X
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নিজামীর জানাজা নিয়ে ‘জনপ্রিয়তা’র প্রচারণা!

উদিসা ইসলাম
১২ মে ২০১৬, ১৫:৫১আপডেট : ১২ মে ২০১৬, ১৯:৩৪

নিজামীর জানাজা (শিবিরের ফেসবুক থেকে)


জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর তার জানাজার ছবি দেখিয়ে জনপ্রিয়তার মানদণ্ড নির্ধারণে মেতেছেন দলটির কর্মী-সমর্থকরা। নিজামীর একাত্তরের ভূমিকার ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশি তার জানাজায় মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখিয়ে তাকে ‘জনপ্রিয়’ নেতা হিসেবে সামনে আনতে সাইবার জগৎকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়া হচ্ছে। যদিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ব্যবহৃত অনেক গায়েবানা জানাজার ছবির কোনও স্থান লেখা নেই। আর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাখো মানুষের অংশগ্রহণে নিজামীর কোনও জানাজা হয়নি। পাবনা কিংবা চট্টগ্রামে তার জানাজায় অংশ নিয়েছেন মাত্র কয়েক হাজার নেতাকর্মী।

মানবতাবিরোধী অপরাধী মতিউর রহমান নিজামীকে ‘জনপ্রিয়’ হিসেবে দেখানোর প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পোস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশেও নানা মন্তব্য করা হয়েছে। এমনকি বিএনপির নিশ্চুপ হয়ে থাকা নিয়েও আছে নানা উসকানিমূলক মন্তব্য।




নেতার জানাজায় সমর্থকরা উপস্থিত থাকবেন এটা যেমন ঠিক, তেমনই যে জাতীয় পতাকার বিরোধিতা করে একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে নিজামী হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন সেই পতাকার ওপর তার মুখের ছবি দেওয়ার কোনও অধিকার তাদের নেই বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অ্যাক্টিভিস্ট ও গবেষকরা। তারা মনে করেন, এ ধরনের আচরণ ধৃষ্টতার সামিল। এজন্য উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।

জামায়াতের কর্মী-সমর্থকদের দাবি, পাবনার সাঁথিয়ায় যে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে লাখো মুসল্লি উপস্থিত হয়ে তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়েছেন। এছাড়া একের পর এক গায়েবানা জানাজার ছবি দিয়ে চালানো হচ্ছে জনপ্রিয়তার প্রচারণা।


বাংলা ট্রিবিউনের পাবনা প্রতিনিধি ইমরোজ খন্দকার বলেন, সাঁথিয়ায় নিজামীর জানাজায় এক থেকে দেড় হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এরপর আরও দু’টি গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই গ্রামে, সেখানে বেশকিছু মানুষ উপস্থিত হলেও তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ নন।

চট্টগ্রামে জানাজায় উপস্থিতি বিষয়ে সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন বলেন, প্যারেড গ্রাউন্ডে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত হন, যাদের বেশিরভাগই নেতাকর্মী। সেখানে জামায়াত মহানগর শাখার আমীর শামসুল ইসলাম নিজামীর ফাঁসিকে হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে নেতাকর্মীদের প্রতিশোধ নিতে আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, এই এলাকা জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত। তারা নারায়ে তাকবির ধ্বনি দিয়ে প্যারেড গেটের বন্ধ তালা ভেঙে গতকাল সেখানে জানাজার নামাজ পড়েন।

মাসুদের স্ট্যাটাস এদিকে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে ক্ষমতার পালাবদলের ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী। তিনি ফেসবুক পেজে ওমর মুখতার (র.) ও মুসোলিনির দুটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ব্যবধান মাত্র ১৪ বছরের’। ফাঁসির দড়িতে ঝুলছেন মরু সিংহ শহীদ ওমর মুখতার (র.)। ১৯৩১ সালে তাকে বিনা অপরাধে ফাঁসি দিয়েছিলেন ইতালির বেনিতো মুসোলিনি। এবার দ্বিতীয় ছবিটার দিকে তাকিয়ে দেখুন। এটা সেই খুনি মুসোলিনির ছবি। ১৯৪৫ সালে তাকে ফাঁসি দিয়ে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখে বিক্ষুদ্ধ জনতা। ব্যবধানটা মাত্র ১৪ বছরের! আমরাও অপেক্ষা করব। শুধু ১৪ বছর নয় প্রয়োজনে যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করব নতুন সূর্যের।
এদিকে জানাজায় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের কেউ কেউ মোনাজাতে হাত তুলেছেন এমন ছবি দিয়ে তিনি সেটাকেই আদর্শিক জয় বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
কেবল নিজামীকে জনপ্রিয় দেখানোই না, প্রচারণায় জায়গা পেয়েছে বিএনপির নিশ্চুপ থাকার বিষয়টিও। নিজামীর ছেলে নাজিব মোমেন ফেসবুকে হাসান ইকবালের একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন। যেখানে বিএনপি এতকিছুর পরও জোটের শরিকের হয়ে কথা না বলায় সমালোচনা করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘কিসের এত ভয় আপনার, ম্যাডাম? আপনার হারানোর কী আছে? আপনার কাছে আহ্বান, আপনি আপনার স্বরূপে ফিরে আসুন। দেশ আজ পরিষ্কারভাবে দু’ভাগে বিভক্ত: শোষক আর শোষিত। আপনার মন ভালোভাবেই জানে আজ এই ঐতিহাসিক সময়ে শোষিতের পক্ষে অবস্থান নেওয়া ছাড়া কোনও বিকল্প আপনার নেই। আপনি আপনার মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করুন, দালালদের সঙ্গে নয়। তাহলেই আপনি, সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারবেন। না হলে ইতিহাসের কাঠগড়ায় আপনাকেও একদিন দাঁড়াতে হবে। দালালেরা সেদিন আপনাকে রক্ষা করবে না!’

পতাকায় নিজামীর মুখ পতাকায় নিজামীর মুখ বসানোকে ধৃষ্টতা বলছেন অ্যাক্টিভিস্টরা

একের পর এক মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচার হওয়া এবং এ ধনের প্রচারণার প্রচেষ্টা নিয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘গণহত্যার দায়ে, ধর্ষণের অপরাধে নিজামী-মুজাহিদদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় শোকে মাতম করছে পাকিস্তান। তাতে করে আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না, জামায়াত কোন দেশের দল। তাদের সম্পর্ক তখনও ছিল, এখনও আছে। ১৯৭৫ এর পর এ দলটি পুনর্বাসিত হওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে যে সম্পদ ও কর্মীবাহিনী তৈরি করেছে, তারাতো এখনও সেই আদর্শ নিয়েই আছে। ফলে তাদের নেতার জানাজায় তারা এক জায়গায় হবে, তাদের শহীদ মর্যাদা দিতে চেষ্টা করবে। এর জন্য দল হিসেবে জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করা জরুরি যেন তারা আগামীদিনে মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃত করার চেষ্টাও না করতে পারে।
/এজে/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৭ দেশের জাহাজ চলাচলে করতে হবে না আলাদা চুক্তি
৭ দেশের জাহাজ চলাচলে করতে হবে না আলাদা চুক্তি
নতুন কোচ স্লট, নিশ্চিত করলো লিভারপুল
নতুন কোচ স্লট, নিশ্চিত করলো লিভারপুল
আজ দ্বিতীয় ধাপের ভোট, ইসির চিন্তা ভোটার উপস্থিতি
উপজেলা নির্বাচনআজ দ্বিতীয় ধাপের ভোট, ইসির চিন্তা ভোটার উপস্থিতি
টাকা আত্মসাৎ: গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তার দুই বছর কারাদণ্ড
টাকা আত্মসাৎ: গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তার দুই বছর কারাদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত
রাইসির বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ভিডিও প্রকাশ
রাইসির বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ভিডিও প্রকাশ
ঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, জানালেন ওবায়দুল কাদেরঢাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে
ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া
ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া