ভর্তি পরীক্ষার গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকতে ১০টি শর্ত দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতি। মে মাসের মধ্যে শর্ত মেনে নিতে সময়ও বেঁধে দিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার (২০ এপ্রিল) গণমাধ্যমকে পাঠানো শিক্ষক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, গত ১৮ এপ্রিল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। শর্তপূরণ সাপেক্ষে এবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষকরা। আগামী মে মাসের মধ্যে যদি নির্দিষ্ট শর্তসমূহ পূরণের নিশ্চয়তা না পাওয়া যায়। তবে অতি দ্রুত আরেকটি সাধারণ সভা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
শর্তগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সংশ্লিষ্ট ডিনদেরকে নিয়ে গঠিত হবে ‘ইউনিট সমন্বয় কমিটি’- যারা ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় কার্যাদি সম্পাদন করবেন। এ ছাড়া সব উপাচার্য এবং ইউনিট সমন্বয় কমিটির প্রধানদের নিয়ে গঠিত হবে ‘কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি’- যারা সার্বিক বিষয় তদারকি করবেন; ২০২২ সালের ভর্তি পরীক্ষা অবশ্যই জুলাই মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে শেষ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে; ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে যাতে যে কেউ ফলাফল দেখতে পারে।
পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত স্কোর ও মেধাস্থান অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে; ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ নির্বাচন করবে এবং ভর্তির পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে; সব আবেদনকারীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে; পরীক্ষার কেন্দ্র নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের শুধু একটি পছন্দ থাকবে এবং সেই কেন্দ্রেই পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে; পরীক্ষার আবেদন ফি ব্যতীত শিক্ষার্থীরা ভর্তিকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট বিভাগে ভর্তির জন্য শুধুমাত্র একবার অর্থ প্রদান করবে। মাইগ্রেশন, ভর্তি বাতিল বা অন্য যেকোনও কারণে সার্ভিস চার্জ বাবদ সর্বোচ্চ ১০০ টাকার বেশি কোনও বিশ্ববিদ্যালয় আদায় করতে পারবে না।
ভর্তি বাতিল করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে ১০০ টাকা কেটে জমা করা বাকি টাকা ফেরত বা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর পথ বের করতে হবে। আবেদন ফি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
এই অর্থ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিলে কোনও অর্থ নেওয়া করা যাবে না। নীতিমালা অনুযায়ী অর্থ ব্যয়ে ঘাটতি দেখা দিলে ইউজিসিকে সে পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করতে হবে; বিভিন্ন কোটায় আবেদনপত্র জমাসহ ভর্তি প্রক্রিয়ার যাবতীয় কার্যাদি সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ডিন ও চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করতে হবে; এ ছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন কাজে সব শিক্ষকের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে; আগামী বছরে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আগামী বছর গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব ব্যবস্থায় অর্থাৎ এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম লুৎফুর রহমান বলেন, ‘অধিকাংশ শিক্ষকই গুচ্ছের বিপক্ষে, শিক্ষকদের বক্তব্যই শিক্ষক সমিতি তুলে ধরেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি, গুচ্ছের সমন্বয় কমিটিকেও প্রয়োজনে বিষয়টা জানাবো। শিক্ষকদের কথা হলো, একই দেশে দুইটা নিয়ম কীভাবে চলে, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এক নিয়মে আর বাকিগুলো এক নিয়মে- এভাবে হতে পারে না। তাছাড়া যে কারণে গুচ্ছ শুরু হয়েছিল, শিক্ষার্থীদের হয়রানি কমানো, সেটা সফল হয়নি।’
শর্ত না মেনে নিলে শিক্ষকদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মে মাসের মধ্যেই কিছু দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য। সেক্ষেত্রে তখন যদি শিক্ষকরা চান, আমরা সাধারণ সভা ডাকবো, সভায় শিক্ষকরা যেভাবে মত দেবেন সেভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়াও পরীক্ষা সেপ্টেম্বরে রাখার পরিকল্পনা আছে, যা অনেক দেরি হয়ে যায়। আমরা এগিয়ে নিয়ে আসার প্রস্তাবও রাখবো।’
