X
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
১৯ বৈশাখ ১৪৩২
The Fresh Strands of the World

সমকালীন গদ্যকবিতার সংকলন

লিপি নাসরিন
১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:০৬আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:২৫

'The Fresh Strands of the World: A Collection of Contemporary Prose Poems' নামে ছাব্বিশ জন কবির সমসাময়িক গদ্যকবিতার একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে ইংল্যান্ড থেকে কবি গৌরাঙ্গ মোহান্তের সম্পাদনায়। এই সংকলনে বাংলাদেশ, ভারত এবং বিশ্বের কয়েকজন কবির সমসাময়িক গদ্যকবিতা রয়েছে।

সংকলিত কবিতায় বর্তমান সময়ের বিধ্বংসী পরিণতি থেকে শুরু করে চিত্রকল্পের অবাধ বিচরণের দৃশ্য শুধু চিত্রিত হয়নি, প্রতীকী ব্যঞ্জনায় তা মূর্ত হয়ে উঠেছে।

কবি অলোক বিশ্বাস তাঁর ‘A Transitive Positivity’ কবিতায় অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের বেদনায় জারিত হয়েছেন। ‘The Difference’ কবিতায় শুকিয়ে যাওয়া এক নদীর পোড়া ঘাটের মাঝি কবিকে জানিয়ে দিচ্ছেন বাস্তুতন্ত্র ভয়াবহভাবে চেঁচামেচি করছে, সেখানে সে যেন একাকী না থাকে। 'When Politics itself becomes  an asylum  or a prostitution'—এই  লাইনটি ‘Poetry Beyond Politeness-2’ নামক কবিতার। এ কবিতায় কবি আক্ষেপ করেছেন নদীগুলোকে টেনে হেঁচড়ে, বিষাক্ত করে বাধ্য করা হয়েছে নীরব থাকতে। মানুষের জটিল মনস্তত্ত্ব আর অমানবিক রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব যে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, কবির চেতনায় তার প্রতিঘাত প্রতিভাসিত। নদীরা তাঁর কবিতায় প্রত্যেক শহরে লম্বা মিছিল করে প্রতিবাদ করে বৃক্ষগুলোর অস্বাভাবিক চাবুকের আঘাতে। কবির এই অসাধারণ রূপকালংকার জীবন্ত প্রাণদায়িনী নদীকে রূপান্তরিত করেছে সমস্ত অন্যায়ের প্রতিবাদস্মারকে।

ডেভিড লি মরগানের কবিতা পড়তে গিয়ে বিস্ময়ের সাথে কবিতা লেখার এক অনন্য স্টাইলের সাথে পরিচিত হয়েছি। তাঁর কবিতার শরীরের বাঁক কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারে অনন্য ধারায় সুষমামণ্ডিত। অসাধারণ প্রতীকী ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করেছেন তিনি ইঁদুর, মাছ এবং কীট হত্যার মাধ্যমে সমাজের অসৎ, দুরাচারীদের নিয়ে। একটি কুকুরকে তিনি দুহাতে মারেননি, মেরেছিলেন রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা যে উপায়ে হত্যা করে ঠিক সেভাবে। চরম ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় তাঁর 'killing a Dog' কবিতায়। একটি বাঘ (প্রতীকী) যে তার বোনের সন্তান ও তাদের সবাইকে রক্ষা করেছিল সেই বাঘটি বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছিল, সে কারো সাহায্য  ছাড়া উঠতে পারত না, একসময়  ক্যান্সারাক্রান্ত হলো এবং অবশেষ তার জিহ্বা বের হয়ে গিয়েছিল টেবিলে পড়ে থাকা ওয়েট পেপারের মতো। ডেভিড লি মরগানের কবিতাগুলো বেশ দীর্ঘ এবং তাঁর ‘ Charlie Savage, Of HIS LIFE, I Saw This Movie, Angel kiss’ শিরোনামের বা অন্যান্য কবিতাগুলো পাঠে মনে হবে যেন গল্পকাব্য পড়ছি। ১৯৮৩ সালে বার্লিনে শার্লির সাথে তাঁর পরিচয় হয়। শার্লি আর তার ভাই বিক্রস্টনের একটা এতিমখানায় বেড়ে উঠেন, সেখানে তাদের বাবা—একজন cornish  জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্ট তাদেরকে ফেলে যায়।

শার্লি সেসময়ের স্মৃতি চারণ করেছেন:

‘My little and I/holding onto each other/wearing plastic shoes/government issue/waving goodbye daddy/see you next year/sniffing glue/why should I care/hut/two/three/four/SIG HEIL DADDY.’

'My little brother is marching in step' এই লাইনটি একাধিকবার তাঁর কবিতার মধ্যে তরঙ্গের অভিঘাত তুলেছে। স্পষ্টতই  কোনো দুঃসহ স্মৃতি তার মনের কোণে ছাইচাপা আগুনের মতো ধিকধিক করছে। তাঁর সব কবিতা মানুষের অমানবিকতার কারণে আহত ও নিহত মানুষের জন্য এক চরম হার্দিক আবেদন, হয়ত-বা স্বপ্নভাঙা ব্যথাতুর হৃদয়ের কঠিন পরিহাস। তাঁর কবিতার চরিত্ররা কথা বলে। 'Then I was drinking in a bar, trying to forget, I imagine, and this beautiful woman—it turned out later that she was an angel—came up to me and said, 'The creature has no real power, not the kind that could kill anyway.  God  wouldn't give you that kind of power. She loves you too much....you are killing yourselves( Angel kiss).'

সৃষ্টিই সৃষ্টির বিরুদ্ধাচরণ করে, সৃষ্টিকর্তা নয়।

কবি ফিন হল তাঁর ‘Mitz’ (Jewish word—a maker of caps), ‘Ghosts in supermarket’ এবং ‘Soul’ কবিতায় এক ব্যতিক্রমী চিত্র এঁকেছেন। সে (নারী) সাদাকালো, তুলতুলে সোফার উপর এলিয়ে পড়লো, তার ছোট শরীরটা ছোট করে মেলে ধরলো, শরীর মোচড়াতে লাগলো, তার মাথা আমার দিকে রেখে, তার পিছনের পা-টা অন্য দিকে। দৌড়ানো, লাফানো আর তাড়া দেওয়া বিষয়ে বিগত কয়েক ঘণ্টা মানুষের বাহ্যিক চোখ যা দেখতে পায় না (Mitz)।

Empty streets, reclaimed from oil to soil এই বাক্য দিয়ে শুরু হয়েছে ফিন হলের ‘Ghosts in supermarket’ কবিতার প্রথম লাইন। মানুষের লোভ ওয়ালেটকে ফুলিয়ে তোলার জন্য তাকে করেছে অন্ধ যেখানে আগাছা আর আগাছা না থেকে বাড়ন্ত বুনো বৃক্ষ হতে চায়। ‘Soul’ কবিতায় প্রেমতাড়িত কবি বলেন যখন তুমি সত্যিকার অর্থে প্রেমে পড়বে তখন তুমি সেই প্রেমিকের আত্মার এক টুকরো লাভ করবে। ‘When they die, you may lose them and their heart,  but their bit of soul remains with you.’ এই লাইনগুলো এক অমরপ্রেমের মহাকথন তা সে নর-নারীর মানবিক প্রেম হোক বা হোক আত্মার পরমাত্মার সাথে মিশে একসত্তায় পরিণত হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। 'আমি সাগরের দিকে দৃকপাত করলে সে আমার চোখের ভেতর দিয়ে সাগর দেখতে থাকবে।'

পশ্চিমবঙ্গের কবি সুমনা রায়ের কবিতার সাথে আমার পরিচয় অনেকদিনের। সম্ভাবনাময় এই কবি তাঁর ‘Zero Point’ কবিতায় স্মৃতিতে জমে থাকা ধুলো বসন্তের মৃদু হাওয়া নাড়িয়ে দিয়ে এক অলিখিত কবিতা অত্যুৎকৃষ্টভাবে কবির সামনে তুলে ধরে। কবির দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেই উজ্জ্বল সময় ধরা দেয় যখন প্রেমিকের সাথে প্রথম ডেটিংয়ের মতো শেষতক তার সাথে সাক্ষাৎ ঘটে। কবির ভাষায় 'The border Security Force's vigilant gaze, the fidelity of the white clouds, the bustling crowd, and the sweltering heat of palas sun all step forward to bear witness to our reunion.’ পড়তে পড়তে মাদকাসক্তের মতো নিমগ্ন হই। প্রেম নাকি কবিতা, কবিতা নাকি প্রেম কোনটি অগ্রগামী হয়ে মূর্ত হয়ে ওঠে তাঁর কবিতার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে? গৌরাঙ্গ মোহান্ত অনূদিত কবির ‘Symphony’, ‘A Trip Taken Together’, “Water's” ‘Melody’ প্রভৃতি কবিতায় প্রকৃতির রং, রূপ আর সৌন্দর্যের সাথে মানব মনের মিথস্ক্রিয়া বাঙ্ময় হয়ে ধরা দেয়।

কবি উদয় শংকর দুর্জয় তাঁর ‘Belief in Oneself’ কবিতায় প্রশ্ন রেখেছেন এমন কাউকে কি পাওয়া যায় জীবনে যে তোমার অশ্রুকে নিজের গোপন কষ্টের মতো লালন করবে? অদেখা এক সুখের খোঁজে মানুষ এ পৃথিবীতে হন্যে হয়ে ঘুরছে কিন্তু কেউ আত্মাস্থিত গোপন সুখাধারকে সংরক্ষণ করতে পারছে না। আত্মমর্যাদা সেই উপায় যা মানুষকে তার চলার পথের সব বাধাকে অতিক্রম করে একটা সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত করে। যাপিত জীবনের কোন্দলের ভেতর থেকে কবি এক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যা তাঁর যন্ত্রণাদগ্ধ ক্ষতে প্রলেপ বুলিয়ে যায় কোন দূর অতীতের গ্লানি ভুলিয়ে।

‘A Thousand Splendid Blues’ কবিতাটি আমাকে মুহূর্তে নিয়ে গিয়েছিল কেপটাউনের এক সমুদ্র সৈকতে যেখানে নীল জলে নেলসন ম্যান্ডেলা শৈবাল সংগ্রহ করতো। এ ধরনের কবিতা আমাকে ভীষণ টানে। প্রেম আর প্রকৃতিতে আমি সবসময় এক অনৈসর্গিক আনন্দ লাভ করি। শহুরে ইট-পাথরে বন্দি বাতাস যখন মুক্তির নেশায় পাগলপারা, দেয়ালে দেয়ালে মাথা ঠুকে মরতে থাকে, আমাকে তখন এ জাতীয় কবিতা সাগরবিহারে প্রবালের গন্ধমাখা বাতাসের কাছে নিয়ে যায়। আমার ভীষণ প্রিয় নেরুদার কবিতা সদৃশ সঙ্গীত গুনগুন করে ওঠে 'A thousand splendid blue oceans bring the stars down.'—এসব পঙক্তির ভেতর তখন ঘুরে বেড়াই।

উইলো আর বার্চ বৃক্ষ অলৌকিক জলধারায় সিক্ত। অন্যরকম একটা ভোর। দিনের প্রথম ট্রেনটি ছেড়ে গেছে কিন্তু তার বাঁশির রেশটুকু প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। কবি তাঁর চিঠির বাক্সে খুঁজে ফিরছে বহু প্রতীক্ষিত একটি চিঠি, কেউ একজন হরিণের পশম ছোঁয়া সাদা খামে লিখবে 'শিশু জিজাস জন্মগ্রহণ করেছে'। 'A bunch of bells rings once I open the main door, blowing the cold sail over the mountain high .....A magical moment with the song of innocence'. (A Magical Moment with Songs of Innocence)—অনিন্দ্য ভাবগ্রাহী এসব পঙক্তিমালা আমাকে কোন দূর অতীতে নেরুদার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। অসাধারণ শৈল্পিক সুষমা তাঁর কাব্যদেহের পরতে পরতে যা মানুষকে আনমনা করে তোলে।

কবি জাফির সেতুর ‘Kashmir’ কবিতায় স্বপ্ন এসেছে ভিন্ন রূপে। কেউ একজন  তাঁকে একটা সাদা গোলাকার ছোট মোমদীপ দিয়েছিল যেটা জ্বালালেই বাতাস জেসমিনের সুবাসে ভারি হয়ে উঠতো। কিন্তু কবি কখনো সেটি এমনকি তাঁর দুর্ভাগ্যের অগণন রাতগুলোতেও না জ্বালিয়ে পকেটে ফেলে রেখেছিল। যখন মোমদীপটি স্থানচ্যুত হয় তখনই প্রতিরাতে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কবি নিজেকে মোমদীপের আকৃতির একটি কোচে আবিষ্কার করে যেখানে অগ্নিবর্ণ ঠোঁটের এক নারী ছুরি দিয়ে তাঁকে ব্যবচ্ছেদ করে। প্রতিবার প্রচণ্ড ভয়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন তিনি। এক সময় সবাই তাঁকে মানসিক রোগে আক্রান্ত ভেবে দূরে সরে যেতে থাকে। সময়ের সাথে সাথে তাঁর দুঃস্বপ্নের রাতগুলো ফুরিয়ে যায়। ভূস্বর্গ কাশ্মীরের এক দুঃসহ রক্তাক্ত যন্ত্রণার ছবি রূপক বর্ণনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কবি হারিয়ে ফেলা সেই ছোট মোমদীপটি খুঁজছে যেন সেটি ফিরে পেতেই তাঁর জন্ম হয়েছে।

'The candle that was still in my grasp now appeared like a blood —spattered terrain between us.'

‘A Well’ কবিতায় কবি এক স্বচ্ছ জলের কুয়োর মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখলো কূপটি তার মধ্যে এক কালজয়ী রাজ্য ধারণ করে আছে। ময়ূর অপার্থিব নিস্তব্ধতায় পেখম তুলে নৃত্যরত।

তারকাখচিত এক মৌসুমি বায়ুর রাতে কবি কূপের জলের কাছে গিয়ে দেখলো কিছু চঞ্চল হৃদয়ের মানুষ অনড় পাথরে রূপান্তরিত হয়েছে। কবির জগৎ যে ভিন্ন; সে জগতের ছবি কবি আঁকে ভাবের গভীরতায় ডুব দিয়ে কল্পলোকের তুলিতে। অসাধারণ এক কল্পজগতের দৃশ্য কবি শব্দের মায়াজালে টেনে তুলেছেন, অনেকদিন পর সেই কল্পরাজ্যে মানসীর (হয়ত) দেখা পেয়ে ফল্গুধারায় ভেসে গেছে তাঁর হৃদয়।

তাইতো কবিতা সবচেয়ে সুন্দর মিথ্যা।

'Upon seeing you after a lengthy absence, recollections of the Falgu in my well, veiled by slough, flooded back (A well).' গৌরাঙ্গ মোহান্তের অনুবাদে জফির সেতুর কাব্যিক সংবেদনা প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।

কবি জাহিদ সোহাগের কবিতার সাথে পরিচয় হয়েছিল তাঁর 'প্রায় শূন্য' কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে। উত্তর-আধুনিক কবিতার অনুষঙ্গ জাহিদ সোহাগের কবিতায় অনিন্দ্য অবয়বে উদ্ভাসিত হয়েছে। তাঁর 'প্রায় শূন্য' কাব্যগ্রন্থের দুয়েকটি লাইনের উদ্ধৃতি দেবার লোভ সামলাতে পারছি না। 'তুমি রাজা হলে বলতাম, দিঘির পাড়ে বুক ছুঁই ছুঁই বাঁকা তালগাছ রচনা করে দাও; বা তোমার যদি থাকতো ফুটো থালা, ভিখিরির, তাতে চোখ রেখে দেখতাম বোকা পৃথিবী (১৯ নম্বর কবিতা)।' প্রতীয়মানোৎপ্রেক্ষার কী সাবলীল প্রয়োগ টানা গদ্যকবিতায়!

২১ নম্বর কবিতায় ঠিক একইভাবে 'তুমি ময়ূর, তুমি তারাগাছ, আরও আকাশের দিকে মুখ রেখে শুয়েছ পালক বিছিয়ে;...আমি দেখি এক গাছ, কাঠঠোকরা হয়ত ঠুকেছে তাকেও; জ্বলছে তার আগুনে-শাখা; নাকি তুমি, ময়ূর, বসেছ চুপচাপ পুচ্ছ মেলে!' এ রকম বহু নান্দনিক শব্দশৈলি তার কবিতার দেহকে অলঙ্কারের ঔজ্জ্বল্যে ধাঁধিয়ে রেখেছে।

তেমনি একটা লাইন 'তুমি ঐ সিন্দুক থেকে নিয়েছ জল, ঐ চাবুক থেকে চামড়া; তুমি কসাইখানায় জন্ম দাও জীব ও জীবিতের; আমি কেন হতে যাব শিকারির নিরুদ্দিষ্ট বর্শা?' (৭নম্বর কবিতা) এ লাইনগুলোর উদ্ধৃতি দিলাম তাঁর কবিতার ঐশ্বর্যকে জানান দিতে।

এ সংকলনে তাঁর প্রথম কবিতা ‘Nameless-1’, এ কবিতাটি আমার কাছে মনে হয়েছে রূপকধর্মী এবং ব্যঞ্জনাময়। মানুষের মূত্রথলির একটি অঙ্গের মহানুভবতা আর উদারতার জয়গান গেয়েছেন। কবি সেই মানুষকে দেখতে বলেছে হয়ত সে হাঁটছে অথবা নিজেকে দেশের প্রেসিডেন্ট গণ্য করছে অথবা ঠেলাগাড়ি ঠেলছে কিন্তু তাদের হাত, পা, মাথা, বুক, ক্ষুদ্রান্ত্র সবকিছু যেন তাদের ব্লাডারের মধ্যে হঠাৎ ঢুকে গেছে। তারা যেন সব মূত্র ত্যাগ করার জন্য জন্মেছে। পৃথিবীতে কিছু মানুষ সবকিছুকেই অতি অবজ্ঞাভরে গ্রহণ করে। কোনো কিছুতেই তাদের কিছু আসে যায় না। তারা যেন সবকিছুতেই মূত্রত্যাগেই সুখী।

এ কবিতার শেষ লাইনটি 'The sound and pleasure of urinating are timeless.'

উত্তরাধুনিক কবিতা কোন যোগসূত্র মেনে চলে না, এখানে থাকে না কার্যকারণ ও নির্দেশিত ফলাফলের কোনো বাধ্যবাধকতা। যে কোনো শব্দের অবাধ, যথেচ্ছ বিচরণ কবিতার সীমানাকে প্রলম্বিত করে অসমাপ্ত ফেলে রাখে। জাহিদ সোহাগের কবিতায় তার পরিস্ফুটন ভীষণরকম দীপ্যমান। তাঁর ‘Nameless-2’ কবিতায় আর এক ভিন্ন আমেজ সঞ্চারিত। যদি পুরানো তাকে আবার সম্মুখে পেতো তাহলে তার মতো একজন পুরুষ সমবয়সি একজন নারীকে কী বলতো সেটা বিবেচনা করে তার দিকে দৃষ্টি দেওয়া  উপভোগ করতো। সেই প্রথম প্রেমে পড়ার মতো কৈশোরে ফেরা। হয়ত কেউ একজন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওষ্ঠাধরে রঞ্জনরেখা টেনে বলবে, 'Zahid Bhai, would you mind holding the folds of my sari?

জাহিদ সোহাগের ‘Abject Revulsion-1, 2, 3’ কবিতা তিনটি তাঁর 'প্রায় শূন্য' কাব্যগ্রন্থের প্রথম তিনটি কবিতার অনুবাদ। আধুনিক যাপিত জীবনের নুন আনতে পান্তা ফুরানো গল্পের এক শ্লেষাত্মক অনুভব কবিতার পরতে পরতে ফুটে উঠেছে। 'কখন ছুটি হবে, কখন বাজবে সেই ঘণ্টা?'

'Please grant me leave, grant me leave; let the bell ring on the worn-out shoulder of the office assistant; he, in his deep hunger may swallow  the cacophony of the kid; ...I see someone,  entirely alone, reclining upon scattered bones.'

কবি গৌরাঙ্গ মোহান্ত, অনুবাদেও যিনি সিদ্ধহস্ত, তাঁর কবিতা সম্পর্কে নতুন করে বলার নেই। কবিতার গঠনে বরাবর তিনি শব্দের চমক দেখান। চেনা শব্দকে যেমন তিনি টুইস্ট করেন চিত্রকল্পের প্রয়োজনে তেমনি পৌরাণিক শব্দকেও ঝনঝনিয়ে তোলেন তার কবিতায়। কখনো ভারতীয় কখনো-বা গ্রিক মিথের চরিত্রগুলো তাঁর কবিতার শরীর ছুঁয়ে খেলা করে। এ সংকলনে কবির পাঁচটি কবিতা আছে। প্রতি কবিতায় ভাষা, বিষয়বস্তু কিংবা শব্দ চয়নে কবির নিজস্বতা প্রকাশ পেয়েছে। আধুনিক বাস্তবতা আর চর্চিত কল্পনার ভেতর কবি আমাদের দেখান জীবনের এক অপরিহার্য শিল্পসত্য। কবির কল্পনা বাস্তবকে হাতের মুঠোয় পুরে উড়ে চলে সাধারণ্যের অচিন্তনীয় এক অদৃশ্যালোকে। সেখানে কবির চিন্তা, কবির কল্পনা মুক্ত। সে কল্পনা যেভাবে ইচ্ছা কলরোল তোলে কবিতার বাঁকে। নান্দনিক নৃত্যাঙ্গ জুড়ে  ফুটে ওঠে কালো অক্ষরের এক শিল্পদানী। কবি গৌরাঙ্গ মোহান্তের কবিতায় জগদ্বিখ্যাত স্থান ও ঘটনাসমূহও জায়গা করে নিয়ে কৌতূহলী পাঠকের জিজ্ঞাসাকে নিবৃত্তির দিকে ঠেলে দেয়। এটা আমার কাছে বেশ আগ্রহোদ্দীপক ব্যাপার যা একই সাথে উপভোগ্যও বটে। এভাবে ধারণাগত সীমানা অতিক্রম করে যায় তাঁর কবিতা।

‘Dancing Girl from Mohenjo-daro’ কবিতায় মহেঞ্জোদারো সভ্যতার এক নৃত্যরত বালিকা যে তার ডান হাতটি নিতম্বের ওপর রেখে এমন ত্রিকোণের সৃষ্টি করেছে কবির কল্পনায় যেন তা ফুটন্ত পদ্ম সদৃশ। এ কবিতায় বিমূর্ত সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে জন কিটস, গিয়োম অ্যাপোলিনেরের সাথে ভিঞ্চির মোনালিসাকে তুলে এনেছেন কবিতার পাদপীঠে। বাংলার শ্যামলিমা, পশ্চিমা দ্বীপ, পাহাড় আর বসন্তবাহারকে মোনালিসার সৌন্দর্যের মধ্যেই খুঁজে ফিরেছেন; 'for the Mona Lisa, Guillaume Apollinaire walked like a bear  into a hole every morning under an adverse sky.' গিয়োম অ্যাপোলিনেরের মতো সৌন্দর্যপিয়াসী কবি হেঁটে চলেন ‘Presidency Boarding’ কবিতায় বেলজিয়ামের ষোল শতকের ‘Mannekken Pis’ এর ভাস্কর্যের দিকে। প্রেসিডেন্সি বোর্ডিংয়ের ১১ নম্বর কক্ষে খইরঙা পালক খুঁজতে গিয়ে কবি জানতে পারেন কলকাতার কাছে এক সবুজ মাঠের পাশে যেখানে জীবনানন্দ ক্ষণিক নিবাস গড়ে তুলেছিল, সাদা পালক ভেসে চলছে: সবুজ ধানখেত অতিক্রম করে শ্বেতদ্রোণের স্বপ্নমোড়া এক বসতি। সেখানে উঠানের এক পুকুরে ছোট্ট বালকের মূত্রত্যাগ জলের ভেতর এক উন্মত্ততা সৃষ্টি করে চলেছে। শেষে কবি দৈহিক পরিবর্তনের এক অনন্যসাধারণ রূপান্তর লক্ষ করেছেন মাছের চোখের জ্বাজ্বল্যতার ভেতর।

'Following the glint in the fish's eyes, I discover a transformation as it metamorphoses into a frog.'

‘Invisible Pingala Potency’ কবিতায় কবি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুদূর প্রসারী প্রভাব নিয়ে বলেছেন 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহের সংস্কৃতির ভেতর ছড়িয়ে দিচ্ছে ব্রাউন আলো।' কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রাচীন বহু ঘটনাকে রুখে দিতে পারত বলে কবি অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।

'Had artificial intelligence been pursued earlier, the indigenous woodland dewellers wouldn't have gone wild while fighting Marlowe; the blood of the black helmsman wouldn't have sullied their spear tips.'

কবি কুমার চক্রবর্তীর কবিতার সাথে পরিচয় ঘটলো এই সংকলনে। তাঁর কবিতায় জীবনঘনিষ্ঠ দর্শনছোঁয়া পরিস্ফুটিত। কবিতায় জীবনের উপমায় জল আর বিহঙ্গের সন্নিবেশ এক দীপ্ত ভঙ্গিতে দৃশ্যমান। জীবন এক বহতা নদী আর চঞ্চল বিহঙ্গের মতো; পথেই যার শুরু পথেই শেষ। নদী যেন জীবনের আর বিহঙ্গ স্বপ্নের এক অনুপম প্রতিচ্ছবি এঁকেছে তাঁর কবিতায়। সময় এবং মন যেন জল আর পালকের ক্যানভাসে মোড়া। দার্শনিকের সেই চিরাচরিত অনুসন্ধিৎসা, কোথা থেকে এলাম, কোথায় যাবো তারপর আরো কত দূর, কোন অচেনা গন্তব্যে (unknown land)? যে প্রশ্ন মানুষকে তাড়িত করে ক্ষান্তি দেয় শেষ পরিণতিতে। শীতের পাতা ঝরা দিন আর আনমনা বিহঙ্গ (আমি এই আনমনা বিহঙ্গদের দেখেছি আবছা আঁধারে কিংবা তাপিত মধ্যাহ্নে আমের শাখায় ঘাড় গুঁজে বসে থাকতে) কবির অন্তঃস্থ ক্ষরণকে বাড়িয়ে দিয়েছে। কবি হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কবিতার চিত্রায়ণে ভিন্ন মাধুর্য আর অদৃশ্য বোধের রাজ্য গড়ে তোলে। অসাধারণ বিষয়শৈলী কবি কুমার চক্রবর্তীর কবিতাকে এক দর্শনাধারে ফেলে জীবন এবং জগৎকে নতুনরূপে দেখায়, ক্ষণিক মুহূর্ত নিজেকে নিয়ে ভাববার অবকাশ সৃষ্টি করে। ধীর হয়ে যাই যখন কবি বলেন মহাকর্ষের এক অদৃশ্য শক্তি পাগলা প্রত্যাশায় নিজের দিকে টানতে থাকে। কিছুটা মেলানকলি কবিকে হয়ত তার বৃত্তের ভেতর নিয়ে ফেলেছে। গৌরাঙ্গ মোহান্ত অনূদিত তাঁর কবিতা ‘The Ocean’, ‘Simplicity’, ‘Trace Left by Misplaced Cards’ কিংবা ‘Time for Departure’ পড়ে আমরা সে রকমভাবে নিমজ্জিত হই।

'Come to this mute riverbank when you are overwhelmed with melancholy (The ocean)...' বিষাদমাখা হৃদয় নিয়ে কবি নদীতীরে আমাদের ডেকে নিয়ে যান যেখানে কোনো অতিলৌকিক শব্দ (Metaphysical sound) যার প্রতি আমাদের প্রত্যাশাপ্রেম আমাদের সকল নিস্তেজ নিদ্রালুতার (lifeless slumbers) অবসান ঘটিয়ে রক্তবান ডেকে নতুন উদ্যমে জীবনকে পরিপূর্ণ করে স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাহায্য করবে।

'Death drags us away when our skin mellows....'(The ocean) মানুষ পৃথিবীতে পরিযায়ী পাখি এ অপরিহার্য সত্যটি আমাদের কোনো এক দূর জগতে টেনে নেয় যখন কবি উচ্চারণ করেন, 'We are essentially migratory birds bringing winter seasons and songs of invisible realm through our lips.' (The ocean) মৃত্যুকে কবি এঁকেছেন ভিন্ন সৌন্দর্যে, 'Death induces loneliness, and so does the art. Thus, art is analogous to a form of death.' একাকিত্ব যেন শিল্প এবং মৃত্যুর অনিবার্য অনুষঙ্গ। পাঠক কুমার চক্রবর্তীর কবিতায় খুঁজে পাবে জীবন বোধের নিগূঢ় কিছু দিক যা অভিপ্রেত। কবির সাথে আমরা প্রকৃতির নির্দোষতার কাছে ফিরতে চাই যখন আতঙ্ক আমাদেরকে কবজা করে, 'Panic overtakes me. Then I look for an arcadia filled with honey and wax.' (Traces left by Misplaced Cards)

তাঁর Simplicity কবিতায় জীবনকে সহজ করে নেওয়ার প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখা যায়। তাঁর কবিতায় যেন 'দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহিতে' এর প্রতিধ্বনি শোনা যায়। জীবনের গভীর দুঃখের কঠিনতম অবস্থাও যেন অন্তঃস্থিত আলোর ঔজ্জ্বল্যকে নষ্ট না করে। 'It is imperative to ensure that the sound of a nut cracking doesn't disrupt the rehearsal of the internal candle's luminosity.'

এ কবিতার শেষ লাইনটি এক উদাত্ত আহ্বান, 'Seek simplicity for life, where time progresses beyond your knowledge. Like a canvas painting, stand transfixed on the open terrace, amidst the rain of an overcast evening.'

এক মেঘলা সন্ধ্যায় বৃষ্টিমত্ত ক্যানভাসের মতো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আমরা ভিজে যাই কাব্যের সুরধারা স্নানে। এ কবির কবিতায় জীবন আর মৃত্যুর ব্যঞ্জনা ভিন্ন এক আবেশ সৃষ্টি করে পাঠককে অবসেসড্ করে ফেলে। মৃত্যু তার সংজ্ঞা পাল্টে যেন আরাধ্য হয়ে ওঠে। কবি বেছে নেয় রাতের আঁধার চিরপ্রস্থানের জন্য, যেমন করে গৌতম বুদ্ধ নীরবতাকে সঙ্গী করে কপিলাবস্তু ছেড়েছিল। আঁধার এমন একটা অবস্থা যখন কেউ কাউকে চিহ্নিত করতে পারে না, বুঝতে পারে না, তাই খুব সহজে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেয়া যায়। রাত শান্ত, রাত বিশ্রামের তাই নিশাক্রান্ত পথকেই কবি বেছে নিয়েছেন যখন সমস্ত চরাচর তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবে হতবুদ্ধি হয়ে। যখন দূরবর্তী কোন নদী বলে উঠবে, ' Oh, guest, why is your time of departure  occurring  just now?'

গৌতম বুদ্ধ নির্বাণ লাভ করে ফিরে এসেছিলেন কিন্তু কবি জানেন তিনি গেলে আর ফিরবেন না। 'I will not return, as I am aware that there is no turning back once one has left.' (Time for Departure)

হয়ত নক্ষত্রভরা রাতের আকাশে এক নক্ষত্র হয়ে আলোর বন্যায় পৃথিবীকে ভাসিয়ে দিয়ে খুব প্রিয় কারো সান্নিধ্যে থাকতে চান যত দূরে তিনি থাকেন না কেনো, 'If you were to perish, my lights would weep and pour water on the world, because, as you know, I pursue death.'

এই সংকলনে মুদ্রিত সকল কবির কবিতা নিয়ে আমার অনুভূতি অফুরান। সমসাময়িক জীবনের টানাপোড়েনে জীবন আর মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গভীরতম বোধের জায়গা থেকে কবিকুল নিজেদের নিয়ে রহস্যময়তায় মেতে ওঠে নিজেদের অজান্তেই। কয়েকজন কবির কবিতা পড়ে গদ্যকবিতার যে রূপমাধুর্য আমার কাছে ধরা পড়লো তার আবেদন অপরিসীম। সবগুলো কবিতা পড়ার তৃষ্ণা জাগিয়ে রাখলাম, যদি কোনো অবসরে ক্লান্তি কাটিয়ে lifeless slumber থেকে জেগে উঠি তবে বিস্তৃত পরিসরে সেসব নিয়ে আবার অক্ষরের সাথে আলাপচারিতায় মগ্ন হব।

সবশেষে এই সংকলনের সম্পাদককে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। এক অপরিমেয় শ্রমনিষ্ঠা নিয়ে তিনি এই আয়াসসাধ্য কর্মটি সাধন করেছেন, শুধু তাই না কবি আমার পাঁচটি কবিতাসহ আরো অনেক কবির কবিতা অনুবাদ করেছেন।

'The Fresh Strands of the World: A Collection of Contemporary Prose Poems' সম্পাদক : গৌরাঙ্গ মোহান্ত; প্রকাশক : পিওএল, ইংল্যান্ড; প্রকাশকাল : জুলাই ২০২৪; মূল্য : £ ৯.৯৯

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১৪ বছর পর নিয়াজ-ফাহাদদের নিয়ে তিতাস চ্যাম্পিয়ন
১৪ বছর পর নিয়াজ-ফাহাদদের নিয়ে তিতাস চ্যাম্পিয়ন
ভারতের সেনাবাহিনীর ব্যবহার করা মডেলের গুলি পাওয়া গেলো বাংলাদেশের সীমান্তে
ভারতের সেনাবাহিনীর ব্যবহার করা মডেলের গুলি পাওয়া গেলো বাংলাদেশের সীমান্তে
আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস
আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস
দাপট দেখিয়ে হায়দরাবাদকে হারালো গুজরাট
দাপট দেখিয়ে হায়দরাবাদকে হারালো গুজরাট
সর্বাধিক পঠিত
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয় আটক
দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয় আটক
নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীর বুকে-পেটে প্রকাশ্যে গুলি
নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীর বুকে-পেটে প্রকাশ্যে গুলি
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’