সাহিত্য বিভাগের নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কবি কায়েস মাহমুদ। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: "তুমি গান হও, শুনি"।
বাংলা ট্রিবিউন: কোন বিষয় বা অনুভূতি আপনাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে?
কায়েস মাহমুদ: এটা তো আসলে নির্দিষ্ট ভাবে বলা যায় না। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় 'স্ট্রাইক' করে। এই স্ট্রাইক করা সব সময় বস্তুনিরপেক্ষ হয় তেমনও নয়।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কী ধরনের থিম বা বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
কায়েস মাহমুদ: যা কিছু এসে পড়ে তাই। যার ভেতরে আমরা বেঁচে আছি। নিজের যে দর্শন রয়েছে তা বলে যাই।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় লেখেন, নাকি ধীরে ধীরে শব্দ সাজান?
কায়েস মাহমুদ: আমি বলব তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণার পুনর্বিন্যাস করি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কবিতার ভাষা ও শৈলী কীভাবে বেছে নেন?
কায়েস মাহমুদ: এটা একেক সময় একেক ভাবে রয়। তবে আমি সম্ভবত অনেকটাই ইউরোপ প্রভাবিত। ব্রিটিশ সাহিত্যের প্রভাব অস্বীকার করব না।
বাংলা ট্রিবিউন: কোন কোন কবির প্রভাব আপনার লেখায় আছে?
কায়েস মাহমুদ: এটা আসলে কঠিন প্রশ্ন। এখন হয়ত সব নাম মাথায়ও আসবে না। দাঁড়ান মনে করি—এলেন পো, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কিটস, রবীন্দ্রনাথ, নেরুদা, বিনয় মজুমদার, শেকসপিয়ার, লোর্কা আরো অনেকের নাম বলা যায়। আরেকজনের নাম বলতে হয় যদিও তিনি কবি নন—মার্কেজ। আমরা সবাই বহু মানুষের দ্বারা প্রভাবিত হই আসলে। আমি তো এলাকার বাচ্চাদের দ্বারাও প্রভাবিত হই।
বাংলা ট্রিবিউন: কথাসাহিত্যের চর্চা করেন? এ চর্চা আপনার কবিতায় কতটুকু প্রভাব রাখে?
কায়েস মাহমুদ: কথাসাহিত্যের মূলত আমি পাঠক। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে একাডেমিক জায়গা থেকেও কিছু কাজের ব্যাপার তো আছে। তবে আমি বলব আমার কাজ করা হয় মূলত নন-ফিকশনে। মৌলিক এবং অনুবাদ। ছোটগল্প লিখেছি কিছু। সংখ্যায় খুব বেশি নয়। তবে কথা সাহিত্যে কাজ করতে চাই। বিশেষত ইতিহাস নির্ভর কাজ।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রথম কবিতার বই সম্পর্কে কিছু বলুন। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?
কায়েস মাহমুদ: একেবারে প্রথম? সেটা না বলি। নিজের কবিতা নিয়ে সিরিয়াস হওয়ার পর প্রথম বইটা নিয়ে বলি বরং। এই বইটার নাম "তুমি গান হও, শুনি"। সাহিত্যে, চিন্তায় আমি বিরতিহীন যাত্রার পক্ষপাতী। ভ্রমণকারী যেমন লিখে রাখেন প্রায়শই অভিজ্ঞতা এবং বিবরণ, কবিতা তেমনই এক ভ্রমণকথা আমার কাছে। চিন্তার ক্রমশ রূপান্তরের সাথে কবিতা বদলায়, ভাষা ও বিষয় বদলায়। “তুমি গান হও, শুনি” ঠিক সেই মুহূর্তে আমার চিন্তার সংকলন। পাঁচ বছর চিন্তা এমনই থাকবে কিনা আমি জানি না। সাহিত্যে, দর্শনে চিন্তার গতি প্রবহমান মেঘনার চেয়েও বেশি। তবে এই তো, ঐ মুহূর্তে ঐ বইটা ছিল আমার চিন্তার সংকলন।
বাংলা ট্রিবিউন: সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ঘটনা কি আপনার কবিতায় প্রভাব ফেলে? যদি ফেলে, তবে কীভাবে তা প্রকাশিত হয়?
কায়েস মাহমুদ: দেখুন আমি বলব মানুষ পুরোদস্তুর রাজনৈতিক প্রাণী। কেবল মার্ক্স লেনিনের ছাত্র বলে নয়, সমাজে যেহেতু থাকি— সামাজিক সাংস্কৃতিক সব ঘটনাবলি নিয়েই আমার রাজনীতি, আমার দর্শন। কবিতা তারই প্রকাশ। আমি মূলত চিন্তাকে সবকিছুর উপরে স্থান দেই। ক্রাফট হিসেবে কবিতা তেমন মুখ্য না আমার কাছে। এবারে ঘটনাবলির প্রভাব প্রকাশ তো পড়বেই। এই যে জুলাই আগস্ট গেল, এত হত্যার প্রকাশ সেই সময়ের কবিতায় আসবে না?
বাংলা ট্রিবিউন: পাঠকদের মন্তব্য আপনার লেখায় কোনো পরিবর্তন আনে?
কায়েস মাহমুদ: একেবারে আনে না আবার প্রচণ্ড আনে দু'টো বললেই মিথ্যা বলা হবে। চিন্তা তো ক্রমশ বিকশিত হতেই থাকে।
বাংলা ট্রিবিউন: ভবিষ্যতে কী ধরনের কবিতা লিখতে চান? নতুন কোনো ধারা বা শৈলীতে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?
কায়েস মাহমুদ: সম্ভবত ইংরেজি কবিতায় আরো কিছুটা সময় দিতে চাই। গানেও কিছুটা। বাদবাকি থাকে সময়, সময়টাকে লিখে যেতে চাই। এইতো।