আজ জার্মান ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবি হ্যেরমান হেসের জন্মদিন। তিনি ১৮৭৭ সালে এই দিনে ব্ল্যাক ফরেস্টের নিকটবর্তী তৎকালীন জার্মান সম্রাজ্যের ভ্যুরটেমব্যার্গ রাজ্যের খাল্ফ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। হেসে ১৯৪৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
তার জন্মদিন উপলক্ষে বাংলা ট্রিবিউনের পাঠকদের জন্য পাঁচটি কবিতা প্রকাশ করা হলো।
এই পৃথিবীর যত বই
পৃথিবীতে যত বই আছে
তোমার ভাগ্য খুলে দেবে না—
তবে গোপনে তোমাকে
ফিরিয়ে দেবে নিজের ভেতর।
সবই পাবে—যা চাইবে তুমি
চন্দ্র, সূর্য এবং তারা—
তোমার ভেতরে থাকা সেই আলো
যাকে তুমি খুঁজে ফেরো।
সেইসব জ্ঞান, যা তুমি খুঁজে হয়রান।
বইয়ের ভেতরে
প্রতিটি পাতায় জ্বলবে আলো হয়ে—
হবে তোমার ক্রীতদাস।
কোনো এক কবরের পাশে
সে শান্তি, নীরবতা আর রাতের জন্য প্রার্থনা করতো
আমরা কেবল জানি—সে বড় কষ্ট চেপে যেতো
এবং ছিলো বড় ক্লান্ত—
আমার তাকে কফিনের ভেতর নীরব জায়গা উপহার দিয়েছি।
গহিন কবরটি
পৃথিবী এবং সময়ের বেড়াজাল থেকে
আড়াল করেছে তাকে
যেন রক্ষা করেছে।
ক্লান্ত লোকটি হয়তো
সমস্ত ব্যথা ভুলে সময় কাটাবে শান্তিতে
সকল বিষাদ পেরিয়ে আসায়
তাকে জানাই শুভকামনা।
সমস্ত যুদ্ধ আর শব্দ-দূষণ আমাদের কাছে থেকে যাবে,
মৃত্যুর ভয় আর বিষাদ আমাদেরই,
দুর্ভোগ থাকবে খাবার নিয়ে
যতক্ষণ দুঃস্বপ্ন ভেঙে না যায়।
তবুও, আমরা বিশ্বাস করি ভারসাম্যের,
জীবনের গুরুত্ব বয়ে নিয়ে যাবো
সকল কুচিন্তা পরিষ্কার হবে
মানুষের মুখে মুখে থাকবে চিরকাল।
আমার পছন্দের জীবন
পৃথিবীর বুকে আসার আগে
আমাকে দেখানো হয়েছে এ জীবনের প্রতিচ্ছবি
সেখানে এক সাধু ছিলো, বিষণ্ণতা ছিলো
দুর্দশা আর কষ্টের বোঝা ছিলো,
কলঙ্ক ছিলো—যাকে আমার আঁকড়ে ধরার কথা ছিলো।
আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল ভুলেরা—
সেখানে উত্তাপ ছিলো এলোমেলো,
যার ভেতরে থেকে চিৎকার করতাম
ছিলো ঘৃণা, অহংকার আর লজ্জায় ঢাকা।
সেখানে প্রতিটি দিন সুখের আর
আলোকিত স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা ছিলো
কোনো অভিযোগ ছিলো না কিংবা জ্বালাতন।
এবং সবখানে ছিলো পুরস্কারের ছড়াছড়ি।
সেখানে মাটির গালিচায় ভালোবাসা মাখানো ছিলো
আর ছড়িয়ে থাকা সুখের উপহার,
যেখানে হৃদয়ের ক্ষত অনায়সে পালিয়ে যেন—
ভাবে যখন আমার জন্য বরাদ্দ পরমাত্মা
আমাকে ভাল-মন্দ দেখানো হয়েছে,
আমাকে অভাবের পূর্ণতা দেখানো হয়েছে ,
ক্ষত থেকে রক্ত ঝরা দেখানো হয়েছে,
ফেরেস্তাদের কাজ দেখনো হয়েছে,
যখন আমার আগত জীবন দেখলাম।
আমার প্রশ্ন কোনো সত্তা শোনে—
আমি কি জীবনকে আপন ভাবতে পারি?
সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে যে—
উপলব্ধির ভেতর দিয়ে সকল কুকর্ম বয়ে যায়।
এটাই সে জীবন যাকে আমি পেতে চাই
দৃঢ় কণ্ঠে আমি উত্তর দিই,
নতুন জীবনে আগমন ছিলো এমনই,
নতুন ভাগ্য আমাকে নিয়ে নেয় চুপিসরে।
এভাবেই এ পৃথিবীতে জন্ম আমার।
অপছন্দ হলেও কোনো অভিযোগ নেই
কারণ জন্ম না হওয়াকে আমি যে তাড়িয়েছি—
ভগবদ গীতা
ঘণ্টার পর ঘন্টা নিদ্রাহীন শুয়ে ছিলাম
আত্মার সব অজানা কষ্ট আর ক্ষত নিয়ে।
জ্বলন্ত আগুন আর মৃত্যু পৃথিবীর বুকে দেখেছি
হাজারো নিরীহ মানুষ ভোগে, মরে, মারা হয়।
হৃদয় থেকে যুদ্ধকে বর্জন করি
অর্থহীন অন্ধ ঈশ্বরের দেওয়া বেদনা।
দ্যাখো, ক্ষণিকের ভেতরে অস্পষ্ট বেজে ওঠে—
সমস্ত একাকিত্বের স্মৃতি।
আর আমাকে শান্তির কথা শোনায়—
প্রাচীন ভারতের কোনো ঈশ্বরের বই।
যুদ্ধ আর শান্তি, দু’টোই সমান।
তা-না-হলে কোনো আত্মা
স্পর্শ করবে না অহংকারকে।
শান্তি যতই আসুক
পৃথিবীর কষ্ট তাতে কমবে না
এজন্য সংগ্রাম নামো, বসে থেকো না।
সক্তি সঞ্চয় করো, ঈশ্বরের ইচ্ছা এরকমই।
যদি তোমার সংগ্রামে হাজারো আসে জয়
পৃথিবীর হৃদয় নাচবে অবিরত।
কাজল কালো চোখ
আমার ভালোবাসা, আমার ঘরকাতুরে মন
আজ এই উষ্ণ রাতে
বিদেশী কোনো ফুলের ঘ্রাণের মতো
উজ্জ্বল জীবনকে প্রাণ দেয়।
আমার ভালোবাসা, আমার ঘরকাতুরে মন
আর সকল ভাগ্য এবং পরিনতি
তোমার রূপকথা-জড়ানো চোখে
শব্দহীন গানের ছন্দের মতো পড়ে থাকে।
আমার ভালোবাসা, আমার ঘরকাতুরে মন
যেখানে পৃথিবী এবং শব্দ-দূষণ পালায়
তোমার কাজল কালো চোখে
গোপনে রাজ-সিংহাসন তৈরি করে।