রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা শশী ফেসবুক লাইভে এসে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একইসঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা, প্রক্টোরিয়াল বডি, প্রক্টর, ভিসি-প্রোভিসির নিয়োগ দেওয়াটা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ভুল সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফেসবুক লাইভে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ফারজানা শশী।
এ ব্যাপারে সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম বলেছেন, ‘শশীর ফেসবুক লাইভের বক্তব্য সীমা লঙ্ঘনের শামিল।’ তিনি বলেন, ‘ওই ছাত্রলীগ নেত্রী আমাদের নিয়োগ নিয়ে কথা বলেছে। আমরা যখন দল করেছি, যোগ্যতা অর্জন করেছি, তখন তার জন্মই হয়নি। আমাদের সম্পর্কে কথা বলতে হলে আমাদের বিষয়ে জানতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিয়োগ দিয়ে ভুল করেছে, এত বড় স্পর্ধা তার দেখানো উচিত হয়নি। এটি তার সীমা লঙ্ঘন করা বক্তব্য।’
সুলতান-উল-ইসলাম আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে তার ভাবা উচিত, তার এ বিষয়ে বলার এখতিয়ার রয়েছে কিনা। ওই শিক্ষার্থীর এ বিষয়ে বলার জায়গা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় চলবে তার নিজস্ব বিধিবিধান অনুযায়ী। কেউ যদি বিধি লঙ্ঘন করেন, তিনি যে-ই হোন না কেন, বিধি লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন।’
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে রহমতুন্নেছা হল ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না আক্তার ওরফে তন্বীর ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও অবৈধভাবে হলে থাকায় তাকে কক্ষ ছাড়ার নির্দেশ দেয় হল প্রশাসন। কিন্তু তিনি হল ছাড়েননি। পরদিন উল্টো হলের গেটে তালা দেন তামান্নাসহ হল ছাত্রলীগের নেত্রীরা। পরে মানবিক কারণে ওই নেত্রীকে হলে থাকতে দিয়েছে হল প্রশাসন।
এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ঐশী নামের এক ছাত্রলীগ নেত্রীর রুম সিলগালা করে হল কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করায় লাইভে সাংবাদিক ও প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফারজানা শশী। লাইভটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এ অবস্থায় তিনি লাইভটি সরিয়ে নেন। এ ব্যাপারে জানতে ফারজানা শশীর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
লাইভে ফারজানা শশী বলেছেন, ‘আমাদের ভিসি ওয়ান-ইলেভেনের পরিক্ষিত নেতা। এরকম ভিসি থাকার পরও কেন আপনারা হলের নেতীদের কোণঠাসা করতে চাচ্ছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি নাই তাই? এই সরকারের সময়ে কি কোনও নিয়োগই নাই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা, প্রক্টোরিয়াল বডি, প্রক্টর, ভিসি-প্রোভিসি আপনারা তো সবাই আছেন। আপনারা এসব নিয়ে কথা বলছেন না কেন? আপনারা যদি আমাদের পাশে না থাকেন, তাহলে আপনাদের আওয়ামী পরিষদের শিক্ষক হিসেবে তো নিয়োগ দেওয়াটাই শেখ হাসিনার ভুল সিদ্ধান্ত।’
লাইভে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ফারজানা শশী বলেন, ‘বিগত কয়েকদিন ধরে দেখছি, সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি চ্যানেল ও অনলাইন পোর্টালসহ সব জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে নিউজ যাচ্ছে। নিউজে এতো লাল-নীল-হলুদ রংঢং দিয়ে সাংবাদিকতা করা উচিত নয়। আপনারা ছাত্রলীগ নেত্রীদের হলে সাম্রাজ্য দ্বারা কি বুঝাচ্ছেন? সাংবাদিকতা করবেন স্মার্ট সাংবাদিকতা করেন। ছাত্রলীগ ট্যাগ লাগাতে পারলেই আপনাদের নিউজ হিট, তাই না।’
যে দল ক্ষমতায় থাকে তারা একটু বেশি সুবিধা পায় উল্লেখ করে শশী বলেন, ‘আপনারা যাকে নিয়ে কথা বলছেন, তিনি ওই হলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট। ছাত্রদলের এমন অনেক শিক্ষার্থী ছিল, যাদের ছাত্রত্ব ছিল না। তাও বছরের পর বছর হলে থেকেছে এবং অরাজকতা করেছে। জাসদ, বাসস, ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রশিবির বলেন; যারা নেতৃত্বে থাকে তারা একটু সুযোগ-সুবিধা পায়। আর যেখানে আমাদের সরকার এখনও ক্ষমতায় আছে। যে দলই যখন ক্ষমতায় থাকুক, তারা একটু সুবিধা পায়—এটাই স্বাভাবিক।’
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘এই ধরনের অর্বাচীন বক্তব্য সুখকর নয়। এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু বলার নেই। তবে আমাদের সবার কথা বলার আগে লক্ষ্য রাখা উচিত, আমি কী করছি, কী বলছি, আমার অবস্থান কী। তা ছাড়া আমি দলীয় পরিচয়ে হাইলাইটস হতে চাই না।’
ছাত্রলীগের ওই নেত্রী এমন মন্তব্য করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি নির্ভর করছে তার শিক্ষাগত জ্ঞান, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণা ও শিক্ষকদের প্রতি সম্মানবোধ কতটুকু, তার ওপর। আমাদের ৯৫ শতাংশই শিক্ষার্থীই ভালো। তাদের সঙ্গে আমি মিশেছি ও খেলাধুলা করেছি। তবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি, কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর (৫ শতাংশ) ডাজেন্ট মেক সেন্স।’
সাংবাদিকদের বিষয়ে মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) সভাপতি তৌসিফ কাইয়ুম বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বর্তমানে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য চলছে। ছাত্রত্ব না থাকলেও হলে থাকছেন ছাত্রলীগের নেত্রীরা। এসব অনিয়ম ঢাকতে সাংবাদিকদের ওপর দায় চাপাচ্ছেন তারা।’