X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলার ধূলিপথে সুধীর চক্রবর্তী

বিমল দাস
১৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:০০আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:৩৮

বাংলার ধূলিপথে সুধীর চক্রবর্তী ছিয়াশি বছর বয়সে মৃত্যু খুবই স্বাভাবিক—কথাটা আমরা যারা বেঁচে আছি তারা সহজেই বলতে পারি, কিন্তু স্বজন হারানোর বেদনা বয়স দিয়ে বিচার করা যায় না। কোনো মৃত্যুকেই ঔচিত্যবোধ দিয়ে স্বীকার করা যায় না। তবু ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।’

এই কথাগুলো ভাবছিলাম সুধীর চক্রবর্তীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে। গত মঙ্গলবার ৮৬ বছর বয়সে তিনি দেহ রাখলেন অনন্ত যাত্রার শকটে।

বাঙালির কাছে দীর্ঘজীবন বলতে শত বছর ছুঁই ছুঁই। রোগ-ভোগ সয়ে সয়ে শয্যায় টিকে থাকা। সুধীর চক্রবর্তীও ভুগছিলেন নানা রোগব্যাধিতে। কিন্তু সেসব তো জীবনেরই অংশ।

আমরা যারা তাঁর মানস-স্বজন, আমাদের বেদনা তো আরও বিপুল। দীর্ঘ ছয় দশক ধরে তিনি আমাদের এক লোকায়ত বাংলার ধূলিপথে হাঁটতে শিখিয়েছেন। আমরা জেনেছি নগরকেন্দ্রিক আধুনিকতার বাইরেও আছে এক দুনিয়া—নিজের ভাষার, নিজের স্বরের, নিজের সাধানার। হয়ত ওই দুনিয়াই বাঙালির বাঙালিত্ব।

সুধীর চক্রবর্তী কর্তাভজা, বলাহাড়ি, সাহেবধনি ইত্যাদি টিকে থাকা ধর্ম, বিশ্বাস ও তাদের গান নিয়ে লিখেছেন বিস্তর। লালন ফকির সংক্রান্ত চর্চার একটি আকরগ্রন্থ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় তাঁর ‘ব্রাত্য লোকায়ত লালন’ গ্রন্থটি। তিনি বাংলার লোকগান, ধর্ম ও লোকভাষাকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বের মানুষের কাছে।

সুধীর চক্রবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘেরাটোপে বন্দি অধ্যাপক-গবেষক নন। তিনি বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরেছেন। অভিজ্ঞতা দিয়ে, মেধা-মনন দিয়ে, স্পর্শ করে বুঝেছেন লোকসম্প্রদায়ের ধর্ম ও সৃজনশীলতা। যা সত্যিই এক ‘গভীর নির্জন পথ’-এর অধ্যায়।  

সুধীর চক্রবর্তীর কাজেরও রয়েছে নানা বৈচিত্র্য ও বিন্যাস। তিনি যেমন বাউল-ফফির ও লোকায়াত ধর্ম-বিশ্বাস নিয়ে কাজ করেছেন, তেমনি আছে রবীন্দ্রসঙ্গীত বিষয়ে তার নানামাত্রিক ভাবনাচিন্তা। সম্পাদক হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান। ‘বাংলার বাউল ফকির’, ‘বুদ্ধিজীবীর নোটবই’, ‘যৌনতা ও সংস্কৃতি’, ‘গবেষণার অন্তরমহল’ ইত্যাদি সংখ্যাগুলো এক অনুদ্ঘটিত জগতেরই বিষয়বস্তু, যা পাঠকমহলে খুব সাড়া ফেলে।

সুধীর চক্রবর্তী জন্মগ্রহণ করেছেন ১৯৩৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। পৈতৃভূমি নদিয়ার দিগনগরে। ছেলেবেলা কেটেছে হাওড়ার শিবপুরে। তিনি নিজেকে কৃষ্ণনাগরিক বলে পরিচয় দিতেন। বারো

বছর সেই কৃষ্ণনগর থেকেই সম্পাদনা করেছেন ‘ধ্রুবপদ’ পত্রিকা। লিখেছেন ষাটের অধিক বই। তিনি ‘বাউল ফকির কথা’র জন্য পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার এবং সাহিত্য আকাদেমি।

মৃত্যুর পর পঞ্চভূতে মিলিয়ে যাওয়ার, বা নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়ার যে চিরকালীন চিরস্থায়ী যাত্রা, তাতে সুধীর চক্রবর্তী—বাউল মনের মতো বাংলার ধূলিতে ঘুরে ঘুরে শুনবে বাংলার দেহাতি গান।

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুর্নীতির দায়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা
দুর্নীতির দায়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা
এসএসসি’র ফল প্রকাশের দিন ঘোষণা
এসএসসি’র ফল প্রকাশের দিন ঘোষণা
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক