ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্য সেন হলের ‘সূর্য সেন বিতর্কধারার’ বর্তমান সভাপতি তানভীর হোসেন শান্তর বিরুদ্ধে উপাচার্যকে বিতর্কিত করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটিকে বিতর্কিত করার অভিযোগ উঠেছে।
শান্ত ডিবেটিং ক্লাব অব রউফ কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে তার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নেতৃত্বে আসতেই সংগঠনকে বিতর্কিত করছেন তিনি।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, ডিবেটিং ক্লাব অব রউফ কলেজের (ডিসিআরসি) সভাপতি থাকাকালীন 'ঘৃণা ও প্রতিহিংসার রাজনীতিকে উসকে দেওয়া’, ‘নবীন ও কতিপয় প্রবীণ সদস্যের মাঝে দলগত রাজনীতির উন্মেষ ঘটানো’, 'কতিপয় অনুজ সদস্যের মাঝে অন্যায়মূলক সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং তা প্রদানে বাধা দিলে অন্য দায়িত্বরত কার্যপরিষদের সদস্য ও অনুজদের ক্লাব এবং বিতর্ক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে মর্মে অনৈতিক হুমকি প্রদান’-এর কারণে শান্তকে ২০১৯ সালে ডিসিআরসি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
আরও নানা অভিযোগ এনে শান্তকে সে সময় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ডিসিআরসি। তাদের ফেসবুক পেজে ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নোটিশ প্রকাশ করা হয়, যা এই প্রতিবেদন লেখা অবধি পেজে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে মাস্টার দা সূর্যসেন হলের বিতর্ক ক্লাবেও সভাপতি হওয়ার জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঘোষিত কমিটিকে অমান্য করে ক্লাবে তালা লাগিয়ে দেওয়া, ক্লাবের মডারেটরসহ অন্য শিক্ষকদের পথরোধ করে লাঞ্ছনা করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মেডিক্যালের সামনে ভাসমান দোকান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। টাকা পরিশোধ না করায় রবিউল নামের এক দোকানিকে হুমকি দেওয়ার একটা অডিও ক্লিপ এই রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে।
এখন উপাচার্যের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার ডিউডিএসের বার্ষিক সাধারণ সভায় নির্বাচনকেন্দ্রিক বিভিন্ন তারিখ ঘোষণার পরপরই পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রত্যেক হলের অংশগ্রহণে এই পদ্ধতিতেই নির্বাচন হয়ে আসছে।
জানা যায়, শান্ত ও তার সহযোগীদের দাবির পর গত বৃহস্পতিবার এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান উপাচার্যকে বিব্রত করতে সভার সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে ইউটার্ন নিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিতার্কিক জানান, গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন হলে শান্ত নিশ্চিত হারবে জেনে বর্জনের পথ অবলম্বন করে অস্বাভাবিক উপায়ে নেতৃত্বে আসতে চান; যেভাবে ইতোপূর্বে সূর্যসেন বিতর্কধারায়ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক বিতার্কিক বলেন, শান্তর স্বভাব পরিবর্তন হয়নি। কলেজজীবন থেকেই বিভিন্ন ক্লাবের নেতৃত্বে আসার জন্য তার যে নীতিবিবর্জিত কাজ তা আমরা শুনেছিলাম। পরে সূর্যসেন বিতর্কধারার গত কমিটি গঠনের সময় তার প্রতিফলন দেখেছি। এবার ডিউডিএসের মতো একটা প্রেস্টিজিয়াস জায়গায় দেখতে পাচ্ছি। ডিউডিএসের মতো একটা পবিত্র অঙ্গনকে এভাবে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করছে দেখে খারাপ লাগছে। শুনেছি সাবেক গুটি কয়েক বড় ভাই তাকে সাহায্য করছেন।
এ বিষয়ে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন জানান, ডিবেটিং সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল স্যারের নির্দেশনায় গঠনতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ। সঠিক সময়ে ডিবেটিং সোসাইটির চিফ মডারেটর এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন ম্যাডামের তত্ত্বাবধানে উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে সব হলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে বলে আমি মনে করি।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে শান্ত বলেন, নির্বাচনের সময় প্রার্থীর গায়ে যেমন রংচটা করা হয়, তেমনি এসব অভিযোগ। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন সব অভিযোগ। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন এবং বার্ষিক সাধারণ সভা হচ্ছে না বলে আমাদের এই মানববন্ধন। আমরা লিখিতভাবে উপাচার্য ও মডারেটর বরাবর আমাদের অভিযোগ জানাবো। ভাসমান দোকান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগও মিথ্যা।
নির্বাচনে পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ ও নির্বাচনে প্রভাব নিয়ে জানতে চাইলে চিফ মডারেটর মাহবুবা নাসরিন বলেন, আমি হচ্ছি চিফ মডারেটর এবং নির্বাচন কমিশনার। আমি নির্বাচন নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারবো না। আর পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ আমার কানে আসেনি। আমি ঠিক বলতে পারছি না। আমার আরও দুজন সহকারী মডারেটর আছে, তারা সবকিছু দেখে, আমি চূড়ান্ত স্বাক্ষর দিই। আমার মনে হয় না পক্ষপাতদুষ্টের কিছু আছে। যতটুকু জানি নিয়ম মেনেই সবকিছু হচ্ছে। আর কিছু হলে আমি সন্ধ্যায় জানতে পারবো।