X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১
আবুল হোসেন

কবিতার সমুদ্রে বিশাল তরঙ্গ

শ্যামল নাথ
১৬ আগস্ট ২০২১, ১৫:০৩আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২১, ১৫:০৩

[কবি আবুল হোসেন ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ত্রিশের দশকে অবিভক্ত ভারতে তার লেখালেখির সূচনা। তিনি চল্লিশের দশকের অন্যতম কবি। ১৯৬৩ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৮০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। আবুল হোসেন মৃত্যুবরণ করেন ২০১৪ সালের ২৯ জুন।]

কবিতাকে নাকি নিরাভরণ হতে হয়। সে আবার কেমন বিষয়? যেটা চল্লিশের উজ্জ্বলতম কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় পারেননি, পারেননি সুকান্তও। বলা যেতে পারে তাঁরা সেপথে হাঁটেননি। হেঁটেছেন একজনই, কবি আবুল হোসেন। তাই তো এই দুজনের চেয়ে উনি আলাদা এবং একক। কিন্তু তিনি প্রাণিত ছিলেন কবি সমর সেন দ্বারা। তিনি কবিতাকে নিতে চেয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে, করেছেন তাদের বোধগম্য। একইসঙ্গে নির্মোহতা, পরিমিতিবোধ, বিদ্রুপ, প্রেম এবং দার্শনিকতার সম্মিলন তাঁকে তাঁর সমসাময়িক অনেক কবির থেকে আলাদা করে দেয়। এই আলাদা করে দেওয়াটা সচেতনভাবেই। অবচেতনে নয়। আধুনিকতার পাশাপাশি সমসাময়িক কবিদের চেয়ে তিনি এগিয়ে ছিলেন তাঁর কাব্য এবং রুচিতে। 
প্রথম পাঠে আবুল হোসেনের সকল কবিতাকেই মনে হতে পারে সাধারণ মুখচলতি গদ্যে। কিন্তু নিবিড় এবং একনিষ্ঠ পাঠে ধরা পড়ে যে ওই গদ্যভাষ আর ওই সংলাপভাষণের ভেতরেই আমরা শুনে উঠছি এক মৌলিক কবিতাকণ্ঠ। এতটাই মৌলিক তাঁর এই কাব্যভাষা যে তিনি ফররুখ ও আহসান হাবীবের সময়ে যাঁরা তখনো তিরিশের কবি-প্রচল ভাষায় লিখিছিলেন, কিন্তু অচিরে পেয়ে যাচ্ছিলেন নিজকণ্ঠ, ফররুখ প্রায় অবিলম্বেই আর আহসান হাবীব কিছুটা পরে—তাঁদের থেকে কতটাই না স্বতন্ত্র সার্বভৌম তিনি আবুল হোসেন। 
বাংলা কবিতাকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন কেবল বাংলা ভাষার কবিতায় নয়। তাঁর সমসময়ের বা অনধিক পরের অনেক বাঙালি কবিরও স্বতন্ত্র যাত্রাপথে তিনি জুগিয়েছিলেন পৃথক মানচিত্র। 
সাতচল্লিশের পর সীমান্তের এপারে তখন কেবল তিনজনকে এ জমিতে প্রতিনিয়ত পাওয়া যাচ্ছিল—ফররুখ আহমদ, আহসান হাবীব ও আবুল হোসেন। এদের মধ্যে আবুল হোসেনই আমাদের মানে বাংলাদেশের কবিতায় প্রথম আধুনিক।
সবচে’ বিস্ময়কর বিষয় হলো রবীন্দ্র-নজরুল-জীবনানন্দ দাশের সান্নিধ্য তিনি পেয়েছেন। জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কাব্যের অন্যতম সমালোচক ছিলেন তিনি। সাহিত্যে তাঁর পরিশীলনের উৎসাহ পেয়েছিলেন আবু সয়ীদ আইয়ুবের কাছে। কারণ, পরিশীলন আধুনিকতা অর্জনের অন্যতম উপায়। তাই তিনিই প্রথম আধুনিক কবি আমাদের। এই কারণে তিনি আমাদের প্রথম আধুনিক যে, তাঁর কবিতায় বারেবারে পরিলক্ষিত হয়েছে বাকসংযম। উচ্ছ্বাস, আবেগ, কল্পনা কিংবা বর্ণালি-চিত্রকল্পের নিরাভরণ প্রকাশ। এভাবে তিনি আলাদা হয়ে যান।
যে বিষয়ে অবতারণা করতে চাই তা হলো কবিতার আবেগহীন গদ্যময়তা কিংবা কবিতাকে নিরাভরণ করে দেওয়া। কবিতাকে কেবল আবেগ নয়, অভিজ্ঞতা দিয়ে নির্মাণ করতে হয় তা কবি আবুল হোসেন রপ্ত করেছিলেন। কেবল রপ্ত করেননি, সফল প্রয়োগও তিনি করেছিলেন বলা যেতে পারে। 
তবে বাংলা কবিতার যেকোনো আলোচনা তাঁকে ছাড়া যদি হয়ও, কিন্তু কবিতার বিশিষ্টতার কথা, কবিতায় আবেগহীনতার কথা, সার্থক সমিল গদ্যকবিতার কথা কিংবা বাঙালি মুসলিম মানসের প্রথম আধুনিক কবিতার কথা বা কবির প্রসঙ্গ আসলে যে নামটি অনায়াস আসবে তা কবি আবুল হোসেনের নাম। 
যে কবিতায় কবি কবিতার দাবি ও দরকার সম্পন্ন করতে পারেন তা নিয়ে সংশয় থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। তবুও তাঁর কবিতাকে প্রতিনিয়ত বদলাতে হয়। প্রতিনিয়ত বদলে যাওয়াটাই তাকে বিশিষ্টতার দিকে আধুনিকতার দিকে নিয়ে যায়। যদিও কবিতা সৃষ্টির শুরুর দিক থেকে আজ পর্যন্ত যেসব কবিতার জন্ম হয়েছে পৃথিবীব্যাপী তার অনেক কবিতা ছাপার অক্ষরে টিকে থাকলেও মানুষের মন থেকে তার অনেকখানি মুছে গেছে। এ সময়ে এসেও অনেকেই হারিয়ে গেছেন, যাবেনও সেটা মোটেই বিস্মিত হওয়ার মতো কিছুই নয়। এ ধারা আসছে অবিরত। একে তো আর অস্বীকার করা যায় না। যেমন অস্বীকার করা যায় না কবি আবুল হোসেনের প্রথম ও সার্থক গদ্যকবিতা ‘বাংলার মেয়ে’। 
‘বাংলার মেয়ে’তে কবি আবুল হোসেন প্রথম লিখলেন সমিল গদ্যকবিতা। 
আজকের দিনে রান্নাঘরে অন্ধকারের মাঝে/ যে মেয়েরা বসে চীনে বাসন মাজে/ মশলা পিষতে চোখ ভরে আসে জলে/ তাদেরো অন্ধ জীবনের তলে/ উঁকিঝুঁকি মারে রাজকুমার। (বাংলার মেয়ে : নববসন্ত)
প্রথম সমিল ও সার্থক গদ্যকবিতা এ জন্য বলেছি যে, গদ্যকবিতা এর আগেও লেখা হয়েছে। কিন্তু সার্থকতার বিচারে কবিতার নিহিত অর্থের বিচার, ছন্দের বিচারে কিংবা মাত্রার বিচারে এটিই প্রথম সার্থক সমিল গদ্যকবিতা। ফলে তাঁর কবিতায় স্বল্পভাষ্য এবং আবেগের সংযমের কথা মনে করিয়ে দেয়। যদিও এ ধরনের কবিতা লেখার জন্য তাকে কবি এজরা পাউন্ডের সাথে তুলনা হয়। ভাষা ও প্রকরণের ক্ষেত্রে সারল্যে ও স্বাভাবিকতার সফল প্রয়োগ থাকলেও তা তাঁর কবিতাকে কতটা বিশিষ্টতা দিয়েছে সে বিষয়ে আরো একপ্রস্থ আলোচনা হতে পারে। তবু তাঁর কবিতার ভাবটা কিছুটা কবি এলিয়টের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়। 
আবুল হোসেন চিন্তায় ও চেতনার দিক থেকে ছিলেন স্থিতধী এবং একক। এই ককক চিন্তার ক্ষেত্রে ওই যে বললাম নিরাভরণ জীবন কটিয়েছেন। যাপন করেছিলেন জীবনকে। এক জীবনে সকলে জীবনকে যাপন করতে পারেন না। ফলে তিনি কবিতাকে দান করেছেন ভিন্নতা, ভিন্ন মেজাজ। যা তিনি তাঁর সমসাময়িক সার্থক গদ্যকবি সমর সেনকে দেখে ও পাঠে রপ্ত করেছিলেন। এর মূল কারণ নিশ্চয় গদ্যগন্ধী শব্দের ভিতর কবিতার লাবণ্যকে ছড়িয়ে দেওয়া এবং প্রকৃত গদ্যছন্দকে অনুসরণের মধ্যদিয়ে সমর সেন বাংলা কবিতার ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। থাকবেনও। এ কথা অনস্বীকার্য যে, তিরিশের প্রবল শক্তিমান পাঁচ মহৎ কবির পর বাংলা কবিতার যে বাঁকবদল এবং আবহমানতার সৃজনকর্ম সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে যেন নিঃসঙ্গ দ্বীপের মতো অবস্থান সমর সেনের। সেক্ষেত্রে তার অনুসারী কিবা একই ঘরনার কেউ গড়ে না উঠলেও ইঙ্গিত ও বলার ধরনে আবুল হোসেন তাঁরই পথ ধরে হাঁটতে চেয়েছেন। কিন্তু সেই জার্নিটা ছিল মৌলিকতা অর্জনকারী তাৎপর্যপূর্ণ কণ্ঠস্বর। পথও বলা বলা যেতে পারে।
তাই আমার বারবার মনে হয়েছে আবুল হোসেনের মন ও মনন যেন অভিন্ন কবিসত্তা থেকে উৎসারিত। আবুল হোসেন গদ্যের ভিতর কাব্য সঞ্চার করতে যেমনি অবিচল ছিলেন তেমনি পদ্যকেও আপন মহীমায় বুকে টেনে নিয়েছিলেন। তাঁর কবিতায় নানান বিষয়ের পাশাপাশি আত্মকেন্দ্রিকতা ও সমাজ বাস্তবতার কথাও ধ্বনিত হয়েছে। তাই তাঁর কবিতায় প্রধানত আবেগের স্থানে এসেছে বুদ্ধি ও মননশীলতা। প্রথম জীবনে লেখা রোম্যান্টিক কবিতা ‘মেহেদীর জন্য’ লিখেও জনপ্রিয় ও রোম্যান্টিকতাকে বর্জন করেছিলেন কবিতায়। তাই বারেবারে বলতে পারি আবুল হোসেন রোম্যান্টিকতাকে স্বাগত জানিয়েও কবিতার মাটিতে কঠিন নিরেট মাটিতে দুই পা প্রোথিত করে ছিলেন। 
তিনি বস্তু ও ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা, সামাজিক উপকরণ, নতুনত্ব সন্ধানের মধ্যদিয়ে চলে গেছেন দার্শনিক গভীরতায় কখনো কখনো। আবেগ বর্জিত সুরারোপ, মিতবাক ও মেদহীনতা তাঁর কবিতাকে পথ বাতলে দিতে সাহায্য করেছে। কেবল সাহায্য করেননি, করেছেন গদ্যের ভিতরে কবিতার সঞ্চার। যা কিনা বিংশ শতাব্দীর নতুন পথের কথাই মনে করিয়ে দেয়। 
কবিতার যে ভাবালুতা সেটা তিনি বর্জন করতে চেয়েছেন। আবুল হোসেন ভিন্নভাবে, ভিন্ন পথে হাঁটার ক্ষেত্রে নিজেই নিজের প্রেরণা। তাঁর প্রথম দিককার কবিতায় রবীন্দ্র প্রভাব কিছুটা থাকলেও মাত্র আঠারো বছর বয়সে কবিতার বই বের করার সাহসের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ এবং বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রামকিঙ্কর বেইসকে পাওয়া বাঙালি মুসলিম কবির জন্য ছিল অতি দুর্লভ এবং আনন্দের বিষয়ও। প্রথম দিকের কবিতায় উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে বিষণ্নতার সৌন্দর্যও আবিষ্কার করা যাবে। সেখানে সত্যে এবং নতুনত্বের সৌন্দর্য বর্তমান। সেই বর্তমানতার দিকটি হচ্ছে সত্য প্রকাশের জন্য, বিস্ময় প্রকাশের জন্য। ফলে যে শব্দের কারুকাজ তিনি করেছেন তাতে নাগরিক জীবনের আধুনিক মানুষের প্রকাশভঙ্গি প্রকাশিত হতে থাকে। সেই শব্দ যেন প্রতীক। আস্ত এক পরিস্থিতির নবায়ন। অন্ধকার, স্তব্ধতা, উচ্ছ্বাস, নিঃসঙ্গতা, হাহাকার, বিস্ময়, গন্ধ ও রাত্রির ছবি আঁকতে আঁকতে জীবনেরই বিমূর্ত ইশারাগুলো মেলে ধরার চেষ্টা করেছেন কবি প্রতিনিয়ত। 
এই প্রতিনিয়ত বয়ে চলাকে কবি আয়ত্ত করেছেন নিজস্ব ভাবনা ও ভাষাশৈলীর মাধ্যমে। তাই চল্লিশের কবিতায় আবুল হোসেন তুমুল জনপ্রিয় কবিসত্তা না হলেও তিনি আলাদা হয়ে যায় অন্য সকল কবির তুলনায়। 
এই যে, আবুল হোসেন জন্মশতবর্ষে পড়লেন (১৫ আগস্ট ১৯২২-২৯ জুন ২০১৪) এই সময়ে এসে তাঁর সাহিত্য আবার আরো বেশি করে পঠিত হবে। মানে তাঁর চলে যাওয়া মানে যাওয়া নয়, যেন প্রস্থান। সেই কথাই বারেবারে উত্থিত হচ্ছে মনের কোণে। জন্মশতবর্ষের প্রাক্কালে স্মরণ করতে গিয়েই কি তাঁর কবিতা পড়া হচ্ছে? আগে কি পঠিত হতো না!—এমন প্রশ্ন আসতেই পারে অনায়াসে। নিশ্চয় পঠিত হয়েছে তাঁর কবিতা। এখনও হচ্ছে, হয়তো আরো অনেকদিন পঠিত হবে। কিন্তু এটা বলা অমূলক নয় কবিতাকে মুখের ভাষার কাছাকাছি করতে চাইলেও, গণমানুষের কাছাকাছি করতে চেয়েও কবি আবুল হোসেন সেটা সম্ভব করে তুলতে পারেননি, যেটা সেই সময়ে তাঁর অগ্রজ কবিমানস কাজী নজরুল ইসলাম পেরেছিলেন। কিন্তু নাগরিক কবি বলে আবুল হোসেনকে দাগিয়ে দিলে চলবে না। সমাজ ও ইতিহাসসচেতন এই কবির কাব্যভাষের রুচি ও পরিমিতবোধ তাঁকে সৃজনের ক্ষমতার কাছাকাছি সচল রেখেছেন জীবনভর। বাঙালি কবির চিরাচরিত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রুচি নিয়ে হেঁটেছেন তিনি। জাগ্রত রেখেছেন কলম। আবুল হোসেন যখন লিখেছিলেন তখন পাঠক, বলা ভালো কবিসমাজ তাঁকে সমীহ সাগ্রহে বরণ করে নেন। যদিও একটা উপলক্ষ্য কবির জন্য, তাঁর সৃষ্টির জন্য উৎসব শুরু করে তবুও পাঠ বা না পাঠের ভার পাঠক ও সাহিত্যবোদ্ধাদে ওপর বর্তায়। 
কবি আবুল হোসেন সমর সেনকে আদর্শ মনে করতেন। তাই তিনি আমাকে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমি কবি সমর সেনকে খুব পছন্দ করতাম। সমর সেনের কবিতা থেকেই আমি আমার পথ খুঁজে পেয়েছিলাম। তিনি প্রকৃত গদ্যকবিতার পথিকৃৎ। রবীন্দ্রনাথও গদ্যকবিতা লিখেছিলেন, কিন্তু তা কাহিনিনির্ভর। সমর সেন সাম্যবাদী হলেও প্রকৃত রোম্যান্টিক গদ্যকবিতা লিখেছিলেন। আমি সমর সেনের কাছ থেকে এটুকু নিলাম যে, কবিতাকে গদ্যের কাছাকাছি নিয়ে আসতে হবে। আমিও চেয়েছিলাম কবিতার ভাষা মুখের ভাষার দিকে যাবে।’ 
কবিতার কলম যখন আবুল হোসেন সীমিত সময়ের জন্য তুলে নেন তখনকার সময়ে ফিরে তাকালে দেখব, কবিতাকাশে রবীন্দ্রনাথের বিপুল ঐশ্বর্যের মুখোমুখি হয়েও পাঁচ সর্বাধুনিক কবির পদরেখা অঙ্কিত হয়ে ছিল। সেই সময়ে এসে ‘নববসন্ত’ মাত্র আবুল হোসেনের ১৮ বছর বয়সের কাব্যগ্রন্থ ব্যাপক ও বিশাল সাড়া ফেলেছিল। তা তখনকার বাঙালি কবিতার সমাজে হইচই ফেলে দিলেন। তাঁর চল্লিশের দশকের কবিতাভাষ আধুনিক কবিতায় এক ধরনের অভিনবত্ব নিয়ে এসছিল। তবে কবিতার যে মিষ্টিভাষ সেই ভাষকে বিদায় করতে গিয়ে রোম্যান্টিকতাকেও পুরোপুরি বিসর্জন দেননি।
গদ্যের যে দোলা থাকে সেটা সমর সেনের পরে আবুল হোসেন দেখিয়েছেন। তাই বলতে চাইছি, মাপা বিশুদ্ধ ছন্দের প্রতিষ্ঠিত প্রাঙ্গণে গদ্যছন্দের যে মুক্তির স্বাদ আমরা বাংলাদেশের কবিতায় প্রথম আস্বাদন করি তাঁর নাম আবুল হোসেন। আধুনিক কবিতায় নতুন স্বাদ এনে দেন তিনি। বাংলা কবিতায় তাই তাঁর স্মরণ অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। 
একদিকে এজরা পাউন্ডের মতন ছোট ছোট কবিতা অন্যদিকে সমর সেনকে অনুধাবন আবুল হোসেনকে ব্যতিক্রমভাবে দেখি। স্মরণ ও অনুধাবন করলেও নিজস্ব কণ্ঠ সৃষ্টিতে তাকে মোটেও বেগ পেতে হয়নি। যদিও তাঁর প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ও ডব্লিউ বি ইয়েটস। আসলে গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে পাঠকের সামনে সম্পূর্ণ বিপরীত ধারায়, অ-রোম্যান্টিকতাকে বরণ করার মধ্যদিয়ে আবুল হোসেন সমর সেন ও এজরা পাউন্ডের স-গোত্রীয় কিংবা একই ধারার কবি বলে প্রতীয়মান হন আমার কাছে। আবারও বলছি, বারবার বলি, কবিতাকে মানুষের ভাষার অনুবর্তী করে সাধারণ পথের দিকে হেঁটে গেছেন তিনি। মানে শব্দে, ছন্দে, উপমায় তিনি অবিরলভাবে প্রয়োগ করেছেন নিজস্ব সময়ের সমাজবাস্তবতা। এতে তিনি খুঁজে নিয়েছেন আধুনিকতা। ফলে এতে নিজস্ব জগতে প্রবেশের পাশাপাশি কবিতাভাষে আত্মভঙ্গি লালন করেন, লাভও করেন। ফলে এটা বলা যায় কবিতা সৃষ্টিতে তিনি নিজেই নিজের প্রেরণা হয়ে ওঠেন। 
কবিতাকে নিয়ত কবিতায় রূপ দিতে চেয়েছেন। চেয়েছেন সহজ করে বলতে। যে বলায় থাকবে কবিতা, অভিজ্ঞতা এবং স্মৃতির নির্যাস। সেই নির্যাস ও অভিজ্ঞতার পাঠ নানাভাবে নিয়েছি পাঠে, দেখায় এবং পরামর্শে। বিষয় ও ভাষাবৈচিত্র্যে তিনি ছিলেন তুলনারহিত। 
বহুবার বহুভাবে কেবল কবিতার জন্য, বাংলা ভাষার ইতিহাস পাঠের জন্য তাঁর কাছে গিয়েছি। যাওয়ার ফলে নিবিষ্টভাবে তাঁকে দেখেছি, বুঝেছি, হয়েছি ঋণীও। আমাদের অনেক সাহিত্যিক এবং প্রধাণ অগ্রজরাও ঋণী তাঁর কাছে। কারণ, তিনি মুখের ভাষা বা গদ্যের সঙ্গে কবিতার বাকভঙ্গিতে কোনো পার্থক্য করতে চাননি। 
বাংলা কবিতার সমুদ্রে বিশাল একটি তরঙ্গ তিনি। এখনো আছড়ে পড়ছেন আমাদের কবিতায়, কল্পনায়। অঙ্কিত হচ্ছেন আলোকরেখায়। সেই রেখার নামই কবিতা। মহাকালের কি এমন সাধ্য তাঁর কবিতা এবং কবিতাকৃতিকে ছেদন করতে পারে! 

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালঘরের মাঠে পিএসজিকে হারিয়ে এগিয়ে থাকলো ডর্টমুন্ড
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শ্রমিকরাও অংশীদার হবে: এমপি কামাল
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
মোস্তাফিজের শেষ ম্যাচে চেন্নাইয়ের হার
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!