X
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২
ঈদসংখ্যা ২০২৩

দার্শনিক মুচি ও অন্যান্য

অনুবাদ : ওয়াহিদ কায়সার
১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:০৭আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:০৭

কিনার ।। শেইলা ব্যারি

মেরির দেহাবশেষ সবার সামনে আনার আগে সেটা পরীক্ষা করার দায়িত্ব পড়ল মিল্ড্রেড আর জেসির উপর। মিল্ড্রেডকে সেটা দেখতে হতো কারণ বয়সে সে ছিল সবার বড়, আর জেসিকে বাছাই করার কারণ—সে এসেছে সবচেয়ে দূরের জায়গা থেকে। কফিন বহন করে নেওয়া আর মেরির জন্য জামা নির্বাচনের দায়িত্ব রইল বাকি সব ভাইবোনের উপর।

গোরখোদক, হাই-স্কুলের প্রাক্তন এক ক্লাসমেট, তাদেরকে গম্ভীর এক ভঙ্গিমায় পার্লারের দিকে নিয়ে গেল। ‘আমার মনে হয় এটা দেখে তোমরা সন্তুষ্ট হবে,’ বলেই কফিনের ডালাটা তুলে সে পেছনের দিকে সরে আসে।

তার জন্য জেসির মনে খানিকটা করুণা জমা হয়, এমন একজনের জন্য যাকে নিয়ে তার বোন ও সে প্রায়ই মজা করতো।

‘তাকে সুন্দর দেখাচ্ছে, টম,’ মিল্ড্রেড বললো। ‘তুমি দারুণ কাজ করেছ। তোমার কী মনে হয়, জেসি?’

জেসি তখনও কাঁদছিল; মেরি মারা গিয়েছে—ধাক্কাটায় সে ফুঁপিয়েই যাচ্ছিল। তার মনে হচ্ছিল মিল্ড্রেড আর টম মেরির লাশটা নিয়ে এমনভাবে কথা বলছিল যেন তারা পারলে সেটা চৌঠা জুলাইয়ের প্যারেডে প্রদর্শিত করবে।

মিল্ড্রেড তার কাঁধে হাত রাখে। ‘ওখানে, ওখানে, জেসি,’ প্রায় চিৎকার করে ওঠে সে। ‘আমরা বারবার ভুলে যাই যে মেরির জন্য গত বছর তুমি এখানে আসোনি। আসলে বুঝতে পারতে। আমাদের মধ্যে কেউই চায়নি মেরি আসলে মারা যাক, আবার এটাও চায়নি সে ধুকে ধুকে মরুক।’

‘তাকে তো হাসতে হবে না,’ জেসি ফুঁপিয়ে বলে। টমের দিকে তাকায় সে। ‘তোমার মুখে ওরকম বেহুদা-মার্কা হাসি কেন?’ সে জিজ্ঞেস করে। টম ঘাবড়ে যায়। ‘তোমার কি এটা পছন্দ না?’ জিজ্ঞেস করে টম। তার চোখে খুঁজতে থাকে মিল্ড্রেডের সায়।

‘যদি এটা জেসি পছন্দ না করে,’ মিল্ড্রেড বলে, ‘তাহলে তোমার এটা বদলানো উচিত।’

‘কি বলতে চাচ্ছো, বদলাতে হবে?’ জেসি জিজ্ঞেস করে। ‘এর মতো কিছুই তুমি বদলাতে পারবে না।’

টম খানিকটা এগিয়ে আসে। ডান হাতের তর্জনী দিয়ে মেরির মুখের এক কোনায় এমনভাবে ধরে যেন মনে হয় সেটা নরম, নমনীয় মাটি। টম তার আঙুল দিয়ে আবার মেরির মুখের অন্যপাশটা ধরে। পিছিয়ে আসে সে। ‘এটা কেমন?’ সে জিজ্ঞেস করে, ‘আগের চেয়ে ভালো?’

আশা করে মিল্ড্রেড জেসির দিকে তাকিয়ে থাকে।

‘আমরা সবই করতে পারি যা তুমি করতে পারো, জেসি,’ টম বলে। নিজের তর্জনী তুলে ধরে সে। ‘আমাকে বলো তুমি কী চাও?’

জেসি দৌড়ে পালায়। ছুটে পার্কিং লট পার করে হাই-স্কুলের খেলার মাঠে গিয়ে দাঁড়ায়।

সেখানে গিয়ে মিল্ড্রেড দেখতে পায় ঘাসের উপর হাত দিয়ে নিজের হাটুজোড়া আড়মোড়া করে ধরে সে বসে আছে।

তার পাশে গিয়ে বসে সে। ‘আরে মেয়ে,’ নরম স্বরে বলে সে, ‘তোমার কি মনে হয় না এসব করার জন্য তোমার বয়স খানিকটা বেশি?’

মিল্ড্রেডের দিকে তাকায় জেসি, তার মনে হতে থাকে সে প্রস্তুত, যা এখন সে চিন্তা করছে সেটা বলার জন্য প্রস্তুত, মিল্ড্রেড আর মেরি কতটা কাছের ছিল একে অপরের, তারা কীভাবে তাকে সবকিছু থেকে বাদ দিতো, এমনকি মেরি যখন মারা যাচ্ছিলো তখনও তার পাশে তাকে থাকতে দেয়নি। ‘বেশি বয়সী!’ জিজ্ঞেস করে সে, ‘বেশি বয়সী?’ নিজের কাছে বারবার বলে কথাটা। সেটাই ছিল সমস্যা। মারা যাবার জন্য তাদের বয়স বেশি ছিল না।

তার দিকে তাকিয়ে মিল্ড্রেড হাসছিল, মাথাটা খানিকটা সামনে ঝুঁকে এনে যেন এমনভাবে বললো, তুমি কি ঠিক আছ, চালিয়ে নিতে পারবে কি?

জেসিও হাসে, মিল্ড্রেড উপর নিচে মাথা নেড়ে যায়, প্রতিটা নড়াচড়ায় হাসিটা স্ফীত হয়। এরপর বাতাসের মধ্যে নিজের তর্জনী মেলে ধরে আর অপেক্ষা করে।

জেসি হাসে, ধীরে ধীরে সামনে পেছনে ঢোলে, চোখের কিনার গলে পানি বের হওয়ার আগ পর্যন্ত হাসতেই থাকে। সে নিজের মাথা নাড়ে। মিল্ড্রেড তার কাছে এসে তর্জনী দিয়ে তার মুখের এক কিনার নিচের দিকে টানে। জেসি মিল্ড্রেডের থুতনিটা নিজের তর্জনী দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করে। উপরে, নিচে, উপরে, নিচে, তারা এরকমই চালিয়ে যায়, হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খায় ততক্ষণ যাতে টমকে গিয়ে তারা বলতে পারে যে মেরি ভালো আছে।


ভয় : চারটি উদাহরণ ।। গর্ডন লিশ

আমার মেয়ে কলেজ থেকে কল দিল। সে ভালো ছাত্রী, রেজাল্টও ভালো, যেকোনো দিক দিয়েই সে প্রতিভাধর।

‘এখন বাজে কয়টা?’ সে বললো। আমি বললাম, ‘এখন দু’টো বাজে।’ ‘ঠিক আছে,’ বললো সে। ‘এখন দু’টো। আমরা চারটায় দেখা করবো—চারটা সে-ঘড়ির হিসেবে যেটা এখন বলছে দু’টো বাজে,’ ‘ঘড়িটা আমার,’ বললাম আমি। ‘ভালো,’ সে বললো।

নব্বই মাইল, হালকা এক ড্রাইভেই চলে আসার কথা।

চারটা বাজার মিনিট পনেরো আগে নিচে নেমে আমি রাস্তার দিকে গেলাম, মাথায় সবই ছিল— তার গাড়িটার খোঁজ করতে হবে, পার্কিংয়ে খানিকটা জায়গা রেখে দিতে হবে, ব্লকের ভেতর তার গাড়ি দেখতে পেলে হাত নাড়িয়ে থামাতে হবে।

পাঁচটার পনের মিনিট আগে আমি চলে আসলাম। নিজের শার্ট বদলালাম। জুতা খুলে ফেললাম। আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম যে আমাকে কারো বাবার মতো দেখতে মনে হয় কি না।

ছয়টার কিছু পরে তার দেখা মিলল।

‘ট্র্যাফিক?’ জিজ্ঞেস করলাম আমি। ‘না,’ সে বললো, আর সেটা ছিল আমাদের শেষ কথা।

রাতের খাবার শেষ করতে সে নিজের যন্ত্রণার কথা জানালো, আর ডাইনিং রিমের ফ্লোরের পড়ে কাতরাতে লাগল।

‘আমার পেট,’ সে বললো। ‘কী?’ আমি জিজ্ঞেস করি। ‘আমার পেট। যন্ত্রণা করছে। আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও তাড়াতাড়ি।’

আমার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে কয়েক ব্লক সামনে বেশ বড় আর বিখ্যাত একটা হাসপাতাল আছে। সেলেব্রেটিরা যায় সেখানে। রাজনীতিবিদ আর সাধারণ মানুষ জানে সেখানে তারা কী করে।

এক দারোয়ান আর লিফটম্যানের সাহায্যে আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিতে পারলাম। প্রায় মিনিটের মধ্যে দু’জন ডাক্তার আর একদম নার্স এসে ব্যাপারটা সামনে নিল।

আমি দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম। এক ঘণ্টার মধ্যে জানা গেল চিন্তার কোন কারণ নেই, জানালো তারা আর কী খুঁজে পেয়েছে।

পেটব্যথা, একটু খারাপ খিঁচুনি, তলপেটের মধ্যে অনির্দিষ্ট কিছু একটার হঠাৎ আক্রমণ— দুর্বোধ্য, রহস্যময় যেটার জন্য কোনো অনুসন্ধান আপাতত এখন আর দরকার নেই।

কোনো সাহায্য ছাড়াই আমরা হাসপাতাল ছাড়লাম, আমাদের বাসায় আসার পথটা সহজ করার জন্য টানেল ধরে আগালাম। আমাদের সামনের রাস্তা, যেহেতু এখানে প্রায় ভোর চারটা বেজে আসছে, যেকোনো সময়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, আমরা তাই আন্ডারগ্রাউন্ড প্যাসেজ— যেটা আবার হাসপাতালের অন্য ইউনিটগুলোকে সংযুক্ত করেছে—সেটা দিয়ে বের হয়ে গেলাম। রাস্তায় এসে দেখলাম আশেপাশে একজন মানুষও নেই—তবে শেষ পর্যন্ত তাকে দেখা গেল। এক যুবক, যে এক গাড়ি থেকে অন্য গাড়ির দিকে যাচ্ছিল, আর তার হাতেও কিছু একটা ছিল, দেখে মনে হল দুমড়ানো একটা ছাতা—কালো কাপড়ের উপর রূপালি ফিটিং দেওয়া। যেটা দেখতে পেলাম বলে মনে হল সেটা আসলে নাও হতে পারে—জিনিসটা ছাতার মতো মনে হলেও গাড়ির দরজা ভেঙে প্রবেশ করার কোন যন্ত্র হতে পারে!

আমরা দু’জন হেঁটে যাবার সময় আমাদের দিকে সে একবার তাকালো, এবং তারপর আবার নিজের কাজে ফেরত গেল—এক গাড়ি থেকে থেকে আরেক গাড়িতে। গাড়ির দরজাগুলো খোলার চেষ্টা করছিল, কখনও আবার নিজের যন্ত্রটা ব্যবহার করে গাড়ির জানালা খোলার কায়দাও করছিল।

‘ওদিকে তাকিয়ো না,’ আমি বললাম। ‘আমার মেয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কী?’ আমি বললাম, ‘রাস্তার ধারে একজন দাঁড়িয়ে আছে, সে গাড়িগুলো খোলার চেষ্টা করছে, তাকে না দেখার ভান করে হেঁটে চলে আসো।’

আবার মেয়ে বললো, ‘কোথায়? আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।’

আমার মেয়েকে বিছানা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে, ডেস্কে হাসপাতালের কাগজপত্র রেখে নিজের বিছানায় এসে শোনার চেষ্টা করলাম।

কিন্তু শোনার মতো কিছুই সেখানে ছিল না।

ঘুমাতে যাবার আগে শুধু একটা বিষয় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল—আমার মেয়েকে সাথে নিয়ে হাসপাতালের করিডোর পার হওয়ার সময় খেয়াল করেছিলাম একটা ছেলের হাতে সেলাই করছিল, আর কেন যেন সেটা দেখে প্রতিবার আমার কান্না চলে আসছিল।

‘বের করো! বের করো!’

ক্ষতস্থানটার কাছে এসে ডাক্তার ড্রেসিং করার মাঝে ছেলেটা বারবার কুঁকড়ে যাচ্ছিল।

প্রতিবার তার সেই বিলাপের মাঝে আমি সে-যন্ত্রণা নিজেই অনুভব করি, ছেলেটা বারবার বলছিল সুঁইটা যেন বের করে ফেলা হয়। আমার মনে হচ্ছিল যে কারণের জন্য সেলাই পড়ছিল সেটা তার যন্ত্রণার চেয়েও বেশি যন্ত্রণাদায়ক ছিল।

কিন্তু তারপর হঠাৎ খেয়াল আসলো জরুরি বিভাগের সার্ভিসের জন্য স্টেটমেন্টের ব্যাপারে— মনে হল টাকাটা দিয়ে প্রথমে থিয়েটারের টিকেট কিনে ফেলি, তারপর ইস্ত্রি করা শার্ট।


দার্শনিক মুচি ।। স্কট ফ্রান্সিস স্যান্ডারস

জেনারেল (পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট) ইউলিসিস এস. গ্র্যান্টের দাদা পিল্গ্রিম কাউন্টিতে চামড়া আর জুতা সেলাই করতো। প্রতিবেশিরা তাকে নোয়া গ্র্যান্ট নামেই জানতো, স্বল্পভাষী একজন মানুষ যার কাছে একজন যায় শুধু চামড়া সেলাইয়ের জন্য। আরো যায় হরিণের চামড়া, অথবা, যদি আরো ভালো পাওয়া যায়, বুটের জন্য।

অনেক সময় ধারে কেউ অবশ্য এটা আশা করেনি সে কারো বাবা হবে, দাদা হওয়ার আশা তো বাদই দাও। বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর জন্য যতটা কথা খরচা করতে হয় সেটা তার থেকে আশা করা ছিল বোকামি। রোমা সম্প্রদায়ের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ করে অবশ্য সে বিয়ে করে। ঠিক সময়েই তার ঘরে ছেলের জন্ম হয়, জেসি, যার ঘরে আসে এক ছেলে, ইউলিসিস। এই ইউলিসিসের জন্যই পরবর্তীকালে ইউনিয়ন আর কনফেডারেটের অনেক ছেলেকে অকালে কবরে যেতে হয়েছিল।

মৃত পশুদের চামড়া সেলাই করা পেশা হলেও নোয়া কোনো কিছু হত্যা করা পছন্দ করতো না, আর জীবনে সে কখনও বন্দুকও চালায়নি। কাজ করার সময় তার পাশে চামড়ার স্তূপ জমে উঠত : ভালুক, ভোঁদড়, নকুল, হরিণ, বনবেড়াল, শেয়াল, চিতাবাঘ, নেকড়ে, চমৎকার সব মিংক, দেখে মনে হতো প্রাণিকুল নিজেদের চামড়া দলগতভাবে তার খুপরিতে রেখে গেছে। চামড়ার মাঝে সে যত কাজ করত, তত নিশ্চুপ হয়ে উঠত, মনে হতো যেন ট্যানিক অ্যাসিড তার থেকে তার কথা ছাড়িয়ে নিচ্ছে। বোবা পশুদের মাঝখানে আরেক বোবা পশু, বলতো তার প্রতিবেশীরা।

নিজের নীরবতার মাঝেও নোয়া কখনও চিন্তা করা বাদ দেয়নি। ভবিষ্যতে হয়তোবা এমন কোনো উপায় বের করা হবে যা দিয়ে পশু হত্যা না করে তাদের শরীর থেকে চামড়া ছাড়ানো সম্ভব হবে, যেভাবে ভেড়াদের শরীর থেকে লোম ছাড়ানো হয়? সম্ভবত হরিণ আর চিতাবাঘেরও পালন সম্ভব হবে যাতে তাদের চামড়া বেড়ে হবে প্রায় বারোগুণ। তাতে পশু হত্যা হবে অনেক কম। অথবা এমন কোনো গাছ রোপণ করা শুরু হবে যা ফলের বদলে চামড়া দেবে? নোয়া ভাবতে ভাবতে দার্শনিক হয়ে ওঠে।

ছুরি দিয়ে একটা র‍্যাকুনের চামড়া থেকে চর্বি ছাড়ানো অথবা সুঁই দিয়ে ভোঁদড়ের চামড়া জোড়া দেবার সময় দুনিয়ার গোপন সব সমীকরণ নিয়ে চিন্তায় মগ্ন থাকে সে। ভালুকের নয়টা চামড়ায় একটা বন্দুক কেনা যায়, আর তেতাল্লিশটা দিয়ে একটা ঘোড়া; পঁচাশি আর একশ হরিণের চামড়া দিয়ে কেনা যায় একজোড়া ষাঁড়, মিংকের দামও প্রায় সে-রকমই, ইঞ্চি থেকে ইঞ্চি, ক্যালিকোর মতো। এক গন্ধগোকুল দিয়ে রাই উইস্কি খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে থাকা যায়, একটা চিতাবাঘ দিয়ে সেভাবে কাটানো যায় এক সপ্তাহ। এ-সকল সমীকরণের ছিল গূঢ় অর্থ, যদি তুমি সেগুলোর ব্যাপারে বেশি সময় ধরে ভাবো, ইউ এস গ্র্যান্টের দাদা যেভাবে চিন্তায় বুঁদ হয়ে থেকে, যেভাবে তুমি নক্ষত্রের পথ আর যুদ্ধের কারণগুলো কমিয়ে আনতে পারো।


স্পেইস ।। মার্ক স্ট্র্যান্ড

নিউইয়র্কের মিডটাউনের লম্বা অ্যাপার্টমেন্টের ছাদের কিনারে এক সুন্দরী মহিলা দাঁড়িয়েছিল। সে-জায়গা থেকে লাফ দেবে এমন সময় একজন পুরুষ, ছাদে সানবাথ করার জন্য এসে, তাকে দেখতে পায়। একটু অবাক হয়ে মহিলাটি ছাদের কিনার থেকে খানিকটা পিছিয়ে আসে। সোনালি চুলের লোকটির বয়স হবে তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ, খানিকটা রোগা। তার দেহের উপরের অংশটা লম্বাটে আর পা-গুলো দেখতে শীর্ণ। সূর্যের আলোয় তার কালো সুইমিং স্যুটটা চকচক করছিল। মহিলাটির থেকে সে ছিল প্রায় দশ হাত দূরে। তার দিকে তাকায় মহিলাটি। বাতাসের কারণে মহিলাটির লম্বা চুল বারবার মুখে এসে পড়ছিল, টেনে চুলগুলোকে সে পেছনের দিকে নিয়ে একহাত দিয়ে সেগুলো ধরে রাখে। তার শাদা ব্লাউজ আর ফ্যাকাশে নীল স্কার্ট হাওয়ায় উড়ে যেতে চায়, কিন্তু তাতে তার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। একটু পর খেয়াল করে দেখে তার পা খালি, হাই হিলের জুতো জোড়া তার সামনে নুড়ি পাথরের পাশে পড়ে আছে। মহিলাটি সেখান থেকে সরে আসে। বাতাসে স্কার্ট এসে তার উরুর সাথে লেপ্টে যায়। লোকটার ইচ্ছা হয় টেনে তাকে সেখান থেকে সরানোর। বাতাস এখন উলটো দিকে বইছে, আর তার স্কার্ট লেপ্টে আসে পেছনের দিকে, উন্মুক্ত করে দেয় তার নিতম্বের আকার—ছোট আর গোল। তার বিকিনির আন্ডারপ্যান্টের লাইনও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সে চিৎকার করে বলে, ‘আমি তোমাকে ডিনারে নিয়ে যাবো।’ মহিলাটি তার দিকে আবার তাকায়। তার দৃষ্টি সরাসরি লোকটির উপর। দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে থাকে সে। লোকটি তার হাতের দিয়ে তাকিয়ে, যেটা দিয়ে সে নিজের স্কার্ট ঠিক করার চেষ্টা করে। মহিলাটির হাতে বিয়ের কোন আংটি নেই। ‘চল আমরা কোথাও যাই আর কথা বলি,’ লোকটা বললো। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে মহিলাটি আরেকটু সরে আসে। নিজের হাতগুলো এমনভাবে বাতাসে মেলে ধরে যেন এখনই ডুব দেবে। ‘দেখো,’ সে বললো, ‘যদি আমাকে নিয়ে তোমার কোনো প্রকার উদ্বেগ থাকে তাহলে বলবো তোমার ভয় পাওয়ার কোনো কারণই নেই।’ কাঁধে রাখা তোয়ালেটা নিয়ে সে লুঙ্গির মতো পড়ে ফেলে। ‘আমি জানি ব্যাপারটা ভেবে তোমার খারাপ লাগে,’ বললো সে। নিজেও নিশ্চিত না কোনো ব্যাপারটার কথা বলে, আর ভাবতে থাকে মহিলাটি আসলেই কিছু অনুভব করছে কি না। মহিলাটির পেছনের পশ্চাদ্‌দেশ বেঁকে যেভাবে নিতম্বের সাথে মিশে গেছে সেটা দেখে তার ভালো লাগে। সেটাকে খুব সাধারণ আর স্পষ্ট মনে হয় তার; নিজের যৌন ক্ষুধা অথবা সে-রকম কিছুর ইঙ্গিত দেয় তাকে। মহিলাটিকে স্পর্শ করার ইচ্ছা হয় তার। লোকটিকে খানিকটা আশা দেবার মতো করে মহিলাটি নিজের হাত শূন্য থেকে নামিয়ে আনে। ‘জানো, আমি তোমাকে কী বলবো,’ লোকটি বলে, ‘আমি তোমাকে বিয়ে করবো।’ হাওয়া আবার তীব্র হলে মহিলাটির নিতম্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ‘খুব শীঘ্রই আমরা সেটা করে ফেলবো,’ সে বললো। ‘আর তারপর আমরা ইতালি যাবো। আমরা বোলোনিয়ার যাবো। সেখানে সেরা সব খাবার খাবো। সারা দিন আমরা শুধু ঘুরবো আর রাতে ফেরত এসে গ্রাপ্পা খাবো। আমরা সারা দুনিয়া দেখবো আর সে-সব বই পড়বো যা আগে পড়ার সময় পাইনি।’ মহিলাটি ঘুরে দাঁড়ায় না বা কিনারা থেকে সরেও যায় না। তার ওপাশে লং আইল্যান্ডের সব ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং, কুইনের বাড়িঘরের লম্বা সারি, পাশে কিছু মেঘ সরে দূরে চলে যায়। লোকটি নিজের চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে মহিলাটিকে কীভাবে মানাবে। যখন সে নিজের চোখ খোলে, দেখে মহিলাটির পা আর ছাদের কিনারার মাঝে লম্বা একটা স্পেইস। একটা স্পেইস যেটা তার আর দুনিয়ার মাঝে সবসময় ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে মহিলাটি যখন তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, শেষবারের মতো ভাবলো ব্যাপারটা কী সুন্দর। এরপর মহিলাটি হাওয়া হয়ে গেল।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শর্তসাপেক্ষে জেল থেকে রেহাই পেলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার
শর্তসাপেক্ষে জেল থেকে রেহাই পেলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার
দ্রুত আ.লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত না এলে আবারও ‘ঢাকা মার্চ’: নাহিদ ইসলাম
দ্রুত আ.লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত না এলে আবারও ‘ঢাকা মার্চ’: নাহিদ ইসলাম
মাদ্রাসাসহ সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি
মাদ্রাসাসহ সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি
ভারত-পাকিস্তান ড্রোন যুদ্ধ: দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাতের নতুন অধ্যায়
ভারত-পাকিস্তান ড্রোন যুদ্ধ: দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাতের নতুন অধ্যায়
সর্বাধিক পঠিত
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
তিন শিক্ষক আর পাঁচ শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে সরকারি বিদ্যালয়
তিন শিক্ষক আর পাঁচ শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে সরকারি বিদ্যালয়
রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার আইভী, দিলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার আইভী, দিলেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান
যেভাবে বানাবেন কাঁচা আমের টক-মিষ্টি-ঝাল আমসত্ত্ব 
যেভাবে বানাবেন কাঁচা আমের টক-মিষ্টি-ঝাল আমসত্ত্ব 
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ: কিশোরগঞ্জের এসপি প্রত্যাহার
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ: কিশোরগঞ্জের এসপি প্রত্যাহার