১
পরথমে তালাক লয়ো তোমারে ভরসা করি তাই
ঝিঙার ফুলের মতো মুখে আজ ফুটেছে জোবান
খোয়াজ, খাজার নামে পিরিতের মিঠুরি চড়াই
আঞ্চল বিছায়া ধরো, এই লও মোহরের দান।
পরথমে তালাক লয়ো গলায় পিন্ধিয়া লয়ো হার
কানেতে পিন্ধিও বিবি বেহেশতি জেউর, গুড়াকেশে
অলকানন্দার ফুল। ঘরের কেউড় ভেঙে কার
উঠানে গিয়া দাঁড়ায়াছ, চৌকাঠ ভাঙো ফিরে এসে।
আইসো বিবি হাওয়ার সুরতে, উপরে নীলা আসমান
নিচে জমিন যদি সত্য হয়, তয় আমি আদম-
সুরত পাঁজড়া ভাঙিয়া দিমু কাবিনের সুয়াচান
উড়ায়া শখের কইতর বেহেশতি গালিচা নরম।
মোতিহারা ঘর-দোর যদি অন্ধ হয়া যায়, যাক
আঞ্চল বিছায়া ধরো, এই লও পরথম তালাক।
২
মোতিহারা ঘর দোর অন্ধ হয়া যায় যদি, যাক!
নিভায়া থমু সাঁঝের বাতি ভাঙা চিমনির লণ্ঠন,
একখান পিতলের কুপি। যদি জ্বলে বন্য জোনাক
তারেও পাকড়াও করে ঢাইকা থমু সেজের গড়ন।
যদি জ্বলে পুন্নমাসী চান, জ্বলে রঙিলা সেতারা,
জ্বলে আলেয়া কয়বরের থন নিবিনিবি বাতির
লাহান; পড়নের কাপড় দিয়া ঢাইকা থমু। সারা
রাইত আন্ধারে আন্ধারে যাক মোতিহারা নীড়।
কিন্তু যদি জ্বইলা উঠে বুক, বুকের ভিতরে এক
মরদের কঠিন পরান, তয় কোন্ পর্দা দিয়া
তারে চাপা দিমু? আচানক ছারখার, য্যান পেত্যেক
অঙ্গ পোড়ে হেঁদুর শশ্মান-ঘাটে লেলিহান পিয়া।
জ্বলে যদি জ্বলে বিবি মরদের কঠিন পরান
জগতে নিদান নাই, যায় না যে ও চিজ নেভান।
৩
আসমানে উঠায়া লও আছে যতো আসমানের বালা,
জমিনে দাবায়া দেও জমিনের যতো মুসিবত!
ফোঁড়ার ঘাওয়ের মতো পিরিতের সুকঠিন জ্বালা
দিও না আল্লাজি; ও বিমারী সইবার নাই হিম্মত।
আইয়ুব নবিরে য্যান দিছিলা পচন সারা গা'য়
দিছিলা তেমন তাঁরে খেযমতের পাখি পিঞ্জরাতে;
আমার রহিমা বিবি সোয়ামির ঘর ছাড়ি যায়
আমারে পচন দিলে খোদার গজব কইবো সাতে।
গজবের ডর লাগে, পিরিতেরও ডর লাগে বড়ো
অথচ চিনি না তারে দু’দিনের বেশি ‘এক’ দিন
সুরুয নাহক হয়, চান্দের হিসাব করি জড়ো
পঞ্জিকা মেইল্যা দেখি কতো সাল, হয় না একিন!
দিলের জখম হলে ভিতরে ভিতরে চলে ক্ষয়
বদ্যি বোঝে না আগাগোঁড়া, মাইনসে নানান কথা কয়।
৪
দিলের জখম হলে ভিতরে ভিতরে চলে ক্ষয়
বদ্যি বোঝে না আগাগোঁড়া মাইনসে নানান কথা কয়।
তুমিও কি বোঝ বিবি ঘাসের শিশিরে তহমত
তয় ক্যান আসমানে তাকায় থাকো, হরবোলা পাখির
লাহান করো এমন আনচান! কিসের কৈফিয়ত
চাও, তোমারে কি বাসি নাই ভালো? কসম নবির।
কতো রাজা করে গেলো কতো রণে জয় পরাজয়
অজেয় একখান রাজ্য সেই বড় নারীর হৃদয়।
বিষের বিষাণ বাজে হোনা যায় দুন্দুভির রব
যে গরুর ঘর পোড়ে সেই চেনে সিঁদুরের মেঘ!
আমি তো চিনিনি আগে তাই আইজ এমন তাজ্জব
তোমার মেঘের মাঝে কেবলই বিলীন করা বেগ।
চান্দেরও কলঙ্ক আছে তাও চান সোনায় সোহাগা
মাইনসের কলঙ্ক দোষ, মাইনসের কলঙ্কে লাগে দাগা।
৫
খোয়াবের দেশের থন আসে ওই মেউয়া সুন্দরী
বিষলক্ষ্যার ছুরি লয়া দরাজ দরিয়া কাটতে চায়
লাল-সিয়া। আইসো ভাউ মুসার বেত্তান্ত মনে করি
লাঠির আঘাতে যিনি অকূলে পথের খোঁজ পায়।
দরিয়া জানে না খোদ তার মাঝে আছে কত পথ
অথচ বনি-আদম ডুইব্যা মরে পানির তরাসে!
তয় কি ডুবন দশা মাঝ গাঙে ফেরুনের রথ!
পাড়েতে খাঁড়ায় আছিন দূর হইতে চিক্কুর আসে।
মানুষ মরে না সহজে কই মাছে লাগে এলজাম
দরিয়া কাটতে অইলে হিম্মত লাগে, আর লাগে ভেজা
চান্দের একফালি ধারাল জোছনা। খোয়াবের নাম
করি, কী লাভ, কিংবা বয়ান করি মুসার মুযেজা।
যে মন পিরিতি জানে সেই জানে এতো রেষারেষি,
মানুষ মইরা পঁচে আর জিন্দা পঁচে তার চাইতে বেশি।