আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না আর
জীবনের কথা লিখতে গিয়ে লিখে ফেলি অন্ধকার
জানি আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না আর!
জীবনের কথা লিখতে গিয়ে লিখে ফেলি যন্ত্রণা বারবার
জানি আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না আর!
আমার কনো ভাবনা নেই, রাজহাঁস হবার ইচ্ছে নেই
জন্ম নেবার পরে কতজন কতভাবে করেছে আশীর্বাদ
সে সব নিষ্ফলে গেল, বুকে চেপে শূন্যতা করলো বসবাস।
মানুষে, মানুষে—ভাষায় ভঙ্গিতে, অভিব্যক্তি, ইঙ্গিতে, রুচিতে, রীতিতে কতভাবে
পাল্টে কতবার; আমি তো লুকিয়ে লুকিয়ে অল্প একটু নিঃশ্বাস ছেড়ে দেখেছি
কিভাবে গাছের পাতাগুলো ঝরে যায় বারবার।
পৃথিবীর বুকে মাথা রেখে কেঁদে ফেলেছি, ভেবেছি যা পেয়েছি সব হারাবার—
কতজনকে কতবার বলেছি একটু অপেক্ষা করো হয়ে যাবে এবার!
কাল বদলে যাবো, শুধরে নেবো আবার; কোথায়! কী? কিছু পাবার আশা রাখিনি—
আমি ভাবি আমি কী মানুষ? নাকি নির্বোধ পাখি!
মাঝেমাঝে জীবনের প্রতি ঘৃন্না আসে আমার—
তাই জীবনের কথা লিখতে গিয়ে লিখে ফেলি অন্ধকার
জানি আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না আর।
সজনে ডাটার মত
সজনে ডাটার মত নরম আঙুল তুলে যখন তুমি এলে
দু’চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি শব্দ, গন্ধ, বন্ধ দুয়ার খুলে
কোনো সীমানা নেই, হাতড়ে পেরিয়ে গেছি কোমল দুপুর
আঙুলে গোনা যায়নি কিছু, তাই পিছু ফিরে চাইনি নূপুর!
অন্ধ আমি দেখতে পাই না, কেবল হয়ে যাই চোখের আড়াল
ধানভানা দুটি বুক নিয়ে এসে খসে পড়ো, হওনা তুমি চণ্ডাল—
কি আসে তাতে—যা চাই এখনই চাই, বুকের কাছে উঁচিয়ে ধরে ছুরি
পরে আসা গহনা-দুল, শরতের আঙুল শান্ত মনে সজনে ডাটায় যাচ্ছি মরি—
সন্ধ্যাবেলায় রাত্রি নেমেছে, চোখের পাপড়ি সিক্ত, হালকা হওয়ার গন্ধে রিক্ত
তুমি আমার আধিপত্য, আমি তোমার পাপ! উঁচু সিংহাসনে লেখা—মুক্ত—’
গোপন রক্ত দিয়ে যাও শস্য যেন ফলে, মাটির ছোয়ায় বাতাস পেয়েছি
যা আছ তাও আছে, বেশি কিছু কেনা দাম—এভাবে বসে থাকে সমস্ত ধাম—
চৌকাঠ পেরিয়ে আয়নায় দাঁড়িয়ে দূরে ঢিল ছুঁড়ে দেখি
চোখের কুয়াশা ঠেলে পাশাপাশি বসে আছ তুমি ।
সব লেনদেন
সব লেনদেন শেষ হয়ে গেলে তুমি ভুলে যেও
এখনো স্টেশনে থেমে আছে লাল ট্রেন!
জাগিয়ে দিও হঠাৎ অকারণ, জানালা খুলতে করো না বারণ!
আসল নকল মেপে মেপে করবো না বিক্ষোভ আর—
তুমি কি ঘুমিয়ে আছো ঘুমে অচেতন?
যতবার পেয়েছি তোমায় ততবার হারিয়ে হারিয়ে
মুখ ফিরিয়ে বদলেছে ওসব রীতি, প্রেম—প্রীতি—ভীতি।
এখনও আমি ভীত, কাটেনি বিচ্ছেদের ক্ষত
চোখের পাতায় অশ্রুরেখায়, দেবির আসনে বসিয়ে-নামিয়ে
নিজেই নিজের কাছে মরছি খুব হেলায় ফেলায়!
ছেড়ে এতদিনের বাঁধা সড়ক, ধাঁধার মতন চুমু দিয়ে যায়, কিছু নিয়ে যায়।
বলেছি কতবার, কেঁদেনো বিষাদে, ঢেকো না হাতের আঙুল
আমি নিজেই নিজের কাছে আলাদা মানুষ তাই
এভাবে-ওভাবে আর নিভে না ব্যাকুল আগুন।
তোমার ক্লান্ত মুখশ্রী, বাড়িয়ে যখন যাচ্ছে বুকে বিবর্ণতার-শ্রী!
ঝনঝন ওই শব্দের সঙ্গে বুলিয়ে দিয়ে চোখের পাতা, কানের লতা
কে মিটাবে দেহের ক্ষুধা, কে গাইবে ঝিঁঝিঁর মত গুনগুন-গুন।
মন ভিজে যাচ্ছে
গ্রামের ভিতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি চলে যাবার দিকে
পুকুরের পাড়ে শিম গাছে ফুল ধরেছে, দূর্বা ঘাসে শিশির লেগে আছে
আমার পা ভিজে যায়, মন ভিজে যাচ্ছে।
এক বয়স্ক মহিলাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়েছি, কুশল জিজ্ঞেস করতেই তিনি কেঁদে ঊঠলেন,
তার স্বামী, সন্তান কেউ নেই, সাদা কাপড় মুড়িয়ে সে তার মাটির ঘরে পড়ে থাকে সমস্ত দিন।
নানা লোকে এটা ওটা দেয়, নানান কথা বলে, তার জীবনে ফুল নেই, শিশির নেই,
কিচ্ছু নেই—কেবল পাজরে লেগে থাকে দুঃখের নীল—আমার মন কেঁদে যায়, চোখ ভিজে যাচ্ছে।
তিনি আমার বাবার কথা জিজ্ঞেস করলেন, দেখা হলে বাবাকে নিশ্চয় দাদুর কথা জিজ্ঞেস করেন
এরপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই মনে পড়ে—হয়তো তিনিও চলে যেতে চাচ্ছেন—
পুকুর পাড়ে কিংবা গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা কত জানা অজানা আত্মায়
তিনি দেখছেন, আমিও দেখছি কিন্তু ধরে নিয়েছি দেবো না কোন সাড়া
যারা খুব ভালোবেসেছে তারাও গিয়েছে চলে, আমারও হয়তো যাবার পালা
তবুও আমি মানছি না কারো কোনো কথা, আমি কেবল চলে যাচ্ছি নতুন পথে—যে পথে
একবার আকাশ দেখি, একবার দেখি নতুন ঘর, দিনশেষে সব কিছু হয়ে যাচ্ছে পর।