X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

অগণন জিজ্ঞাসা, জিঘাংসা ও চোরাবালি

সুবন্ত যায়েদ
২৪ মে ২০১৯, ০৯:০০আপডেট : ২৪ মে ২০১৯, ০৯:০০

অগণন জিজ্ঞাসা, জিঘাংসা ও চোরাবালি

প্রথমত তিনি আমাদের সামনে এলেন ‘বিষণ্ণতার সম্রাজ্ঞী’ পরিচয়ে। অথচ তিনি মঞ্চ কাঁপিয়ে অভিনয় করতে জানেন। অভিনয় করতে করতে খুব কাচা বয়সে মৃত্যুর কৌশল রপ্ত করে নিতে পারেন। আমাদের কাছে এই চরিত্র অনন্তের মতো, কিংবা জলের মতো, যে কিনা স্রোত ও বাতাসের সাথে ঘুরে ঘুরে আসে। ঘুরে ঘুরে আসে মূলত বিবিধ বিষণ্নতার চরিত্র বিনির্মাণ করতে। ঠিক পুরাতনের মতো স্বরে এমনি এক নতুন বিনির্মাণের গল্প আমাদের সামনে আসে। এই চরিত্র প্রধানত সন্ধ্যায় আমার দেহে হাওয়া জোগায়। এসব হাওয়া আসলে কী?

এসব হাওয়া মূলত জীবাণুর মতো বিবিধ বৈধ উস্কানি।

এসব হাওয়া মূলত দেহাতীতভাবে কোনো মনের অতৃপ্তির বার্তা।

এসব হাওয়া মূলত বিগত সত্তা, বিষণ্নভাবে যে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ফিরে আসে।

সুতরাং তেমন এক সন্ধ্যাকালীন মঞ্চে আমি মীনা কুমারীকে খুব আপন চোখে দেখি। শুনুন প্রিয় আমার, আপনাকে নিয়ে আরো একদিন সন্ধ্যা কাটিয়েছিলাম। সে সন্ধ্যা অন্ধকার ছিলো! আপনার গভীর মনে ছিলো আরো নিগুঢ় অন্ধকার। একবার মনে হলো যে, আমি ঠাঁয় পেলাম আরো অগণন অন্ধকারের ভেতর দিয়ে তাকিয়ে, আপনার মনের ভেতরের অন্ধকারে। অন্ধকার তখন বিন্দু বিন্দু আলোর মতো। আপনি বলছিলেন, এটা হলো নক্ষত্রের রাত। মূলত আরো প্রগাঢ় অন্ধকারের রাত। আপনি কি নত হলেন তখন, দীর্ঘ এক মঞ্চে জেগে ওঠার আগে! মঞ্চের মাপজোক নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকে গিয়েছিলো। কারণ ঠিক মতো আলো পড়ে না চতুর্দিকে। মঞ্চের ভেতরে এতো গুপ্তকোনা, সেখানে অন্ধকার জমে থাকে। আপনি কৌশলী অভিনয়ে সে অন্ধকারের দিকে ছোটেন। হা, শান্তি নিয়ে মঞ্চে কলহ হয়, তুলকালাম কাণ্ড হয়। আপনি জানেন না মঞ্চে কোন স্তরের শান্তি তখন স্থাপিত হয়। সেদিন কি প্রথম নাকি তারও আগে, নুসরাত জাহান রাফি আপনার চরিত্রে মজ্জাগত হয়ে যায়! আপনার মনের অন্ধকারে তখন নক্ষত্রেরা দূর অতীতে আরো অন্ধকারের প্রগাঢ়তা দেখায়। শান্তি নিয়ে কথা ওঠে আরও।

শান্তি শান্তি, শান্তি চাওয়া হলো।

এতো শান্তি চাওয়া হলো পৃথিবীতে, এতো শান্তি চাওয়া হলো কেনো?

মীনা কুমারী, আপনি আর মঞ্চে শান্তি চাইবেন না। চাইবেন না কারণ, এরচেয়ে দুর্বলতম আর কোনো চাওয়া হয় না। অথচ সকল যুদ্ধের পরে, দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠার চুক্তি সাক্ষরিত হয়।

নুসরাত জাহান রাফি, ওরফে মীনা কুমারী, আপনি মঞ্চের বাইরে তাকান। সেখানে এক দীর্ঘ গ্যালারী, সেখানে অন্ধকার, সে অন্ধকারে লুকোনো থাকে কী? আপনি সে অন্ধকারের দিকে মগ্ন হয়ে তাকান। মগ্নতা কিঞ্চিত আলো দিতে পারে ডোবানোর আগে। কিন্তু অনিবার্যভাবে আপনি ডুববেন। তারপর জেগে উঠবেন তেমন এক অন্ধকারের আশ্রয়ে। আপনি মঞ্চে তাকিয়ে দেখবেন, নুসরাত জাহান রাফি মঞ্চের অধিক আলোর ভেতরেও কিঞ্চিৎ অন্ধকারের আশ্রয়ে চরিত্র বিনির্মাণ করে। সেইসব মুহূর্তে পৃথিবীতে আরো অধিক সফলতা আসে মানুষের! নুসরাত জাহান রাফি ভীষণ অন্ধকারে চরিত্র বিনির্মাণ করতে করতে সেসব সফলতা দেখে। দেখে যে, সেদিন প্রথম বিজ্ঞানীরা কৃষ্ণগহ্ববের ছবি তুলতে সক্ষম হয়। এবং সে ছবি অন্তর্জালে ছড়িয়ে গেলে নুসরাত জাহান রাফি চারিদিকে কৃষ্ণগহ্ববের ছবি দেখে। এতো অন্ধকার এই গহ্বর, কিন্তু গহ্ববের গোলাকার মুখে অগণন আলোক বিন্দু ছড়িয়ে আছে কেন? এইসব বোধ হয় একেকটা আলোজ্বলা নক্ষত্র, কৃষ্ণগহ্বর তার অন্ধকারের ক্ষুধায় যাবতীয় আলোকবিন্দুর উপর লোভাতুর হয়। নুসরাত জাহান রাফি ওরফে মীনা কুমারীর সুস্থির বোধ হয়! তার বুকের মাঝ বরাবর আর চিন্তার ঘাম গড়িয়ে পড়ে না। তারা আদতেই তখন সুস্থির বোধ করে, কারণ তাদের এই বিশ্বাস আস্থা হয়ে দেখা দেয় যে, কৃষ্ণগহ্বর শুধু আলোজ্বলা নক্ষত্র গিলে খায়। আর পৃথিবী কোনো আলোজ্বলা নক্ষত্র নয়। এখানে উৎপাদন হয় গভীর ও অসহযোগ অন্ধকার। পৃথিবী টিকে যাবে তবে অন্ধকারের মাহাত্ম্যসমেত।

সুতরাং আপনার দারস্থ হয়েছি আমি, কিংবা আমরা অগণন মানুষ অগণন প্রশ্ন নিয়ে। সে বিষয়ে অথবা বিবিধ বিষয়ে আপনিও বলুন, মিস্টার জুলিয়ান এস্যাঞ্জ! আপনি ক্রমশ শুভ্র ও পবিত্র ঘরানার চেহারার অধিকারী হয়েছেন। আপনার উপরে অজস্র শান্তি ঝরে পড়ুক। আপনি যেন ঈশ্বরের বাণীপুষ্ট দূত! আপনি মহাপবিত্র ‘ইউকিলিকস’ প্রাপ্ত হয়েছেন। আপনার উপরে আবারো শান্তি বর্ষিত হোক। পুনঃপুনঃ শান্তি বর্ষিত হোক। তখন নুসরাত জাহান রাফি আরো শুভ্রতার দিকে নিবিষ্ট হয়, বলে যে, আপনার পবিত্র গ্রন্থে আমাকে নিয়ে কেমন বার্তা অবতীর্ণ হয়? কিংবা বলুন, আমাকে নিয়ে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তগুলো কেমন হতে পারে বলে আপনার গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়েছে?

এইসব শব্দ অনন্তকাল ধরে ঘুরে যায়। কিছু মুখ ঘুরে যায় না তবু, কিছু মুখ সামান্য বেপথু হয় না তবু, তবু, তবু কিছু মুখ আগুনজ্বলা শুভ্রতার ভেতরে থেকে যায়! নুসরাত জাহান রাফি আরো নত হয় এমনতর শুভ্রতার দিকে। জানুন তবে, মহামান্য জুলিয়ান এসাঞ্জ, আপনার এবং আপনার গ্রন্থ ‘উইকিলিকস’-এর অনুগামী চরিত্র পৃথিবীতে ছড়ানো। তারা সংখ্যায় অগণন এবং আপনার উপরে তাদের অগাধ বিশ্বাস স্থাপিত হয়েছে। তবু আপনি আজ গুটিকয়েকের কাছে বিপন্নবোধ করেন। এই গুটিকয়েক ‘চরিত্রপাঠ’ জানে না কিছুর। তারা বাহু চেনে এবং বাহুসম্পর্কিত চেতনা জানে। এইসব চেতনার অবাণিজ্যিক বাজার ধরে বাণিজ্যিকীকরণ কৌশল জানে। এই সমস্ত বিষয়ে নিশ্চয় আপনার ‘উইকিলিকস’এ বর্ণনা থাকে। সুতরাং তারা আপনার গ্রন্থ মুছে দিতে চায় আর আপনার উপর আরোপ করে অগাধ শাস্তি। আপনি বিপন্নবোধ করেন, নাকি আপনি আরো উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেন? কিন্তু আপনার অনুসারীরা বিপন্নবোধ করে। হয়ত তারা কোনো সান্ত্বনা প্রকল্প মেলে ধরে যে, বার্তাবাহী দূতেদের সর্বকালে নিগৃহীত হতে হয়েছে। আপনি বরং আরো সতর্ক করুন। কল্যাণকে ব্যবচ্ছেদ করে যদি কেউ সুন্দরের দিকে ফেরে, পবিত্র ‘উইকিলিকস’এ তাদের নিয়ে বর্ণিত মঙ্গলময় বাণী পাঠ করুন।

ক্ষমতা কাঠামোর আগ্রাসন কি?

ছলনার পিঠে ভর দেয়া সভ্যতা কি?

মানবের মানবতাবিরোধী কর্মসূচি কি?

মহামান্য জুলিয়ান এসাঞ্জ, আপনার পবিত্র গ্রন্থে এসমস্ত সবিস্তারে বর্ণিত হয় আপামর মানুষের জন্য সতর্কতাস্বরূপ। এবং তাদের জন্যও সতর্কতাস্বরূপ, যে সমস্ত মানব তাদের গোপনে লুকিয়ে রাখে অসংখ্য মৃত্যুপ্রকল্পের দ্রব্যাদি।

নুসরাত জাহান রাফি ওরফে মিনা কুমারীর সমুখে মঞ্চ আরো বিস্তৃত হয়। সেখানে কোনো এক মৌসুমে কিঞ্চিত আলো প্রতিফলিত হয়। এখানে নগর উঠেছে। ওইখানে গ্রাম আরো অনেক গ্রামকে ছাড়িয়ে গেছে। এই সমস্ত নগরে ও গ্রামে হঠাৎ পিস্তলমার্কা বাঁশি অনন্যসাধারণ মানুষের প্রিয়তা পায়। তারা দৃপ্ত পায়ে হাঁটে এবং আক্রোশ ছড়িয়ে কথা কয়। আর ঘন ঘন পিস্তলমার্কা বাঁশি ফোঁকে। তাদের একেকটা বাঁশির ফুৎকারে একেকটা মরণঘাতি গুলির অর্থ লুকোনো থাকে। নুসরাত জাহান রাফি অসংখ্য গুলির ভেতর দিয়ে হাঁটে। তার জীবন বুঝি কোথাও পৌঁছবার বাকি থাকে। জীবনের সমানুপাতিক গন্তব্য হলে চরিত্ররা তবে কোথায় পৌঁছায়? তবু জীবন বুঝি কোথাও পৌঁছবার থাকে। কিন্তু পথিমধ্যে এখানে কারা থাকে? তাদের হাতে এতো এতো পিস্তলমার্কা বাঁশি! শরীর হীম হয়ে গেলে কিঞ্চিত জলের উষ্ণতার প্রয়োজন লাগে। সে জল শুধু চুয়ে পড়ে দেহ বেয়ে। কিন্তু তার কণ্ঠে ঘোরে জলের বদৌলতে আলো। অনেক আলো গিলে ফেলা গলা তার জনকের দিকে ফেরে। হা, আপনি জনক, আপনি আমার জনক। কিন্তু সেখানে আদতে অন্ধকার হা হয়ে থাকে।

আপনি জনক, আপনি জনক, লুকিয়ে হলেও একটি নক্ষত্র এনে দিন। আলোজ্বলা নক্ষত্র। ক্রমশ কৃষ্ণগহ্বর যে কাছে আসে। আমি লোভাতুর গহ্বরের দিকে একটি নক্ষত্র ছুড়ে দেবো। লুকিয়ে হলেও আমাকে একটি নক্ষত্র এনে দিন।

আধুনিক রাষ্ট্রে ‘মানবের জন্য কল্যাণ’ এই শিরোনামে অনেক শক্তির ভাগবাটোয়ারা হয় চিরায়তভাবে। নুসরাত জাহান রাফি এইসব শক্তি প্রদত্ত জ্ঞান নিয়ে মঞ্চের আরো নিগূঢ় অন্ধকারে মুখ গুঁজে থাকে। আরো অসংখ্য হাস্যজ্জ্বল মৃতের মুখ দেখে আন্ধকারে। তখন মৃতের মুখে কালো ডাকটিকিট সাঁটিয়ে দিয়ে মূলত কী ঘোষণা প্রচারিত হয়?

একে পাঠানো গেলো জন্মান্তরে!

আপনার নাম মুছে দেয়া গেলো জীবিতের বাস্তবতা থেকে!

আপনি এখন কাঙ্খিত নির্বাসন পেলেন!

আপনি এবার আসুন, আপনি এবার আসুন, সবাই চাইছে।

আপনি অবশেষে কালো ডাকটিকেটের সম্মানিত নবনিযুক্ত সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলেন, কিন্তু অভিনন্দিত হলেন না।

অবশেষে, আপনি আর ফিরবেন না। রাষ্ট্রের চিরায়ত শক্তি আপনাকে কালো ডাকটিকেটে পাঠাতে পারে, ফেরাতে পারে না। সুতরাং আপনি আসুন।

আপনার ওয়ান টাইম দরজায় চিরতরে পেরেক ঠোকা হলো। পারলে জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস রাখুন। নয়ত আপনি মূলত অবিশ্বাস করুন ইহকালকে।

চারপাশে এতো হা করা মানুষ, মীনা কুমারীর তবু দেহ টলে না তখন। তার চরিত্র বিনির্মাণে আছে মূলত নুসরাত জাহান রাফি। সুতরাং নুসরাত জাহান রাফি পিস্তলমার্কা বাঁশির শহর ও গ্রাম ছাড়ায়ে আসে তার ক্ষয়ে যাওয়া দেহ বারবার পুনঃনির্মাণ করতে করতে। তবে এই শহর মধ্যরাত হয়ে থাকে এক মহাকাল সমান। নুসরাত জাহান রাফি কোনো এককালে ঢাকা নগরীর নাম শোনে। কিন্তু সেখানে দীর্ঘস্থায়ীভাবে মধ্যরাত কেনো জেগে থাকে? এ এক আশ্চর্য ম্যাজিক। একা একটি শহর কীভাবে এমন এক ম্যাজিক রপ্ত করে নিতে পারে! এই ম্যাজিকের শহরের মানুষ স্বভাবগতভাবে ম্যাজিক তার সত্তায় ধারণ করে বাঁচে। কিন্তু নুসরাত জাহান রাফি দীর্ঘস্থায়ী মধ্যরাতে এ শহরে যে সমস্ত ম্যাজিক নেমে আসতে দেখে...

এই শহর মধ্যরাতে সবুজ একটি হরিণের অবতরণ ঘটায়। আর হরিণটি কালো পিচ রাস্তায় গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে হাঁটে। আদতে সে খোঁজে সবুজ ঘাস। হরিণটি নিজের দেহের সবুজ দেখে স্মৃতিকাতর হয়, কিংবা ততগুণ লোভাতুর হয়। তার কল্পনার চোখে শহরের পিচ ফেটে অজস্র সবুজ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু শহর এই ম্যাজিক প্রয়োগের পদ্ধতি জানে না। শহর এই পদ্ধতি প্রয়োগে সফলতা লাভ করে যে, হরিণের দেহের সমস্ত সবুজ তারা মুছে দেয়। যাতে হরিণের নৈকট্যে চলে আসে কালো, শহরের শোভামণ্ডিত যাবতীয় কালো।

নুসরাত জাহান রাফি আরো দেখে, আগুন থেকে নিরাপদ থাকার কিছু উপায় চিহ্নিতকরণ সংবলিত লিফলেট, যেগুলো হঠাৎ এক হাওয়ায় তার পায়ের উপরে এসে পড়ে। সে দ্বিধাগ্রস্ত হয় এসব বাণিজ্যিক এবং উড়ো লিফলেট নিয়ে। তবু একটি সে তুলে নেয়, যত্ন করে ধুলো ঝাড়ে। তারপর রপ্ত করবে বলে চোখের সামনে তুলে ধরে...

মনে করুন, আপনি হঠাৎ প্রাচীন এক শহরে এসে পড়লেন। যে শহরে জীবনের উপাদানের চেয়ে মৃত্যুর উপাদান অধিক হারে উৎপাদন হয়। তবু, সে শহরেই বেঁচে থাকার অপার সুযোগ পেয়ে যান যদি, আপনি প্রথমত আগুন থেকে রক্ষা পেতে কিছু কৌশল রপ্ত করুন।

কিন্তু মীনা কুমারী বিপরীত আয়োজন দেখে মঞ্চে, দেখে যে, আগুন লুকোনো লোকগুলো যারা আগুন থেকে রক্ষা পেতে কৌশল রপ্ত করায়, তাদের কাছে লুকিয়ে আছে পুড়িয়ে দেবার আরো দৃঢ় কৌশল! তার মনে হয়, এটা এক দারুণ গেইম যেটা সম্ভবত মানুষ আদিকাল থেকে রপ্ত করে নাই। বরং মানুষ আধুনিকতার ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে, ক্রমশ সভ্য হয়ে উঠতে উঠতে এসব খেলা রপ্ত করেছে! মহামান্য জুলিয়ান এস্যাঞ্জ তার পবিত্র গ্রন্থ ‘উইকিলিকস’ থেকে কিছু বাণী আওড়ান এই খেলা বিষয়ে যে, এই খেলার বিস্তার ঘটিয়েছে প্রধাণত রাষ্ট্র, এবং রাষ্ট্রই এ খেলার বড় পৃষ্ঠপোষক। সুতরাং মানুষেরা, তোমরা এই প্রশ্ন কোরো না যে, রাষ্ট্র কতোটা মানবিক। আদতে রাষ্ট্র কতোটা মানবিক, এই প্রশ্ন তখন যুক্তিযুক্ত হতো, যখন রাষ্ট্রের ‘পোড়ানো’র কৌশল থেকে ‘রক্ষা’র কৌশল সুদৃঢ় হতো। সুতরাং এইসব লিফলেট মূলত ছল ও তামাশা। সুতরাং এইসব ছিঁড়ে ফেলো। কিংবা বিপরীত পাতায় লিখে দাও যে, রাষ্ট্রজিজ্ঞাসার পথে আসুন, মানবমুক্তির এই হলো পথ। কিংবা তোমরা রাষ্ট্রীয় মুখোশের দিকে ইশারা করে কিছু কথা লিখে দাও, যেসব কথা মানুষের বোধগম্য হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, ‘রাষ্ট্রের সবচে বৃহৎ ও বিভৎস অঙ্গের নাম হলো ‘গাল’। রাষ্ট্রের মস্ত হা করা একখান গাল, সেই গাল বেয়ে প্রতিনিয়ত অজস্র প্রতিশ্রুতি উপচে পড়ে।’ অথবা কাউকে প্রশ্ন করতে বলুন, প্রতিদিন একবার হলেও প্রশ্ন করতে বলুন যে, যখন ভীষণ অন্ধকার জমতে দেখেন আকাশে, তখন কীসের কথা প্রথমত আপনার মনে পড়ে? আপনি বলুন, একটি উত্তর-ই বলুন যে, প্রথমত রাষ্ট্র, দ্বিতীয়ত রাষ্ট্র, তৃতীয়ত রাষ্ট্র, আমার রাষ্ট্রের কথা মনে পড়ে।

মহামান্য জুলিয়ান এসাঞ্জ এসব বাণী আওড়ান পবিত্র উইকিলিকসের অনুসরণে, তিনি এসব বাণী বলেন মূলত মীনা কুমারী কিংবা নুসরাত জাহান রাফিদেরকে। মীনা কুমারী এইসব বাণী দ্বারা কিঞ্চিৎ অনুপ্রাণিত হয় বটে, সে তখন জুলিয়ান এসাঞ্জের মতোই ভাবতে শিখবে বলে প্র্যাকটিসের কথা ভাবে। সম্ভবত এই প্র্যাক্টিস তার কিছু অবনমিত চোখ খুলে দেয়, সে অনুভব করে, রাষ্ট্র মূলতই একটা বৃহৎ চোরাবালি, সেখানে তার মাথাটাও আটকে গেছে আরো অসংখ্য মাথার সাথে। তখন সে মঞ্চে আরো নিবিড়ভাবে মনস্থির করে এবং দেখে, এই শহরের দীর্ঘস্থায়ী মধ্যরাতও একটি রাষ্ট্রীয় চোরাবালি। নুসরাত জাহান রাফি ওরফে মীনা কুমারী আরো এক শহরের রাতের কথা ভাবে। সম্ভবত মধ্যরাত হলেই রাতের থিয়েটার থেকে মুখোশ পরা অভিনেতারা রাতের শহরে ছড়িয়ে পড়ে। তারা দেখে হলুদ আলোয় রেলিংয়ে বসে থাকা বিষণ্ন পেঁচা। তারা ভাবে, রাতের শহরের রাস্তার মতো উন্মুক্ত আর মঞ্চ হয় না। তারা আরো দেখে ভেঙে যাওয়া ম্যানিকিনের মুখ। টোকাই বালকের ব্যাগে চলে যাওয়া তার আধখানা হাতের কোনো সম্মোহন শক্তি ছিলো না। মীনা কুমারী এটা জানে যে, রাতের এই উন্মুক্ত মঞ্চ দীর্ঘ হয়, আরো দীর্ঘ হয়, কিন্তু দীর্ঘতর হয় না। সম্ভবত মৃত্যুর দেবি আসে, সম্ভবত প্রেমের দেবির মতো মৃত্যুর দেবীও অন্ধ হয়। সুতরাং মৃত্যুর দেবী এসে শহরের সমস্ত রাস্তা চষে বেড়ায়। আপনি দেখবেন ভোরের উদয়কালে, কিঞ্চিৎ আলো ছড়িয়ে গেলে, সেসব অভিনেতাদের মুখোশ কিংবা ম্যানিকিনের ভাঙা মাথা, কিংবা বিষণ্ন স্থবির পেঁচা, এসব আবিষ্কার করবেন সকালের গলিত ডাস্টবিনে। নুসরাত জাহান রাফি ওরফে মীনা কুমারী ভাবে যে, ম্যানিকিনের হাতের মতো, কিংবা স্থবির প্যাঁচার মতো, কিংবা রাতের থিয়েটার থেকে ফেরা অভিনেতাদের মতো তাদেরও কোনো সম্মোহন শক্তি নাই। কিন্তু তারা তো বিবিধ চোরাবালিতে আটকা পড়েছে। এই চোরাবালি থেকে মৃত্যুর দেবির চোখ বাঁচিয়ে কেউ ফিরে যেতে পারে না। মীনা কুমারী দেখে, মঞ্চে আলো কমে আসে। দর্শকসারি শূন্য হতে থাকে। আর মীনা কুমারী তখন নুসরাত জাহান রাফি’র চরিত্র থেকে বের হবে বলেও বের হতে পারে না। তখন মঞ্চে আরো অন্ধকার ঘনিয়ে এলে, সে আরো দীর্ঘতম চোরাবালিতে আটকে পড়ে। সে অন্ধকারে দেখে, রাতের শহর ফেলে, একটি এম্বুলেন্স দীর্ঘ সাইরেন বাজাতে বাজাতে পিস্তলমার্কা বাঁশিসমৃদ্ধ গ্রামের দিকে ফিরে যায়। নুসরাত জাহান রাফি তখন আর কারো পিস্তল মার্কা বাঁশি ফুঁকোতে দেখে না। কী দারুণ কৌশলে সেসব তারা লুকিয়ে নিয়েছে।

‘বিষণ্নতার সম্রাজ্ঞী’ উপাধী লাভের আগেই মীনা কুমারীর চোখে দীর্ঘতম কান্না উপচে পড়ে। কিংবা সে পৃথিবীব্যাপিয়া চিৎকার করে, শপথ, আমি শপথ করছি, আমি শপথ করছি মহামান্য জুলিয়ান এসাঞ্জ আপনার পবিত্র ‘উইকিলিকস’এর নামে। আমি শপথ করছি...

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ, নিহত ১
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধ
দ্বিতীয় বিয়ের চার দিন পর বৃদ্ধকে হত্যা, দুই ছেলে পলাতক
দ্বিতীয় বিয়ের চার দিন পর বৃদ্ধকে হত্যা, দুই ছেলে পলাতক
লখনউ ও চেন্নাইয়ের অধিনায়ককে ১২ লাখ রুপি জরিমানা 
লখনউ ও চেন্নাইয়ের অধিনায়ককে ১২ লাখ রুপি জরিমানা 
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা