একাকিত্ব
সূর্যঝরা দিনে শূন্য দিয়ে ঘেরাও করো সংখ্যাকে
তীর্থকে প্রশান্ত করতে,
কিছু নিঝুম ছায়া পারো যদি সাইডব্যাগে রেখো
যেখানে চিতাবাঘের ঘ্রাণ সেখানেই অন্ধের উপদ্রব
মরুভূমিতে মাছ শিকার করা
অনেকটা মুখে ব্রন হওয়া
অপ্রাপ্তবয়স্ক আন্ডার গ্র্যাজুয়েটের কাজ!
প্রিয় কাফেলা, কোনো চ্যালেঞ্জ নয়
শিরদাঁড়া যতই সোজা করো
টম কাকু, তুমি তো জানো―
একাকিত্বে ডাহা মিথ্যে বলা কতটা টাফ!
জাম্পকাট
অনেকগুলো ভুল
তাকে ঘিরেই ঘূর্ণায়মান বিচিত্র সব ফুল।
জেগেও শব্দহীন
কাঞ্চা বাঁশে ঘুণ ধরেছে সুরের কাছে ঋণ।
নদীর মধ্যে যদি
পাল ছিঁড়ে যায়, হাল ভাঙে তো জলেই সমাধি।
ঘুঙুর বাজে পায়ে
অর্থ কেবল ডাইনে চলে মাতাল চলে বায়ে।
মাটির তৈরি বাটি
ধরলে পুরুষ ফাটল ধরে নারীর কাছে খাঁটি।
ক্ষমার কাছে এসে
গোলাপ দিয়ে জমাও আলাপ সামান্য হোক কেশে।
আলোকদীপ্ত পথ
কবির কাছে কাব্য ফোটে পাঠক তোলে মত।
গরিবি
সাইনিং সকাল, নৌহারা নাবিকের গল্প বলি শোনো
সরিষাখেতের কেন্দ্রে গোল হয়ে বসো
রুটিরুজির জন্য মৌমাছিরা গুণগুণ করে স্বস্তিপাঠ করবে
প্লিজ, ধমক দিয়ো না তাদের।
মাথায় যথেষ্ট কালির অক্ষর ছিল
বিনীত বাঁশির সুরে ভেসে যেত স্রোত থেকে স্রোতে
জলের ঘনত্ব বুঝে লবণের লালিত্য বলে দিতো
একদিন কুয়াশাবলয় ভেঙে আছড়ে পড়ল মরুঝড়
এখানেই সংসয়, উষ্ণ আপসের বালখিল্য
কৃষ্ণবিহীন কদমগাছের মতো মাঝসাগরে মরুভূমি?
যতই খটকা লাগুক, কোনো ফোঁসফাস নয়,
মনে রেখো গরিবিও একটা ব্যাধি
চিরঅন্ধত্বের আলটিমেটাম নিয়ে এখন সাগর ছেড়ে
খাল, বিল নয়নজুলির চারপাশে তার ঘোরাফেরা
কিছু বললে মৌনতায় মিশে যায়
কেবল ইশারা জেগে থাকে, সে বলে―
কুয়ো থেকে ঘটি তোলা যেমন, গরিবির অভিশাপ থেকে
আমাদের টেনে তোলাও ধর সেইরকম!
ভ্রমণকাণ্ড
বনে, পাহাড়ে, সাগর কিংবা মরুভূমিতে আমরা―লোকেরা
কারণে, অকারণে ঘুরে-ঘুরে বেড়াতে যাই।
এসব খবরে আমার ইচ্ছা মাঝে মাঝেই ঈর্ষিত হয়।
কিন্তু অশ্ব আমার নিরুপায়।
এরূপ ভ্রমণে কতিপয় ছোলা সে বেশি চায়।
আমি তো গরিব চাষি। অঙ্কে ফেল।
এই যে নাইন-টেন―শোন, সূত্র সদাই শুয়ে।
দু-মুঠো ছোলার হিসাব এই দুর্দিনে,
দুর্ভিক্ষের রাতে কী করে মিলাই?
এই শুনে, বনের এক পরিচিত বাঘ
পাহাড় থেকে অনেক পাথর এনে, বিক্রিত অর্থে
সাগর থেকে উচ্চাঙ্গের সুরা এনে দিয়ে
বললো―যা, মরুভূমিতে যা।
এত এত সুরা সারা দিন শোষণ করে
মরুভূমিতে মাতাল হয়ে পড়ে আছি আমি, অবশেষে।
ভ্রমণে ক্লান্তি থাকে―
এই কথা, প্রিয় হিউয়েন সাং, কেন তবে বলোনি আগে!
আয়না
কিছু দেখার ছলে;
জাফরিকাটা জানালায় মল পায়ে দাঁড়িয়ে আছ তুমি।
সরে যাওয়া সরিষাখেতের ঘ্রাণ
বেঁধে রাখো আঁচলে আপ্রাণ।
আমি শাসনশূন্য বিগত বিদ্যাধর
ফেরি করি নিত্য-অনিত্য সংশয়
ফন্দি-ফিকির করে দিগভ্রান্ত কিছু দ্যুতি
ধার করে এনেছি তোমার জন্য।
তবু সন্ধ্যা ফিকে হয়ে,
শালিকের সাহসে লাগাচ্ছে দোলা।
ঝিঁঝি ডাকছে, দূরে অবনত পিতরাজ।
গোলাঘর অরক্ষিত রেখে হুট করে বাবা-মা উধাও!
ভাবো তুমি,
এই দৃশ্য ফুটে আছে অভিধায়!
আয়নায় আসা মাত্র চোখ ঝলসে যায়!
বৃক্ষটি গাছের ন্যায়
আমাদের ছোট এ শহর বগুড়ার প্রাণকেন্দ্র―সাতমাথা থেকে হাঁটাপথে খোকন পার্কের বর্ণালি বৈচিত্র্যে অতি গোপনীয় এক বৃক্ষ বহুকালব্যাপী একমাত্র প্রতিনিধির সংসারে আজও কিন্তু বেঁচে আছে। সম্ভবত বেঁচে-থাকা গৌতম বুদ্ধের হাতে রোপিত বলেই এর প্রচলিত নাম ‘গৌতম বৃক্ষ’―মালির জবানিতে এমনই ইঙ্গিত ঝরে পড়ে।
তো―বৃক্ষটি একদম গাছের ন্যায়। অজস্র নন্দিত পত্র ও পাতায় দিন-রাত্রি আলোকিত করে রাখে। কুঁড়ি ও কাণ্ডের কম্পিত শিহরনে জেগে ওঠে আস্ত এক স্মারক। নানান পথিকের ছায়াভান্ডারি যেন এক কর্মনাশা কারক।
সেখানে প্রতিটি মুহূর্তে বয়ে চলে জায়া ও জননী। শিশু ও সাবিত্রী। তাদের উন্মোচিত আনন্দে মাঝে মাঝে ভাগ বসাতে রবাহুতের মতো ধেয়ে আসে শহরের সাতমাথাকেন্দ্রিক বেশকিছু নির্বাচিত কবি। সাতমাথাকে শান্ত করে দিয়ে তারা ভাবে ও ভনিতায় চেয়ে থাকে, বৃক্ষটি ক্ষণেই হাসে, ক্ষণেই ধমকে ওঠে। ফলে অতর্কিতে চমকে ওঠে আসন্ন বাদামি বিকেলের মধ্যবয়সী এক ফলচোরা বাদামবিক্রেতা। ওদিকে ভয়ে কোণঠাসা শিক্ষা-পলাতক আর এলোমেলো পতিতা ও পাখির পালক।
দেখেছি, প্রতিটি শ্রাবণে, বৃষ্টিতে সাতমাথা শুদ্ধ হলে যদি বলি―বলো তো বৃক্ষপ্রেমিক আমার কোন পথে বয়! বলে, অপেক্ষা করো ভাদ্রে দেখবে প্রতিটি ফলে-ই তার নাম লেখা রয়।
বৃক্ষটি গৌতম। সে চালাক ও চঞ্চল। রূপে বিতর্কিত নয়। প্রকৃতির প্রচলনে বীজে তেলের ক্যারিশমা আঁকা রয়। তেলে তর্ক। তেলে তুচ্ছ, তুমুল তামাশা বয়ে যায়। গোপনে সাতমাথা হাঁফ ছেড়ে বলে―হায়!
গভীর রাতে সাতমাথা শান্ত হলে চুপিচুপি গিয়ে দাঁড়াই, শীত ও জোনাকি ভেদ করে বেদনার ঢঙয়ে ঘুরি―ওহে গৌতম, কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে। হাতে বাঁশি ও বাদ্যের বরকতে গানে-গানে আনন্দে আন্দোলিত করি, বলি―বৃক্ষ তুমি কোন ভুবনের?
তিনি ঔষধি। তিনি বাত ও বসন্তে কার্যকরী। তার প্রেমে ছুটে আসে শনি ও সোমের ঈশ্বরদী। ফের ভোর ভাসে। ভীষণ ভাবনায় কে জানি ফিসফিস করে বলে, সাতমাথা জেগে ওঠার আগেই চলুন পালাই, আমরা তো আসলে একই গোত্রের। ওই তো দূরে গৌতম জি, ওই তো করতোয়া নদীর ওপারে বিদেশি বনের...
গ্যালারি
‘জলে তৃষ্ণা মেটে।’ এই বাক্যে কোনো ছলচাতুরি নেই।
কোকিল ও কৃষ্ণচূড়া―উচ্চারিত হলেই নিসর্গ ডুবে যায় নৈঃশব্দ্যে।
তোমার ভুতুড়ে স্থাপত্যকলায় সংযত চাঁদের আনাগোনা―
দেখি আর সন্দেহের সূত্রপাতে বাঁধা পড়ি
মনে হয়, দিন বলে কিছু নেই।
সূর্যকে শক্ত ক’রে হৃদয়ে ধারণ করে যে নাবিক
তার নাবালক চোরাহাসি জিজ্ঞাসাচিহ্নের কাছে
পেণ্ডুলামের মতো ঝুলে আছে ক্যানভাসের এক কোণে।
ঘুরে-ঘুরে মন খারাপ করা ঘূর্ণির কাছে এসে থামি।
রাতবিরেতে বিগত ঋতুর আগত ফলের বায়না ধরে
কেঁদে চলে যে শিশু―তার সারল্যকে সাথি করে
আমরা বলে যাই―এই তো চলে আসবে বাবা!
ঠিক সেই তত্ত্বে শিল্পের বারান্দা টপকে
তারা টুপটাপ ঢুকে পড়ে আমার অনাবাদি মগজে।
বলে, সান্ত্বনা দেয়―আসলে হয় কী কাকু,
এ-খেলায় যে যেভাবে শান্তি পায়—
এই যেমন―কেউ রক্তে, কেউবা গরম ভাতে,
মরে কেউ ভদ্রাবতী নদীতে ডুবে,
কেউ-বা ভ্রমর হয়ে ছুটে আসে রংহীন জবাফুলে!
বাইনারি ফরেস্ট
সানগ্লাসে চোখ ঢেকে এসেছি নিঃসঙ্গ মানুষ
কার্যত তোমর সঙ্গ পেতে―তা’বলে ভেবো-না অন্ধ আমাকে!
শোনা যায়, সাচ্চা পাপীতে পরিণত হবার পরই
নরক দর্শনের যোগ্য হয়ে ওঠে লোকে।
মনে রেখো, যমুনা বইবে চিরকালই যৌবনের গা ঘেঁষে।
অধ্যায় থেকে অধ্যায়ে ঢুকতে যেটুকু সময়, তাকে সঙ্গী করে
ঢুকে পড়ো আপন আবাসে, কথা বলো চাষের চরিত্র নিয়ে।
বলো―কতটা ভয় পাও ফরেস্ট অফিসারকে?
ডোম-চাড়ালের দল পাকদণ্ডী বেয়ে যতই নেমে আসে
চিৎকার করো তুমি―অস্থির অববাহিকাজুড়ে সেই ধ্বনি
পালাও, পালাও প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে প্রতিটি মেষপালকের কানে।
পাশাখেলায় জয় পরাজয় অনিশ্চিত জেনেও
কি কাণ্ড দেখো―সতীরা পালাচ্ছে সংবিধানকে আঁকড়ে ধরে
বিধবারা বাইসাইকেলে বাড়ির পথে।
বনের বারামখানা বায়োলজিতে ভরপুর। এ কথা মিথ্যে নয়,
তোমার প্রতিটি নড়াচড়া, আলিঙ্গনের অস্বিত্ব মেপে রুট লেবেলের প্রাণ
যে যার দিশা থেকে আজও ছায়ার মতো নড়েচড়ে।
তাহলে, উপসংহারে জানার ইচ্ছে পোষণ করি―
কত কাল আগে মরে গেছে রাগ!
অথচ আজও সারা গায়ে কী করে ধারণ করো সেই গন্ধ
যেন আস্ত একটি বাঘ!
বিপ্লবী
কত আর আর্দ্র পঙক্তি লেখা যায় বলো?
সুমেরু দুর্বিনীত স্পর্ধায় মিশতে চায় কুমেরুর কোলে
অচিন পাখির ঠোঁটে ভাগ্য ঝুলে আছে
তুমি নাকি নৈনিতালে?
অথচ আজও এল না তোমার নিরুদ্দেশ-পত্র!
ধান থেকে খড়কুটো আলাদা করতে
যেটুকু হাওয়া দরকার―তারাই জানাল
কারণে, ব্যঞ্জনে মাজারে মাজারে ঘোরো!
বর্ষায় ছড়ানো বীজ গাছের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত
ডালে তার অচেনা, অবান্তর ঝুলে আছে দুর্বোধ্য ফল।
শব্দ শান্ত হলে বেড়ে যায় সংশয়
দেখি―কৃষিনির্ভর এইসব রোদে
কেমন চিকচিক করছে
তোমাদের ফেলে যাওয়া বিপ্লব!
অংশ
দিবসে তোমার অংশ হয়ে আছি
বাকি সব বিলুপ্ত ব্যাকরণে
ফলে, কাহিনির মতো নায়িকা আমার
ধীরে-ধীরে গান আর গহনায় ভরে ওঠে।
যেন আজ বিবাহ বাতাস দিকে-দিকে
কত কারণ বহিয়া আনে।