X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১
উপন্যাস

বিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার

সাজেদুল ইসলাম
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৪৩আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৪৩

পোড়ড়া হাটখোলা বলে আদতে কিছু নেই। একটি সরু খালের দুই পাড়ের খোলা স্থানকে পোড়ড়া হাট নামে মানুষ চেনে। স্থানটি অনেকটা কালো পুঁতির মালার মত দেখতে। যেন এঁকেবেঁকে চলে গেছে। ছোটো খালের দুই পাড় হোগল পাতায় পূর্ণ। জোয়ারের পানিতে পাড় দুটি পূর্ণ হয়ে গেলে লম্বা ও সবুজ এই জলজ উদ্ভিদ দোল খায়। এই খালের দুই ধারে জিরাকাঠির মানুষ কোনোদিন হাট বসতে দেখেনি। গ্রামের লোকেরা কেবল হাটের গল্প শুনেছে। কেউ শুনেছে বাবার কাছে, কেউ দাদার কাছে। কেউ বড়জোর আরো একপুরুষ আগে শুনেছে পোড়ড়া হাটখোলার কথা। গল্পমতে খালের দুইপাড়ে ছিল সারি সারি দোকানপাট। সেসব দোকানে ধান-পাট ও কাপড়ের ব্যবসায় চলতো। ঝড়ের এক রাতে আগুনে পুড়ে বিষণ্ন রঙ ধারণ করে হাটখোলা। পরে লোকমুখে পোড়াহাট হিসেবে খ্যাতি জুটে যায়। পোড়াহাট ধীরে ধীরে স্থানীয় ভাষায় পোড়ড়া হাট হয়ে গেল। এই পোড়ড়া হাটে বৈশাখী মেলা বসে নতুন ক্যালেন্ডারের দ্বিতীয় দিনে। বৈশাখের প্রথম দিন বসে ওটরার মেলা। ওটরা গ্রামের এই মেলার নামও বিকৃতির কবলে পড়েছে। লোকে বলে বৈশাখের প্রথম দিন ওররার মেলা। দ্বিতীয় দিন বসবে পোড়ড়ার মেলা। যেন ওররা ও পোড়ড়ার মেলা মিলেমিশে দুই সহোদর।

পোড়ড়ার মেলা ছোটো খালের কিনার ঘেঁষে বসলেও ওররার মেলা হয় ওটরা মাধ্যমিক স্কুলের পুরোনো মাঠে। ওটরা নদী সিকস্তী গ্রাম হওয়ায় স্কুল মাঠের একটি অংশ ভাঙনের মুখে পড়ে। শেষে স্কুলটিকে নিরাপদ দূরে সরিয়ে নেয় কর্তৃপক্ষ। সেই আধাভাঙা মাঠটি এখনো ওটরা স্কুলের পুরোনো মাঠ নামে পরিচিত। মাঠের পাশে রয়েছে শতবর্শী মঠ। মঠের মাথায় ছায়া হয়েছে এক বটগাছ। মঠ থেকে কিছুদূর হাঁটলে বহমান কচা নদী। মঠের দিকে হেঁটে যেতে কয়েকটি মুদি দোকান রয়েছে। পথের দুই পাশ ঘিরে দোকানগুলো গড়ে উঠেছে। ওররার মেলাকে কেন্দ্র করে হালখাতার বিরাট আয়োজন হয়। লাল কাপড়ে মোড়ানো হিসাব-নিকাশের টালী খাতা খুলে বসে দোকানিরা। বিগত বছরের হিসাব গুছিয়ে নতুন খাতায় তোলা হয়। খুচরা ও পাইকারি খোদ্দের মেলার দিন সকালে দোকানে এসে অর্থকড়ি বুঝিয়ে দিয়ে পেট পুরে মিষ্টি খেয়ে যায়। মুদি দোকানের পাশাপাশি ঝাঁপ খুলে বসে থাকতে দেখা যায় কয়েকজন স্বর্ণকারকে। মলিন সেসকল দোকানে সাধারণ দিনে খোদ্দেরের আনাগোনা থাকে না। সোনার দোকানগুলোয় ব্যবসায় নেই বললেই চলে। স্বর্ণকারদের দুর্দিনেও ওররার মেলা আশার ঝিলিক হয়ে আসে। স্বর্ণকাররা হাপরে আগুন তোলে। তাতে দম দেয়। সেই আগুন রঙিন ঝিলিক হয়ে নতুন কোনো বৌয়ের গলায় গিয়ে ঠাঁই নেয়।

লাল তরমুজ ওররার মেলার বড় আকর্ষণ। বিক্রেতা কয়েক ফালি কেটে সাজিয়ে রাখে প্রশস্ত থালার উপর। তরমুজের বিচিগুলো তখন পান খাওয়া বৃদ্ধের মতো দাঁত কেলিয়ে হাসে। পাইকাররা তরমুজের কালো বিচি দেখিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করে। তাদের যুক্তি— বিচি যত কালো তরমুজ তত মিষ্টি। মুড়ি-মিঠাইয়ের সঙ্গে আগতরা পাইকারি দামে অন্তত একটি ওজনদার তরমুজ কিনে নিয়ে বাড়ি ফেরে। তবে তরমুজ কেনার আগে প্রত্যেকে এটুকু অন্তত নিশ্চিত হতে চায়— তরমুজ দানাদার ও মিষ্টি কি-না। তারা পাইকারের ওপর ভার দেয়, বলে, তুমি মিয়া নিজেই একটা রক্তলাল তরমুজ বাইছা দেও। বাড়ি ফিইরা যেন দেহি টকটকা লাল। কেউ কেউ অবশ্য এতটুকু অনিশ্চয়তায়ও ডুবতে চায় না। তারা বিক্রেতাকে বলে, কাইটা আগে ভিতরডা দেহাও। মনে মিললে নিয়া যাই। এভাবে ব্যবসা চলতে থাকে। তরমুজের সঙ্গে মেলায় মেলে ফাটানো বাঙ্গি। যেন আসমান থেকে বিদ্যুৎ এসে পড়েছে। হলুদ বর্ণ গায়ে মেখে কারো অপেক্ষায় হা হয়ে আছে সেসব বাঙ্গি। যেন বলছে, আমি এক পরিণত কিশোরী। আমারে বাড়ি নিয়া লও। তবু সবাই কি শোনে সেই ডাক। কেউ কেউ তো শোনে। ভালবেসে নিয়ে বাড়ি ফেরে।

মৌসুমী বিক্রেতাদের হাক-ডাকে মেলার মাঠ বিস্ফোরিত হতে চায়। তিন গ্রাম দূর থেকেও ঠাওর হও সেই গমগম আওয়াজ। দূর-দুরন্ত থেকে মেলায় মানুষ মেলে। যারা যেতে পারলো না তাদের আফসোসের কমতি থাকেনা। সবার মন ভেঙে দিয়ে দিনশেষে ওররার মেলা ভাঙে। মেলা ভাঙনের সুর বড় নিষ্ঠুর। মানুষে মানুষে দেখা-সাক্ষাতের জন্য যে মেলা মিলেছিলÑসেই মিলনমেলা ভেঙে গেলে কার ভালো লাগে। তবু সকলের আশা থাকে— যাক, কাল পোড়ড়ার মেলা তো অবশিষ্ট আছে। ওররার মেলা মাঠ থেকে পোড়ড়ার মেলাস্থল অন্তত পাঁচ মাইলের পথ। লোকে পায়ে হেঁটে ও নৌকায় চড়ে পাড়ি দেয় সেই পথ। ওররার মেলার সঙ্গে পোড়ড়ার মেলার এক বিরাট পার্থক্য রয়েছে। ওররার মেলায় ফল-ফসলের কেনাবেচা বেশি হয়। ধান-পাট, শাড়ী-লুঙ্গি, তরমুজ, বাঙ্গি ওররার মেলার আয়োজনের কেন্দ্রে থাকে। সঙ্গে বিক্রি হয় মাটির তৈরি বাহারি জিনিসপত্রÑহাড়ি-কড়াই, পুতুল, ব্যাংক, ও টেরাকোটা। নারীর প্রসাধনী সামগ্রী ও নকল অলঙ্কার ওররার মেলার অন্যতম আকর্ষণ। তবে পোড়ড়ার মেলায় ধান-পাট ও ফল-ফলাদির আয়োজন থাকে না। থাকে নানা পদের মন্ডা-মিঠাই ও মিষ্টান্ন। হাওয়াই মিঠাই, বাতাসা, চিনি রসের হাতি-ঘোড়া, পাপড় ও গজা। সঙ্গে নানা পদের ক্ষির ও পায়েশ পোড়ড়ার মেলায় দেদার বিক্রি হয়। পোড়ড়ার মেলায় নোনতা স্বাদের গজার সুনাম বেশি। গাছের পাতা ও কাগজের ঠোঙ্গায় ভর্তি করে সেসব খাবার নিয়ে বাড়ি ফেরে মানুষ। ফিরতি পথে সবার মুখে হাসি লেখে থাকে। এদিন কেউ যেন নয় ব্যর্থ মনোরথ।

দিলীপের মৃত্যুতে দিলীপের বৌ কাঞ্চু একা হয়ে গেছে বলে সকলে মনে করলেও দিলীপের দেওয়া স্মৃতিচিহ্ন এখনো কাঞ্চুর সঙ্গে রয়েছে। এই ওররার মেলা দিলীপ ও কাঞ্চুকে একত্রিত করেছিলো। প্রথম দেখা তাদেরকে বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে গেল। কাঞ্চুর বাড়ি সুন্দর গাঁও গ্রামে। তার বাবার নাম মদন ময়রা। দিলীপের বাড়ি জিরাকাঠি। পুরোনো পাল বাড়ির ছেলে সে। মধ্যবর্তী ওটরা তাদের মিলন ঘটালো। দিলীপ পাল তার নতুন বৌয়ের জন্য হাতের বালা বানালো বেছু স্বর্ণকারের কাছ থেকে। ওররার মেলা সংলগ্ন মাঠ ও মঠের কাছে যে স্বর্ণের দোকান সেখানে গড়ে উঠেছিলো কাঞ্চুর হাতের বালা। সকলে কাঞ্চুর বর্তমান একাকিত্ব দেখলেও দিলীপ পালের স্মৃতির কথা তো কেউ জানে না। কত পরম যত্নে কাঞ্চু এখনো তা আগলে রেখেছে। বিয়ের গহনা হিসেবে এই বালা দুটি দিতে পেরেছিলো দিলীপ। কাঞ্চুর বাবা দিয়েছিলো লিকলিকে একগাছি গলার চেন। দিলীপের থাকার চেয়ে না থাকা বরং কাঞ্চুর কাছে অনেক শক্ত মনে হয়। দুইবছরের সংসারে দিলীপকে বিশেষ কিছু মনে করেনি কাঞ্চু। স্বামীকে বিশেষ ভাববার প্রয়োজনই বা কি। একটি মেয়ের জীবনে ঘটে যাওয়া অন্য দশটি ঘটনার মত বিয়েও একটি ঘটনা মাত্র। বাবা-মা ও নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র ঘর বাঁধতে হবে— এ কথা তো একজন মেয়ে আশৈশব থেকে শুনে বড় হয়। নতুন ঘরে মেয়েটি একজন মানুষ পায়। লোকে এই অচেনা মানুষের নাম দিয়েছে— স্বামী। স্বামী তো মালিক। যেন প্রভুও। প্রভুই যদি না হবে তবে মানুষটির নাম স্বামী হলো কেন। তবে কাঞ্চুর অভিজ্ঞতায় দিলীপ পাল প্রভু নয়। দিলীপ তার জীবনের সহযাত্রী। দিলীপের ভিতরে কর্তৃত্ব নয় কেবল প্রেম দেখেছে কাঞ্চু। হৃদয়ের সেই প্রেম এখনো সীমাহীন ভোগান্তিতে রেখেছে কাঞ্চুকে। সাক্ষাৎ মানুষকে উপেক্ষা করা যায়, প্রয়োজনে প্রত্যাখ্যান করা যায় তার প্রেমকেও। কিন্তু অস্তিত্বহীন মানুষের প্রেমকে মানুষ উপেক্ষা করে কীভাবে?

সে রাতে কাঞ্চুকে ঘরে তুলে দিলীপ পাল বলল— সুন্দর গাঁও থেইকা সোনার বৌ আনছি। সোনার বৌ বলতে দিলীপ সম্ভবত কাঞ্চুর অপূর্ব রূপের দিকে ইঙ্গিত করেছে। কাঞ্চুর শরীর উজ্জ্বল শ্যাম বরণ। ফর্সা বলতে যা বোঝায় কাঞ্চু তেমন নয়। কালোও নয়। বিয়ের পর প্রথম মিলনের রাতে কাঞ্চুর দিকে চেয়ে দিলীপ বলল, তোমার চোখ প্রতীমার মতো। যেন বড় কোনো শিলপী গড়ছে প্রতীমা। কাঞ্চুর চোখের পাতা এক হয়ে এলে মনে হয় দুটি কালো নদী এক রেখায় এসে মিলল। কাঞ্চু তার নয়াপতি দিলীপের কথায় উচ্ছ্বাস দেখালো না। যেন এই কথা সে পূর্বেও শুনেছে। দিলীপের মুখে প্রশংসা শুনে কেবল প্রতীমার মত চেয়ে থাকলো কাঞ্চু। যেন নির্বাক মেয়ে সে। যেন নিজের স্তুতি শুনে ধন্যবাদ জ্ঞাপন না করার মতো নির্বোধও। শুধু বুঝেছে— তার চোখের প্রতি দিলীপ পালের নজর পড়েছে। কোনো রেহাই নেই। কাঞ্চুর ভ্রু দুটি মোটা। রাজ্যের কালো মেঘ সেখানে এসে ভিড় করে থাকে রাত্রিদিন। রাতে একান্ত সময়ে দিলীপ তাকে বলেছে— প্রথম দর্শনেই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো কাঞ্চুকে বিয়ে করবে। বিয়ে করেই সে ক্ষান্ত হলো। দিলীপের কথা শুনে কাঞ্চুর বলেছে, বিয়ে করলেন ক্যান, আরো কিছুদিন থাকতাম বাপের বাড়ি। এতো সুন্দর প্রতীমা বাপের বাড়ি থাইক্যা নষ্ট অইবো ক্যান। তাই নিয়ে আইলাম ফুল-চন্দন দিয়া সকাল-বিকাল পূজা দেওনের লাইগা। দিলীপের রূপকাশ্রয়ী আলাপে কাঞ্চু এবার অবাক হয়। সে ধীর লয়ে বলে, মাটির মূর্তিরে কদ্দিন পূজা করে মানুষ? স্বল্পভাষী কাঞ্চুর মুখে এই কথা শুনে দিলীপ বলে, পাল বাড়িতে তো চিরকাল পূজা অয়। হুনছোনি কোনোদিন মাটিবিহীন খাঁ খাঁ করেছে পাল বাড়ি। কাঞ্চু বলে, পূজা শেষে তবে প্রতীমা বিসর্জন দেন ক্যান? দিলীপ বলে, ধুর বোকা। এই কথা? এই রাতেও কেউ বিসর্জনের কতা কয়? বিসর্জন তো মাটির প্রতীমার জন্য। তুমি অইলা প্রতীমার মত সুন্দর বৌ। প্রতীমা তো মাটি দিয়া গড়া। তুই অইলা সোনার বৌ। দিলীপের কথা শুনে কাঞ্চু ফের বলে, প্রতীমা থাকলে বিসর্জনও থাহে। সোনার প্রতীমাও তো লোকে গাঙে ভাসাইয়া দেয়। দিলীপ তখন বলে, আমার প্রতীমারে ভাসানোর মত কোনো গাঙ নাই। বুকের সিন্দুকে সোনার প্রতীমারে আটকায়ে রাখুম এক জীবন। মিলনের রাতে দিলীপ প্রেম ও জীবনের পক্ষে লড়লো। স্বল্পভাষী কাঞ্চু কেবল ভাঙনের সুর গাইলো। সে কোথায় পেলো এসব কথা— দিলীপ কেবল তাই ভাবছে। দিলীপের সংশয় বাড়িয়ে দিয়ে কাঞ্চু ফের বলে, লোহার বাসরেও তো কীভাবে যেন ঢুকে পড়ে কালনাগিনী। দিলীপ এবার বলে, অত ভাব ক্যান, বৌ।

হতাশ হওয়ার পাত্র নয় দিলীপ। আশা তাকে আমৃত্যু পিছু ছাড়েনি। পিছু ছাড়েনি মৃত্যুও। আশা, প্রেম ও মরণ যেন হাত ধরাধরি করে চলে। প্রবল প্রেমের মাঝে মৃত্যুর সন্ধান কোনো অবাক বিষয় নয়। মৃত্যু আসেনা কেবল অবহেলার কালে। সেদিনের আলাপে দিলীপ পাল কান দেয়নি। তবু কীভাবে কীভাবে যেন কাঞ্চুর কথা সত্যি হলো। দিলীপ পাল জীবনের কথা বললেও সে তো বুঝতে পারেনি— জীবন এত ছোট। দুই বছরও টিকলোনা সুখসংসার। দিলীপ পাল পালবাড়িতে বহু মানুষের ভিড়ে কাঞ্চুকে বড় একা করে চলে গেল বিসর্জনের দেশে। প্রতীমা বলেই সম্ভবত কাঞ্চুর আশঙ্কা আলোয় এলো। সোনার প্রতীমা এখন পূজা-অর্চনাবিহীন এক একলা অন্ধকার ঘরে দিশাহীন রাত্রি যাপন করে। পূজা না হলে প্রতীমার তো মূল্য থাকে না। হোক না তা সোনায় গড়া। জীবন দিয়ে এখন কাঞ্চু অবহেলা যাপন করে। সোনার প্রতীমা এখন বড়জোর সোনার ধান ঝেড়ে-শুকিয়ে দিন পার করে। লোকের দয়াপরবশ দৃষ্টি, আহ্লাদের ভঙ্গি, ঝিচকে প্রেম নিবেদন আর টিটকিরি দিলীপের বৌকে আনন্দ বা শোক— কোনো সাগরেই ভাসায় না।

ডাওরে প্রকৃতিতে সচ্ছলতা এলেও জীবনের সব অনিশ্চয়তা গাঢ় হয়ে ওঠে। কলা বা কচুপাতা মাথায় দিয়েও যখন কোথাও যাওয়া যায় না তখন মানুষ নিজের মুখোমুখি দুদণ্ড বসবাস মতো অবসর পায়। নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে জীবনের অর্থ খুঁজতে থাকে। সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফিরে নুরু মাঝি রাতের আহার সেরে যখন বিছানায় যায় তখন বুঝতে পারে প্রকৃতিতে কোনো কোলাহল নেই। প্রকৃতি মানুষের চেয়েও নিঃসঙ্গ। প্রকৃতি হলো নীরবতার বরপুত্র। মানুষ যেটুকু নীরবতা উদযাপন করে তা প্রকৃতিরই দান। কেবল প্রকৃতির কাছ থেকে মানুষ শিখেছে— কীভাবে চুপ থাকতে হয়। মানুষ তবু ক্ষণে ক্ষণে অবুঝের মত প্রকৃতির নিয়মকে ভাঙতে উদ্যত হয়। তখন প্রকৃতি মুখ চেপে হাসে আর বলে— কতদূর পৌঁছাবে মানুষ। শুধু প্রকৃতিই জানে মানুষের কোনো গন্তব্য নেই— যেখানে স্থির হয়ে বসা যায়। একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়া যায়।

নুরু মাঝি প্রকৃতির সন্তান। বৃষ্টির জল শরীরে মেখে সে বেড়ে উঠেছে। জল ও জঙ্গলের ভিতরে তার নিয়তি ঘুরপাক খায়। তার জীবনে উচ্চস্বর যেটুকু আছে তা বিনারা বেনুর দিক থেকে প্রবাহিত। সারাদিনের কোলাহল, নৌকায় নানান দেশের মানুষের যাতায়াত আর অপ্রত্যাশিত হাঙ্গামা নিয়ে নুরু মাঝির দিন কাটলেও শেষপর্যন্ত সেসব ঘটনা যেন নুরুকে স্পর্শ করতে পারে না। বৃষ্টির তোড়ে সবকিছু ভেসে যাওয়ার জোগাড় হলেও নুরু মাঝি বিনারা বেনুকে ডেকে বলে, দেখ, চারদিক আইজ কেমন য্যন নীবর। বিনারা বলে, আফনে বৃষ্টির শব্দ শোনেন না? নুরু বলে, শুনি। শুধু কান্নার মতো শব্দ। মনে অয় কেউ কোতাও নাই বইলা আকাশ কান্দে। বেনু এবার বলে ওঠে, আমি তো সবসুময় কান্দার শব্দ পাই। নুরু এবার বলে, কেডা কান্দে। কার কান্দনের আওয়াজ পাছ? বেনু এবার নিজেই কেঁদে ওঠে। বলে, তারে তো দেহি না।

চলবে

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উন্নয়নের ভেলকিবাজিতে বাংলাদেশ এখন ডেথ ভ্যালি: রিজভী
উন্নয়নের ভেলকিবাজিতে বাংলাদেশ এখন ডেথ ভ্যালি: রিজভী
ময়মনসিংহে বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, দম্পতি নিহত
ময়মনসিংহে বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ, দম্পতি নিহত
নিউইয়র্কে সাকিবের ব্যবহারে মুগ্ধ বাংলাদেশের সাবেক গোলকিপার 
নিউইয়র্কে সাকিবের ব্যবহারে মুগ্ধ বাংলাদেশের সাবেক গোলকিপার 
ইট-পাথরের নগরীতে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে
ইট-পাথরের নগরীতে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!