X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১
জন্মদিনে

কাজল শাহনেওয়াজের বাছাই কবিতা

কাজল শাহনেওয়াজ
০১ জুন ২০২২, ০০:০০আপডেট : ০১ জুন ২০২২, ১১:০২

জলমগ্ন পাঠশালা

ডাল ঝুঁকে বর্ষা প্লাবিত মগ্নতাকে
ছুঁয়ে ছিলো অলস, মন্থর গতিতে
দুপুরের কৃষ্ণ আঙ্গিনায় পার হলো উদাস শামুক
আমাদের জ্যৈষ্ঠ মাস গোড়ালির ঘাসে
এক পা দুই পা করে জলমগ্নতায় অদৃশ্য হলো।

পুকুরের থৈ থৈ কৃষ্ণ কথায় চাঁদের ছায়া হলো থৈ থৈ থালা
হিঙ্গুল পাতার আঠালো থাবায় মগ্ন গ্রাম, মগ্ন দুপুরের পাঠশালা।

যেন অর্ধেক আঁধারে ভরা সরু খালের অন্তর,
প্রাকৃতিক বেঞ্চির তক্তা ভেসে গেছে অন্তপ্লাবন
মৃত এক টুনটুনির অনুপম দেহ ভেসে যায় স্রোতের সমতলে
আধপাকা হিজল নামে মাছের সন্ধানে।

ওরা মাছ, ওরা দেশান্তরিত একদল মানুষের মতো
টিনের আধডোবা মোরগের পাশে বসবাস করে
ভাঙা বর্ষাকে জোড়া লাগালো―
কি যে দূর আত্মীয়তা মানুষ ও মাছে।

মৎস্য শিকারিরা এলো, নৌকার ছইয়ে ছিন্ন হার
ওরা পরিহার করেনি, ওরা তবু মৎস্য বিনাশী;
মাছের সবজে নীল চোখ ওরা ভালাবোসে,
ওরা জলের ভেতর রুপালি মাছের ঝাঁক ভালোবেসে হৃদয়ের জালে তুলে নেয়।।

ধানখেতে বাদামি পালকঅলা বক
কালো নৌকা এলে উড়ে যায়।
দলছুট মাছ ও পালক পাশাপাশি অনন্তকাল ডুবে যেতে যেতে
নেমে যায়, চলে যায়, যেন হৃদয়ের কাছে ফিরে আসে।
মুঠোবন্দি নিশিন্দা পরির গল্প, কারা এলো?
পানির ঘূর্ণিতে শ্যাওলার সবুজ চোখ, কারা এলো?
জলমগ্ন ঝিঁঝিদের সংসারে কারা এলো―
পেছনে হাঁটে আর ঝরা শিশিরের গল্পে
চোখ খুলে বর্ষা দেখে!


রহস্য খোলার রেঞ্চ

হাত থেকে পড়ে গেল ইস্পাতের রেঞ্চ ঝনঝন শব্দ করে।
মেঝে মেঘলাতে
এমন সময় সানোর গাভি এসে মুখ দিলো হীরের ঘাসে
ওয়ার্কশপে যন্ত্রপাতির কাছে।
আমি ঘষে যাই লোহার কবিতা
একা একা।

কবে থেকে
টুকটাক ধাতুখণ্ডদের সাথে কথা বলি
গল্প বলি নেবুলার বড়ো হয়ে ওঠা
মহাকাশযানের আজীবন একা থাকা
চতুর্মাত্রায় অনন্ত জীবন।
কোয়ার্ক নাম ধরে ডাকি, ওগো দরোজা খোলো, জানালা খোলো
আমার কথা শোনো
কিউব, ট্যাপার আর গিয়ারের ফুলেরা

আজ কী যে হলো আমার।
হাত থেকে কেন যে পড়ে গেল ঝনণ করে।
রহস্য খোলার রেঞ্চ
সোনার গাভি এসে মুখ দিলো আমার
বাগানের হীরের ঘাসে।
অচেনা ধাতুর এক গাভি এসে।


কেওয়াটখালি লোকোশেড

রোদের জিহ্বা বেরিয়ে পড়েছে। কেওয়াটখালি লোকোশেডে
নীল মোচা রঙের রেল।
একটি ডিজেল বাবুইঞ্জিন টিনের টুপির নিচে
আরাম করছে। ঠেলে ঠুলে ঘাম ঝরাতে ঝরাতে
বয়লার ফেঁটে যাওয়া কয়লা ইঞ্জিনকে।
আনা হলো। ঘিরঙের টুপি পরা ঠিকাদারের।
লোকে ভুড়ি ফুটিয়ে ছাতা মাথায় গোঁফ
নাড়িয়ে হুকুম দিলো ‘ভাঙো’।
অক্সিজেন শিখা জ্বলল। কালো রঙের আগুন
ফোঁপালো।
টনটন ইস্পাত।
মিটার মিটার পাইপ।
তামা। দস্তা।
বিকেল হতে হতে লাইনের উপর রইল শুধু চাকা।
চারটি।
একটি বাছুর সন্ধ্যের দিকে।
হাওয়া খেতে চাকার উপর উঠল।


চিরন্তন সরল রেখা

শরীরে বাকল পড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি অ্যাকাশিয়া
ছোট্ট সে একেবারে কিশোর পাতাগুলি ছাগল ছানার মতো লাফাচ্ছে
নিচে তার আলো করে দুটি ছোট্ট চকচকে পোকা

সমস্ত গাছপালা ঝুঁকে আছে আনন্দে কলিজা রঙের পাতায়
দখিনা বাতাসের ঘন ডাক, মাথা কাত করে মুসান্ডা
এলামন্ডার সাথে ফিসফিস করে হাসাহাসি করছে,
কানে হাওয়া লাগাচ্ছে ঘাসেরা, বিনোদনের, ব্যক্তিগত পাতায়
প্রতি পৃষ্ঠায় সমান বর্ণনা
প্রতিটা গাছই আজ একই সমাজের

পোকা দুটির একটি হলুদ কামিজ আর একটি কালো ট্রাউজার পরেছে
ওরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একটা সরল রেখার জন্ম দিচ্ছে।
একটা চিরন্তন সরল রেখা।
পাশের পিপুল স্বাক্ষী, স্বাক্ষী গর্জন।


শ্রাবণ চলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে

শ্রাবণ চলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে
খোঁড়াখুঁড়ি করা রাস্তায়। হাঁটুপানি, গর্ত আর ছিটকানো কাদার ভয়ে
আমি তোমার আসার পথের দিকে।
খালি পেটের কুকুরের মতো পা দুটি ভাঁজ করে
সারাদিন অপেক্ষায় বসে থাকি।

নিশ্চয়ই কোথাও তুমি বসে বসে হাসছ
নিশ্চয়ই তোমার চোখের তারায় ভাসছে কামনার সূক্ষ্ম ঢেউ

শক্ত দিনগুলি আমাকে চেপে চেপে কষ্ট দিচ্ছে
সন্দেহের হুঁল ফোটাচ্ছে বন্ধুরা প্রতিনিয়ত
আর তাদের গুপ্তছুরির ভয়ে আমার ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে
একটা ক্লান্তি এসে আমাকে শূন্য করে দিচ্ছে
সেই শূন্যতা আমাকে ফিরিয়ে নিতে চাইছে
নিজেকে পুড়িয়ে ফেলার দিকে

কিন্তু আজ আমি আর চাই না কিছুতেই
তোমাকে ছাড়া কোনো কালো মুখের দিন―


ব্যাঙনি

তুমি সেই প্রাগৈতিহাসিক ব্যাঙনি
যে কিনা বহু ফুট মাটির নিচে সারা বছর বসবাস কর
আর কেবল যৌনমাসে অন্ধকারের উপরে আলোতে উঠে আসো আর
একটা ছোট্ট পুরুষ ব্যাঙকে পিঠে চড়িয়ে
ঘুরতে যাও প্রান্তরের পথে

তুমি দুনিয়া, আমাকে তুমি দারী দেখাতে দেখাতে
হঠাৎই ফেলে দাও বিগব্যাং খাদে
আমিও চমকে উঠি সেই সংবেদে

আমি নরম ব্যাঙ, তুমি শক্ত নারী
একটা বিশেষ কাজের জন্য তুমি আমাকে পিঠে চড়িয়ে
ঘুরে বেড়াচ্ছ
তোমাকে কি ফেরাতে পারি? 


তোমার বিন্দু

শাদা রং ক্রমে প্রিয় হয়ে উঠেছে

মিশ্র বা গাঢ় রং ছাড়া একসময় দিনগুলি আমার নড়তো না
অনেক দিন ধরে কবিতা নিয়া ভাবতে ভাবতে
আমার ভিতর রং বিষয়ক পরিবর্তন ঘটছে

জটিল কার্ভ সম্বলিত নকশার চাইতে
বড় বৃত্ত চাপের দিকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছি

বাজনার চেয়ে সুরের দিকে বেশি ঝোঁক

এখন বেশ তাড়াতাড়িই রাজনীতির
জটিল চালগুলি বুঝতে পারি

কোনটা স্বপ্ন আর কোনটা চাটাম
কেউ ব্যাখ্যা দেবার আগেই
নিজে নিজে বুঝে ফেলি

হায়রে সুদূরের দিন
তবু ধরে আছি শক্ত করে
তোমার বিন্দু, দৃঢ়, কিন্তু রঙিন


নির্বাচনের আগে

পৌষের রবিশষ্য
মাঠের পর মাঠ
আমরা গরিব মৌমাছি
এখন খাই সরিষা ফুলের মধু

শালারা একেবারে টাইট
যেখানে সেখানে গণ্ডগোল বাধাচ্ছে
আমাদের পোকারা পাগলের মতো
অজানা আতংকে ভয় পাচ্ছে

দেখা যাচ্ছে কি যাচ্ছে না ব্যক্তিগত বন্দুক
তবে টিভি আর দৈনিক পত্রিকা অনেক তৎপর

পাঁচ বছর পর আবার মধু আসছে বাক্সে
চাষিরা কত যে রসিক, বাছা
চাষ করেছে সরিষার ফুল
পদ্মের মধু নাই রে দেশে
মৌচাক হারিয়েছে
এখন বাক্স বাক্স ভরে উঠবে
অলৌকিক সন্দেশে।


বর্ষশেষের কবিতা

জীবনে কত যে ভালবাসা পাইলাম
স্নেহপূর্ণ, আদরমাখা, শ্রদ্ধাময়
বন্ধুর ঈর্ষা মেশানো, সংসারের দায়িত্ব ও দায়িত্বহীনতার

পেলাম তো কতকিছু আপনা আপনি উড়ে আসা
অচেনা অনাত্মীয়ের পুং বা স্ত্রীলোকের
স্বতঃষ্ফূর্ত
আমোদ প্রমোদ বা আবেগমথিত ভালবাসা
পেয়েছি কয়েকবার অচেনা রসে রচিত অবর্ণিত প্রণয় বাহিনী
যাকে সভ্য সমাজে প্রেম বলা হয়

পেয়েছি ঘৃণার ছলে, ক্রোধের আবরণে
মানসিক শান্তি নাশকতার ভিতরে
অনেক গূঢ় সম্পর্ক
যাকে ঠিক ভালবাসা বলে বুঝা যায় না

আবার অদৃশ্য উত্তাপ শুধু পেয়েছি অনেক
কে যেন কোথা থেকে আমাকে অনেক শান্ত চাঁদের কাছে
নিয়ে গেছে, হালকা সুবাস এসে গভীর সাহস দিয়ে গেছে
কিছু না বলেই

বাকি সব কিছু ভুলে যেতে চাই
যা পাই নাই সেসব কথা

হতে পারে অনেক কিছু হবার ছিল,
টাকা-পয়সার রাস্তার কাছ দিয়েই ঘুরে এসেছি
ক্ষমতার সামান্য কয়েক পা দূরে থেকেই না জেনে ফিরে এসেছি
অনেক সুখশ্রী মন
আমাকে ছাড়াই অসুখী হয়েছে

কি হতো এরকম না হয়ে ওরকম হলে?
প্রথম তুমির বদলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বা চতুর্থ তুমি হলে
কী-ই বা এমন হতো?
সব বছরই তো এক একটা ডিসেম্বরের শেষ দিনে এসে থেমে যায়

তোমার মৃত্যুতো থামে না!

/জেডএস/
সম্পর্কিত
ভাঙা হাটের দিন
প্রিয় দশ
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
পিছিয়ে পড়েও জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগপিছিয়ে পড়েও জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার