সাহিত্য বিভাগের আয়োজনে নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কবি ও চিত্রশিল্পী হিম ঋতব্রত। প্রকাশিত বই: নরকের দরজা। ছোটকাগজ কর্মী হিসেবে যুক্ত—অ-কার, উত্তরা এক্সপ্রেস, খড়খড়ি, বিছুটি ও আনশান-এর সঙ্গে।
বাংলা ট্রিবিউন: কোন বিষয় বা অনুভূতি আপনাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে?
হিম ঋতব্রত: সত্যি বলতে নির্দিষ্ট কোনো বিষয় বা অনুভূতি নেই, আশপাশের সকল কিছু নিয়েই তো আমার বসবাস। যখন যা আমাকে টানে তাই লেখার বিষয়ের মধ্যে প্রবেশ করে। অনেক সময় যাকে মূল্যবান ভাবি তা হয়ে যায় প্রচ্ছন্ন আর যাকে তুচ্ছ ভাবি তা হয়ে যায় প্রকট। এজন্য ওই অর্থে আলাদা করে বিশেষ কোনো বিষয় বা অনুভূতি নেই, তবে কোনো মুহূর্তে একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা অনুভূতি মনের ভেতর নাড়া দিলে তা লেখা বা আঁকার জন্য বিশেষ হয়ে ওঠে।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কী ধরনের থিম বা বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
হিম ঋতব্রত: নির্দিষ্ট কোনো থিম বা বিষয় নিয়ে আমার লেখা হয় না। চেতনে অবচেতনে যখন আমি যে বিষয়ে ডুবে থাকি সে বিষয়েই লেখা হয়, তখন থিমও দাঁড়ায় সেই বিষয়ের ওপরেই।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় লেখেন, নাকি ধীরে ধীরে শব্দ সাজান?
হিম ঋতব্রত: আমার মনে হয় লেখায় তাৎক্ষণিক বলে কিছু নেই। তবে একটা মুহূর্ত তো আসেই, যখন লেখা শুরু হয়। কিন্তু যে অনুপ্রেরণাতেই লেখা হোক না কেন, আমার ভেতর তা জারিত হয় বহু সময় ধরে, তারপর হয়ত কোনো এক সময় সেটা লেখা হয়। আর শব্দ সাজানোর গতি ধীর না দ্রুত তা আমি কখনও ঠিকঠাক ঠাওর করতে পারি না। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বোধহয় এমন—যখন মনের ভাবনার গতি যেমন, লেখার গতিও তেমনি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কবিতার ভাষা ও শৈলী কীভাবে বেছে নেন?
হিম ঋতব্রত: প্রত্যেক কবিরই নিজস্ব একটা ভাষা শৈলী থাকে, থাকতে হয়ই। সেটাই তার সাইন। আমার ক্ষেত্রে হয়ত আমি নিজে যেভাবে কথা বলি, ভাবি, যেভাবে নিজেকে প্রকাশ করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি সেভাবেই ভাষাকে নিজের মতো করে বেছে নিই—লেখায় ব্যবহার করি। তবে আমার পরিপার্শ্বও যেভাবে ভাষাকে ব্যবহার করে নিজেকে প্রকাশ করে, সেসবও অবচেতনে আমার ভেতরে জারিত হয়ে আমাকে প্রভাবিত করে।
বাংলা ট্রিবিউন: কোন কোন কবির প্রভাব আপনার লেখায় আছে?
হিম ঋতব্রত: এভাবে ধরে ধরে তো বলতে পারব না, তবে প্রভাব তো আছেই। আসলে মানুষের সমস্ত জীবনটাই কাটে প্রভাবিত হতে হতে। কবিতা লেখার ক্ষেত্রে কেবল অন্য কবির প্রভাব থাকবে ব্যাপারটা আদতে এমনও নয়, এখানে জগতের নানান বিষয়, দর্শন, বোধ ও অনুষঙ্গের প্রভাব আত্ম-উপলব্ধির ভেতর দিয়ে লেখায় আসে। তবে যেহেতু কবিতা নামক একটা কাঠামোতে নিজেকে প্রকাশ করি সেখানে তো অন্যান্য কবিদের প্রভাব আছেই, কিন্তু আলাদা করে কারোর নাম বোধহয় আমি বলতে পারব না।
বাংলা ট্রিবিউন: কথাসাহিত্যের চর্চা করেন? এ চর্চা আপনার কবিতায় কতটুকু প্রভাব রাখে?
হিম ঋতব্রত: হ্যাঁ। কথাসাহিত্য আমার কবিতাকে রিলিফ দেয়। আমার ক্ষেত্রে অদ্ভুত ভাবে একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি—যা কবিতায় বলা যাচ্ছে না, কিন্তু আমার বলতে ইচ্ছা করছে, চেতনে অবচেতনে তা আমার গদ্যের ভেতর জীবন্ত হয়ে উঠছে খুব মানানসই ভাবে। এজন্যই কথাসাহিত্য আমার কবিতাকে স্বস্তি দেয় এই কথাটি বলা।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রথম কবিতার বই সম্পর্কে কিছু বলুন। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?
হিম ঋতব্রত: প্রথম বইটা প্রায় কাছাকাছি ধাঁচের কিছু কবিতা কোলাজ করে হয়েছিল। সব লেখার ভেতরেই তো এক প্রকার আনন্দ, আকর্ষণ ও উত্তেজনা থাকেই। সেগুলো লেখার ক্ষেত্রেও তেমনই ঘটেছিল। তবে প্রথম বই প্রকাশের ব্যাপারে দারুণ একটা রোমাঞ্চ ছিল, পাণ্ডুলিপি গোছানো, সম্পাদনা করার সেই ঘোরগ্রস্ত সময় খুবই চমৎকার ছিল।
বাংলা ট্রিবিউন: সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ঘটনা কি আপনার কবিতায় প্রভাব ফেলে? যদি ফেলে, তবে কীভাবে তা প্রকাশিত হয়?
হিম ঋতব্রত: এই প্রভাব তো প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রেই পড়ে। সেই প্রভাব আমার ভেতরেও পড়ে নিশ্চয়ই। নরমালি, অন্যান্য বিষয়ের মতো সেগুলোও নানাভাবে লেখায় আসে।
বাংলা ট্রিবিউন: পাঠকদের মন্তব্য আপনার লেখায় কোনো পরিবর্তন আনে?
হিম ঋতব্রত: লেখা নিয়ে যেকোনো যৌক্তিক মন্তব্যই আমাকে ভাবায়। যা হয়ত একসময় পরিবর্তনও আনে। কিন্তু সেটাও নির্ভর করে মন্তব্যকে আমি কতটা গ্রহণ বা বর্জন করছি তার ওপর।
বাংলা ট্রিবিউন: পাঠকদের মন্তব্য আপনার লেখায় কোনো পরিবর্তন আনে?
হিম ঋতব্রত: নতুনের দিকেই তো আমাদের সকলের যাত্রা। এই ভাঙা গড়ার খেলাটাই আসলে জীবন্ত রাখে সৃষ্টি ও স্রষ্টাকে।