ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি ও এক শিক্ষার্থীকে আটক করে মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের চার নেতাকর্মীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। শনিবার (১৯ আগস্ট) রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বহিষ্কৃত চার নেতাকর্মী হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ ওরফে তন্ময়, শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ, শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখ ছাত্রলীগের কর্মী ও লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মহিবুল মমিন ওরফে সনেট এবং শের-ই-বাংলা হল ছাত্রলীগের কর্মী ও শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাকোয়ান সিদ্দিক ওরফে প্রাঙ্গণ।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থি, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়; এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদেরকে (চার জনের নাম পরিচয়) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছিল। তারাও বিষয়টি জানতেন। সেজন্য দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করায় দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদক তন্ময়কে একই অভিযোগে আগেও একবার বহিষ্কার করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।’
গত বৃৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তি হতে আসা এক শিক্ষার্থীকে প্রক্সি চুক্তির টাকার জন্য তুলে নিয়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ ওঠে ওই চার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ওঠে। এ ঘটনায় মতিহার থানায় দুটি মামলা করা হয়।
এর মধ্যে ছাত্রলীগের চার জনসহ আরও দুই-তিন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে শুক্রবার মামলা দায়ের করেন ওই শিক্ষার্থীর মা রেহেনা বেগম। অন্যদিকে জালিয়াতির অভিযোগ এনে একই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় অভিযোগকারী শিক্ষার্থী ও প্রক্সির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া আহসান হাবীব, ছাত্রলীগের ওই চার জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও দুই-তিন জনকে। এ ঘটনার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তন্ময় দাবি করেন, রাজনৈতিক চক্রান্তে তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সরাসরি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, যদি কেউ এ ঘটনা তদন্ত করে তার নাম পান, তবে তিনি প্রশাসন ভবনের সামনে ফাঁসিতে নিজেই ঝুলবেন।
এর আগেও ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ৫ আগস্ট মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনের ৯ দিন আগে ওই বছরের ৩ নভেম্বর সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।