সীমানাকে অতিক্রম করা। এই অতিক্রমণের আকাঙ্ক্ষার কারণেই প্রকৃতিতে একমাত্র মানব প্রজন্মেরই রয়েছে সভ্যতা। এই যে অতিক্রমণের আকাঙ্ক্ষা, এই আকাঙ্ক্ষা সে তার দেহের ভেতরই ধারণ করে আসছে। এই আকাঙ্ক্ষা তাকে অনন্তের কথা বলে। ‘অনন্ত’ অর্থ সম্ভাবনা। এই সম্ভবনা তাকে বৈশ্বিক অনন্তের কথা বলে। বৈশ্বিক অনন্তের অর্থ জ্ঞাত এবং অজ্ঞাত বিশ্বের রহস্য উদঘাটন করার এক চিরায়ত পিপাসা। এই পিপাসার কারণেই মানুষ প্রজ্ঞালব্ধ জীব। এই প্রজ্ঞাই তাকে সম্ভাবনার চিত্রকল্প তৈরি করতে শেখায়; শেখায় মহাকালের মুখোশ তৈরি করতে।
জোসেফ ক্যাম্পবেল এই মহাকালের মুখোশকেই ‘মিথ’ হিসেবে উল্লেখ করতে গিয়ে পক্ষান্তরে মিথের অপার বৈশিষ্ট্যকে আমাদের বোধে ধারণ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। মিথের কথা চিন্তা করার অর্থ মানবজীবনের ভেতর যে অনন্ত সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে সেই সম্ভাবনাকেই ক্রমাগত জাগিয়ে তোলার দিকে ধাবিত হওয়া। আমরা মহাভারতে দেখতে পাই, যযাতি তার জ্যেষ্ঠ পুত্র যদুকে বলছে, ‘বৎস, আমি শুক্রের শাপে জরাগ্রস্ত হয়েছি কিন্তু যৌবন ভোগে এখনও তৃপ্ত হইনি। আমার জরা নিয়ে তোমার যৌবন আমাকে দাও, সহস্র বৎসর পরে আবার তোমাকে যৌবন দিয়ে নিজের জরা ফিরিয়ে নেব।’ এই যে যৌবনের জন্য আকুতি, এ আকুতিই মানুষকে ক্রমাগত মানুষে উন্নীত করেছে। ‘যৌবন’ অর্থ জীবন; পুরাণ কথা আমাদের জীবনের কথা বলে; বলে জীবন কতটা মহার্ঘ্য। এই মহার্ঘ্য জীবনের যথার্থ ব্যবহার কীভাবে সম্ভব সেই পথ নির্দেশ করে পুরাণ।
অভিধান পাঠে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘পুরাণ’কে অলৌকিক রূপকথা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে, পুরাণ কথা নিছক কোনো অলীক ভাবনা সম্পর্কিত বিষয় নয়। বরং পুরাণের অতিলৌকিক ঘটনা অথবা পুরাণ বিষয়ক চরিত্রসমূহ এমনই বিষয়ের প্রতি আমাদের জ্ঞানদৃষ্টির উন্মোচন ঘটায় যার অনুভবের অন্তর্মূলে প্রোথিত রয়েছে মানব সভ্যতার ভিত্তি ভূমি তথা মানব প্রজাতির আত্মজ্ঞানের, আত্ম-উন্মোচনের, আত্মপ্রকাশের সূক্ষ্ম পর্যায়সমূহ। এই আত্মপ্রকাশ বস্তুত এক ধরনের আধ্যাত্মিক তাড়নার অংশ; আর পুরাণ সেই তাড়নার প্রতিফলন ঘটায়। ফলে পুরাণ মানবজীবনকে, মানবজীবনের অপার সম্ভাবনাকে উজ্জীবিত করে। এই উজ্জীবন আসলে এক ধরনের স্বর্গীয় জীবনের ভেতর অংশগ্রহণ। যেমন ডুবন্ত সূর্যের সীমাহীন রূপ অথবা দিগন্তবিস্তৃত পর্বত শ্রেণির মুগ্ধ বোধে আমরা যখন আত্মহারা হই তখন আমরা সহসাই এই স্বর্গীয় সত্তার অংশ হয়ে যাই। এই স্বর্গ কোনো অলৌকিক উপাখ্যান নয়; আধ্যাত্মিক তাড়নাও কোনো অলৌকিক উপলব্ধি নয়; বরং এ সব কিছুই আমাদের অভিজ্ঞতাজাত। মূলত সবই ইহকাল-আশ্রয়ী এবং বাস্তব-জীবন কেন্দ্রিক। মহাভারতে দেখতে পাই, ব্রহ্মা বশিষ্ঠকে বলছেন:
কৃষক তার ক্ষেত্রে যেরূপ বীজ বপন করে সেইরূপ ফল উৎপন্ন হয়; মানুষও তার সৎকর্ম ও অসৎকর্ম অনুসারে বিভিন্ন ফল লাভ করে। ক্ষেত্র ব্যতীত ফল উৎপন্ন হয় না, পুরুষকার ব্যতীত দৈবও সিদ্ধ হয় না। পণ্ডিতগণ পুরুষকারকে ক্ষেত্রের সহিত এবং দৈবকে বীজের সহিত তুলনা করেন। যেমন ক্ষেত্র ও বীজের সংযোগে, সেইরূপ পুরুষকার ও দৈবের সংযোগে ফল উৎপন্ন হয়। ক্লীব পতির সহিত স্ত্রীর সহবাস যেমন নিষ্ফল, কর্ম ত্যাগ করে দৈবের উপর নির্ভরও সেইরূপ। পুরুষকার দ্বারাই লোকে স্বর্গ, ভোগ্য বিষয় ও পাণ্ডিত্য লাভ করে। কৃপণ ক্লীব নিষ্ক্রিয় অকর্মকারী দুর্বল ও যত্নহীন লোকের অর্থলাভ হয় না। পুরুষকার অবলম্বন করে কর্ম করলে দৈব তার সহায়ক হয়, কিন্তু কেবল দৈবে কিছুই পাওয়া যায় না। পুণ্যই দেবগণের আশ্রয়, পুণ্যকর্ম দ্বারা সমস্তই পাওয়া যায়, পুণ্যশীল লোকে দৈবকেও অতিক্রম করেন। দৈবের প্রভুত্ব নেই, শিষ্য যেমন গুরুর অনুসরণ করে দৈব সেইরূপ পুরুষকারের অনুসরণ করে।[কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস, মহাভারত, অনু., রাজশেখর বসু]

আধুনিক বিশ্বে বাস করেও আমরা ভাগ্যে বিশ্বাস করি; নিজেদের তকদিরের ওপর ছেড়ে দিয়ে ভারমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করি। অথচ, কোনো ধর্মই সে কথা বলে না। পুরুষকার অর্থ পৌরুষ; আর পৌরুষ থেকেই কর্মফল লাভ সম্ভব। কর্মফলই দৈব বা ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। ধর্ম আমাদেরকে বলছে, আমাদের ডান কাঁধে রয়েছে শুভ ফেরেস্তা আর বাম কাঁধে অশুভ ফেরেস্তা। আসলে আমরা আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভার বহন করে ফিরছি আমাদের কাঁধে; যা থেকে মুক্তি পেতে আমরা আমাদের সমস্ত শুভ অশুভের অংশ ফেরেস্তাদের বা দেবতাদের ওপর অর্পণ করছি। এতে বরং লাভই হচ্ছে; আমরা মুক্তি পাচ্ছি; ভারমুক্ত হচ্ছি; অথবা শুভ অশুভের দ্বৈরথে ক্রমাগত মানবিক পথ অনুসন্ধান করছি।
এই যে দেবতা বা ফেরেস্তা এরা কিন্তু মানব-চরিত্রেরই প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিভূ; যারা মানবজীবনের অজ্ঞাত রহস্য উন্মোচন করার ভূমিকায় অংশ নেয়। যেমন আমরা হোমারের ইলিয়ড পাঠে দেখতে পাই, সেখানে দেবতা নয় বরং মানুষই প্রাধান্য লাভ করেছে; দেবতারাও মানবতুল্য আচরণে লিপ্ত হয়; দেবতারা ষড়যন্ত্র ও অযাচারে অংশ নেয়। আর যখন তারা অলৌকিক কাজে অংশ নিচ্ছে তখন পক্ষান্তরে মানব প্রজন্মের চিরায়ত আকাঙ্ক্ষার বাস্তব রূপায়ণ ঘটানো হচ্ছে। একিলিস জলপরি থেটিসের পুত্র হওয়া সত্ত্বেও তার ক্রোধ দেবতার ক্রোধকে অতিক্রম করে গিয়েছে। এই ক্রোধ পক্ষান্তরে মানুষের অসীম সম্ভাবনা তথা চিরায়ত ক্ষমতা লাভের প্রতি ইঙ্গিত দেয়; ইঙ্গিত দেয় মানব প্রজন্মের শৌর্যবীর্যের প্রতি। বৌদ্ধ ধর্মের অনুষঙ্গ ধরে সপ্তম শতকে আচার্য শান্তি দেব বলেছেন, ‘এইরূপে ক্ষমাশীল হইয়া বীর্যের সাধনা করা কর্তব্য। কেননা, বুদ্ধত্ব লাভ বীর্য সাধনার উপরই নির্ভর। বায়ু ব্যতীত গতি যেমন সম্ভব নয়, বীর্য ব্যতিরেকে পুণ্যও তেমনি সম্ভব নহে।... বীর্য কি? কুশল কর্মে উৎসাহকে বীর্য বলা হয়। বীর্যের বিপরীত কি? আলস্য, কু-বিষয়ে আসক্তি, দুষ্কর বিষয় হইতে নিবৃত্তি এবং নিজের প্রতি অবজ্ঞা-  ইহাদিগকে বীর্যের বিপক্ষ বলা হয়।’ [আচার্য শান্তিদেব, বোধিচর্যাবতার, অনু., জ্যোতি পাল স্থবির]
এই বীর্য মানব মহীমার সারবস্তু। এই সারবস্তু মানুষ ধারণ করতে পেরেছে বিধায় সে ক্লীব-ফেরেস্তা অথবা আজ্ঞাবহ দেবদূত নয়; বরং মানুষ তার সৃষ্ট দেবতাকেও শেষাবধি অতিক্রম করার ক্ষমতা রাখে। আর এ জন্যই মানব প্রজন্ম প্রকৃতির সমস্ত জীবকে অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত নিজেকে সৃষ্টির সেরা জীবে উন্নীত করতে পেরেছে। এই সৃষ্টির সেরা জীবের সাথে সংযুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক রহস্য; এই রহস্যকে ধারণ করে আছে মহাকাল এবং চিরন্তন প্রকৃতি। মিথ আমাদের জীবনকে প্রকৃতির সমান্তরালে উন্নীত করতে শেখায়। এই সমান্তরাল-আকাঙ্ক্ষা চিরন্তন। কেননা মানুষ তো প্রকৃতিরই অংশ; মানুষের ভেতরেই রয়েছে প্রকৃতির যাবতীয় বিপর্যয় এবং সেই বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণের উপায়ও মানুষের অপার সম্ভবনার ভেতর ঘুমিয়ে আছে। ‘পুরাণ’ আমাদের সেই সম্ভাবনার দরজায় টোকা দেবার মন্ত্র শিখিয়ে দেয়।

প্রকৃতি জগতের প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবনের সাথে রয়েছে মানব চেতনার অংশগ্রহণ। সুতরাং মানুষ অনিবার্যভাবেই সেই চেতনাকে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছুক। ছুঁয়ে দেবার জন্য তার প্রয়োজন হয় ভাষার। পৃথিবীর চিরন্তন সত্যকে উদঘাটনের জন্য শুধু নিজের ভাষাটুকুই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন চিরন্তন প্রকৃতিকে পাঠ করবার মতো ভাষা; প্রয়োজন জীবজগতের ভাষা। এই প্রয়োজনীয়তার অর্থাৎ এই চিরন্তন আকাঙ্ক্ষার রূপান্তর ঘটেছে সোলায়মান পয়গম্বর বিষয়ক পুরাণকল্পে। রাজা সোলয়মান বলছেন, ‘হে লোক সকল, আমি পক্ষীর ভাষায় শিক্ষিত হইয়াছি ও আমাকে সকল বস্তু প্রদত্ত হইয়াছে, ইহা অবশ্য স্পষ্ট উন্নতি।’ [কুরআন শারীফ, অনু., ভাই গিরিশচন্দ্র সেন] অর্থাৎ প্রকৃতির যাবতীয় গুপ্ত রহস্যের পাঠ গ্রহণ বা মর্মার্থ অনুসন্ধান ও রপ্ত করার মধ্য দিয়ে মানব পরিবার বিরূপ প্রকৃতিকে নিজের আয়ত্তে এনে আজ সে প্রভুত্ব অর্জন করেছে। মানবকুলের এ অর্জনই তাকে প্রকৃতি শ্রেষ্ঠ করে তুলেছে। এই শ্রেষ্ঠত্বের অভিজ্ঞতা থেকে পুরাণকথার জন্ম; মানব প্রজন্ম তার অর্জন-যোগ্যতা বংশপরম্পরায় ছড়িয়ে দিয়েছে প্রজন্মস্মৃতিতে, ভাষাতে, প্রত্নঅভিজ্ঞতায়, বিশ্বাস-সংস্কার অথবা পুরাণকথা আর পুস্তকের অক্ষরে।

দৃশ্যমান জগতের বাইরে যে সব অনুষঙ্গ বিদ্যমান তাদের রূপক হিসেবে উপস্থাপন করতে গিয়েই বস্তুত পুরাণের জন্ম। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, শিকারযুগে আমাদের পূর্বপুরুষেরা শিকার থেকে ফেরার পর আগুনের চারপাশে বসে শিকারের গল্প করতো। তারা তাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার সাহায্যে ভাবতে শেখে শিকারের দেহ থেকে প্রাণবায়ু অন্য কোথাও চলে গিয়েছে; যেখানে বাস করেন পরম পুরুষ বা ব্রহ্মা। এই পরম পুরুষ আনন্দিত হলে তিনিই তাদের জন্য শিকার পাঠিয়ে থাকেন। আর ব্রহ্মা অসন্তুষ্ট হলে শিকার তাদের নাগালের বাইরে চলে যায়। এই ব্রহ্মার রহস্য উপস্থাপন করতে গিয়ে তারা তাদের ভাষায় রূপকের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়; আর এই রূপকের আশ্রয়ে সৃষ্টি হতে থাকে পুরাণকথা। তারা তাদের রূপকসমূহ গ্রহণ করেছিল তাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকে; ফলে সংগত কারণেই বংশপরম্পরায় এই অভিজ্ঞতা নির্দেশিত পুরাণকথা তাদের পথ চলার নির্দেশক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে।

এক সময় জীবনযাপনের প্রয়োজনে রূপকসমূহ অলৌকিক ধারণায় উন্নীত হতে থাকে; যেমন ব্রহ্মাবিষয়ক চেতনা। এই ব্রহ্মা হচ্ছেন নৈর্ব্যক্তিক। তিনি সব জায়গাতেই বিরাজ করছেন। পৃথিবীর প্রতিটি নরগোষ্ঠীর ভেতর রয়েছেন এই ব্রহ্মা; যার কাজ ক্রমাগত মানবগোষ্ঠীকে মানবিকীকরণের প্রবণতায় উজ্জীবিত করা। ফলে দেব দেবীদের চরিত্র মানব চরিত্রের সাথে মিলে যায়; এমনকি আমরা আমাদের নিরাকার ব্রহ্মাকেও মানব চরিত্রের নিরানব্বই গুণাবলির সাথে মিলিয়ে নেবার চেষ্টা করি; যা পক্ষান্তরে সভ্যতার পক্ষেই যায়। এই ব্রহ্মা অথবা এই মানবিকীকরণ প্রাকৃতিক শক্তির মতো আমাদের ভেতর আধ্যাত্মিক শক্তি হিসেবে কাজ করে; আমাদের পথ চলতে সাহায্য করে।

সুতরাং সংগত কারণেই দৈহিক এবং আধ্যাত্মিক চিন্তনের ভেতর জোসেফ ক্যাম্বেল তেমন কোনো ফারাক খুঁজে পাননি এবং তিনি দেহকে বাস্তব সীমানায় চিহ্নিত করে নিয়েই বলতে পেরেছেন প্রার্থনা আসলে নিজেকে নিজের সত্তাকে নিজের দেহকে এক ধরনের রহস্যের সাথে সম্পর্কিত করে সেই রহস্যের ধ্যানে লিপ্ত হওয়া। আসলে এ রহস্যই হচ্ছেন ব্রহ্মা; এ রহস্যই আসলে মিথের চিন্তন; অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত মানুষের ক্রমাগত মানুষ হয়ে ওঠার তাড়নায় আহরিত অভিজ্ঞতার যোগফলই পুরাণকল্প।

মানুষ হয়ে ওঠার জন্য পুরাণ আমাদের সাধনার কথা বলে; যেমন, বিভিন্ন্ ধর্মে এক ধরনের ধ্যান শেখানো হয়; নাম জপা হয়; তসবিহ টেপা হয়; এতে মন এক ধরনের রহস্যের কেন্দ্রে আবদ্ধ হয় এবং তার অস্তিত্ব উপলব্ধিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয় এবং যেহেতু মিথ আমাদের ভেতর বিশ্বাসের ভিত্তিমূল দৃঢ় করেছে সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই সেহেতু সেই রহস্যে ঘেরা অবিনশ্বরের উপলব্ধিও চেতনায় ছুঁয়ে দেয়া যায়। জেমস জয়েস যাকে বলছেন, ‘ইপিফ্যানি’; যেখানে আমরা এক ধরনের অবিনশ্বর নান্দনিকতার জালে আবদ্ধ হই; যেখানে অভিজ্ঞতা, নীতিশাস্ত্র অথবা নৈতিকতা সবকিছুকে আমরা ছাড়িয়ে যাই। বিল ময়ার্স এ অবস্থাকে বলেছেন, আপনি আপনার অহমকে মহত্ত্বমের অভিজ্ঞতায় পরাজিত করেন। (চলবে) 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নিয়োগ পেলেন ১০ জন 
ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নিয়োগ পেলেন ১০ জন 
স্বস্তির জয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ফিরলো লিভারপুল
স্বস্তির জয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ফিরলো লিভারপুল
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহি চায় ঢাকা
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহি চায় ঢাকা
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী