গ্রামীণ সমাজের চিরায়ত সালিশ কাঠামোর বদলে এখন রাজনৈতিক নেতা বা ছাত্রনেতাদের দ্বারা সালিশ-বিচার সম্পাদন এবং তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা সমাজে দুর্নীতির জন্য দায়ী।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরসি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ আয়োজিত ‘চ্যাঞ্জিং কনটেম্পরারি এগ্রেরিয়ান স্ট্রাকচার ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে এ তথ্য উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লন্ডনের সোয়াস ইউনিভার্সিটির প্রফেশনাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটস স্বপন আদনান। অধ্যাপক স্বপন আদনানের লেখা ‘গ্রামবাংলার রূপান্তর’ নামক গবেষণা গ্রন্থের আলোকে প্রবন্ধটি উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে অধ্যাপক স্বপন আদনান বলেন, গত কয়েক দশকে গ্রামের পরিবারগুলোর মধ্যে সমাজভিত্তিক সম্পর্কের দৃঢ়তা এবং বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সালিশ-বিচারের কার্যকারিতা নানা কারণে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। গ্রামের মানুষের মধ্যে বৈধ কর্তৃত্বের যে প্রথাগত ধারণা ছিল, তা থেকে ক্রমবর্ধমান বিচ্যুতি ঘটেছে। ক্ষমতার ভারকেন্দ্র সরে গেছে আগের সমাজ সালিশ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ, থানা-পুলিশ বা রাজনৈতিক পার্টির নেতা-কর্মীর হাতে। এভাবে ক্ষমতার বিন্যাস ও অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলো বদলে যাওয়ায় গ্রামীণ সমাজব্যবস্থার কার্যকারিতায় চিড় ধরেছে বহু ক্ষেত্রে।
“এখন কোথাও কোথাও থানার ওসি সালিশ করছে, রাজনৈতিক নেতা বা ছাত্রনেতারা সালিশ করছে। যার ফলে প্রাধান্য পেয়েছে পৃষ্ঠপোষকতা রাজনীতি, যেখানে মানুষ সমাজের কথা না ভেবে নিজের কথা ভাবে, স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের প্রতি আনুগত্য দেখাতে হয়। নেতা বা পৃষ্ঠপোষকের প্রতি আনুগত্য দেখানোর জন্য সমাজের দরিদ্র ও দুর্বল মানুষেরা বিভিন্ন খণ্ডদলে বিভক্ত হয়ে যায়। পৃষ্ঠপোষকতার ফলে যারা দুর্নীতি করছে, তারা মনে করছে অন্যায় করলে তাদের শাস্তি হবে। ফলে সমাজে দুর্নীতি বাড়ছে।”
অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, আগে দরিদ্রদের যে ক্ষমতার মাত্রা পরিলক্ষিত হতো কিন্তু এখন তা দেখা যায় না। বরং গ্রামাঞ্চলে তাদেরকে রাজনৈতিক নেতারা বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছে এখন। পিছিয়ে আছে, পিছিয়ে পড়া এবং পিছিয়ে রাখা এই তিনটি দিকের বিবেচনায় পিছিয়ে পড়াদেরকে বেশি গুরুত্ব দেয় রাজনৈতিক নেতারা। তাদেরকে পিছিয়ে রাখার জন্য গ্রামে অনেকবেশি কুচক্রী রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে সাদেকা হালিম বলেন, ইউপিএল থেকে প্রকাশিত বইটি নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এই বইটি ছাড়াও ড. স্বপন আদনানের জ্ঞানের যে পরিধি তা অনেক ব্যাপক। তিনি ড. স্বপন আদনানের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থাপনের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক সাদেকা হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল আই খান এবং অধ্যাপক এএসএম আমানুল্লাহ বক্তব্য দেন।