X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নববর্ষ বড় মিলনের জায়গা

সেলিনা হোসেন
১৪ এপ্রিল ২০১৮, ০০:৩৫আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০১৮, ০৭:৩২

নববর্ষ বড় মিলনের জায়গা

আমার শৈশব কাটে বগুড়ায় করতোয়া নদীর পাড়ে একটি গ্রামে। গ্রামের নাম গণ্ডগ্রাম। সেই সময়ে গ্রামে বৈশাখী মেলা বসতো। সেই মেলায় ঘুরে বেড়ানো ছিল এক অনিন্দ্য আনন্দের ব্যাপার। মেলায় বিভিন্ন ছোটখাটো জিনিস; মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিল, হাতি ঘোড়া, পুতুল অনেক কিছু কেনার অভিজ্ঞতা ছিল বড় আনন্দের।

ভোরবেলা থেকে বৈশাখী মেলায় যাওয়ার একটা অন্যরকম উদ্দিপনা কাজ করতো। মেলাটা ছিল বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে। বাবার হাত ধরে আমরা একদল ছেলেমেয়ে (বাবার অফিসের অন্যান্য অফিসারদের ছেলেমেয়ে, চাকরি সূত্রে যারা এক জায়গায় থাকতো) একসঙ্গে ঘুরে বেড়াতাম। সংখ্যায় আমরা আট দশ জন ছিলাম। সবাই একসঙ্গে আনন্দ করতে করতে মেলার ভেতর ঢুকতাম। মেলাকে সামনে রেখে আগে থেকেই সারা বছরের একটা প্রস্তুতি থাকতো। মেলাটা শুধু আমাদের আনন্দের জায়গা ছিল ঠিক তা নয়। এই যে এতো জিনিসের সমাহার হতো, আজকের দিনে যেটাকে আমরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বলি। সেই জায়গা থেকে এগুলো সেই শৈশব থেকে দেখা হয়েছিল। এই জিনিসগুলি দেখাও ছিল আমাদের পরম পাওয়া। তাছাড়া মোয়া-মুড়ি জাতীয় শুকনো অনেক খাবার আসতো। সেগুলো আমরা সংগ্রহ করতাম। আমাদেরকে কিনে দিতো বাবা মায়েরা। মা অবশ্য কখনো মেলায় যায়নি। তখন এ সব কিছু নিয়ে সূর্য ডোবার আগে যখন দৌড়াতে দৌড়াতে ঘরে ফিরতাম, তখন আমরা বলতাম, “সূর্যমামা (তখন চাঁদ মামা হয়ে যেতো সূর্য মামা) তুমি অস্ত যেও না, তুমি আরেক দিন আকাশে থাকো, আমাদের এই মেলাটা অনেকক্ষণ চলুক। আমরা আরো কিছুক্ষণ এই মেলায় থাকতে চাই। অন্ধকার হয়ে গেলে মেলা বন্ধ হয়ে যাবে।  আমরা তো তখন আর মেলায় থাকতে পারবো না।”

এই যে মেলার আনন্দ সেটা শুধু যে উৎসবের মধ্যে ছিল তা নয়। উৎসবের হাত ধরে নিজের সংস্কৃতির জায়গাটাকে চেনারও একটা বিষয় ছিল। শৈশবের সেই মেলায় একপাশে হতো নানা ধরনের গান। গানগুলো শুনতে আমরা সেখানে বসতাম। অবশ্য সন্ধ্যার পর আমাদের ছোটদের সেখানে বসে থাকার সুযোগ ছিল না। তখন বড়রা থাকতো। সেইসব পল্লী গান, স্বদেশীয় বাউলদের গান, নানা কিছু মিলিয়ে মেলাটা হয়ে উঠতো উৎসবমুখর। সংগীতের এই পর্বটা ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। আজ থেকে ৬০/৬৫ বছর আগে উদযাপিত মেলাতে শুধু পণ্যের সমাহার নয়, সেটা সংস্কৃতির একটা বড় জায়গা ছিল। সেই জায়গা থেকে আমরা আজ বলতে পারি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলা নববর্ষের সবচেয়ে বড় জায়গা মানুষের মিলন সংঘটিত হওয়া। এই মিলনের জায়গাটিকে ধরে রাখায় আমাদের উৎসবের অন্যতম বিষয় হওয়া উচিত।


 শ্রুতিলেখন : মহুয়া আফরিন

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উন্নত বিশ্বের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত: পরিবেশমন্ত্রী
উন্নত বিশ্বের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত: পরিবেশমন্ত্রী
সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি ওবায়দুল কাদেরের
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যসময়মতো ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি ওবায়দুল কাদেরের
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম আবার বাড়লো
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম আবার বাড়লো
‘সিঁধেল চোর’ ধরতে মরিয়া পুলিশ
রাজধানীজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান‘সিঁধেল চোর’ ধরতে মরিয়া পুলিশ
সর্বাধিক পঠিত
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস