নব্বই দশকের শুরুতে প্যারিসের লা কুপোলে মিলান কুন্দেরা ও তার স্ত্রী ভেরা হারাবানকোভারের সঙ্গে আমি দুপুরের খাবার খেয়েছিলাম। আমাদের আলাপ ফরাসিতে শুরু হলেও ফরাসি ভাষায় আমার ‘অদক্ষতা’ প্রকাশ পাওয়ায় ভেরা আমাদের দোভাষীর ভূমিকা পালন করেন। মিলান তার কমজোরি ‘ইংরেজি’র জন্যও দুঃখ প্রকাশ করলেন। তিনি বললেন, ‘একবার অক্সফোর্ডের একটি সম্মেলনে ভেরাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং আমিও তার সঙ্গে যাচ্ছিলাম, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, ইংরেজি ভাষাটাকে পাকা করানোর জন্য একটা কোর্স করব। কোর্স শেষে আমার ইংরেজি ভালো তো হলোই না, উল্টো কোর্স শিক্ষকের ইংরেজি খারাপ হয়ে গেল, এবং তিনি আমাকে প্রতিজ্ঞা করান যাতে দ্বিতীয়বার কোর্স করতে না আসি।’
কুন্দেরার জন্মভূমি চেকোস্লোভাকিয়ায় তখন কমিউনিজমের পতন হয়ে ভ্যাক্লাভ হ্যাভেল রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কুন্দেরা লাঞ্চের সময় আনন্দের সঙ্গেই এ বিষয়ে কথাবার্তা বলছিলেন।
আমি জানতাম, তার সঙ্গে নির্বাসিত না-হওয়া কিছু চেক ভিন্ন-মতাবলম্বী লেখকের মাঝে ভালো বনিবনা ছিল না। হ্যাভেল এবং ইভান ক্লিমা উভয়ের সঙ্গে তার রগরগে একটা সম্পর্ক ছিল।
মাছ খাওয়ার পর হঠাৎ তিনি হাততালি দিয়ে উঠে বলতে থাকেন, ‘চলুন দু’জন মিলে একটা কাজ করে ফেলি; ভ্যাক্লাভের উদ্দেশ্যে একখানা পোস্টকার্ড লিখি।’
রেস্তোরাঁয় পোস্টকার্ড ছিল। যতদূর মনে পড়ে মিলানের নির্দেশনায় ভেরা সেটা লিখে দিয়েছিল। তারপর আমরা দুজন তাতে স্বাক্ষর করলাম। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ভীতিকর ইতিহাসের কারণে কুন্দেরা নিজে পোস্টকার্ড লিখতে রাজি হননি। আমার স্বাক্ষর তাকে তার আনন্দ, শান্তি ও প্রত্যাশাকে উন্মুক্ত করতে সাহায্য করেছিল।
তবে হ্যাভেল কখনো চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন কি না জানা নেই।
সোর্স : সালমান’স সি অব স্টোরিস
১৭ ডিসেম্বর ২০২১