X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের বিবৃতি ও কয়েকটি কথা

শেখ শাহরিয়ার জামান
১৪ মে ২০১৬, ০২:৩৯আপডেট : ১৪ মে ২০১৬, ০২:৪৫

পাকিস্তানের পতাকা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড গত মঙ্গলবার রাতে কার্যকর করা হয়।পরের দিন বুধবার পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি দেয়। বৃহস্পতিবার ঢাকা পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সুজা আলমকে তলব করে এ বিবৃতির কড়া প্রতিবাদ জানায়।
পাকিস্তানের এই বিবৃতির ভাষা ও শব্দের ব্যবহার পর্যালোচনা করলে ইসলামাবাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে,নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তার ‘এলেজড ক্রাইম’-এর জন্য।
ক্যামব্রিজ অভিধান অনুযায়ী ‘এলেজ্ড’ শব্দটি ব্যবহার করা হয় কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা এবং অপরাধটি প্রমাণিত হয়নি-এমন অর্থে।
আরও পড়তে পারেন: জামায়াত নেতাদের ফাঁসির বিষয়টি জাতিসংঘে তুলবে পাকিস্তান
মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন মামলা চলার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করেন। এরপর  উচ্চ আদালতে আপিল ও রিভিউ পিটিশনের পরে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রায় হয়ে যাওয়ার পরে ‘এলেজ্ড ক্রাইম’ শব্দটি আর প্রযোজ্য থাকে না। কেননা, বিচারক সন্দেহাতীতভাবে নিশ্চিত হয়েই রায় ঘোষণা করেন।  
বিবৃতিতে আরও  বলা হয়েছে, নিজামীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের আগে সংঘটিত হয়েছে।
নিজামীর বিরুদ্ধে একটি বড় অভিযোগ ছিল, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা ও সংঘটনের এবং এর বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। বাংলাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয় ১৪ ডিসেম্বর।

এ বিবেচনায় পাকিস্তানের বিবৃতি যে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের আগে সংঘটিত হয়েছে,সেটি সম্পূর্ণ ভুল।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তার একমাত্র পাপ যে নিজামী পাকিস্তানের সংবিধান ও আইন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।

এখানে পাকিস্তান ‌‌‌‌‌‌‌‌‌পাপ শব্দটি ব্যবহার করে নিজামীর দোষকে লঘু করার চেষ্টা করেছে। প্রতিটি অপরাধ পাপ, কিন্তু প্রতিটি পাপ অপরাধ নয়।

পাকিস্তানের বিবৃতিতে ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অপব্যাখ্যা  দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ‌‌‌‌সাধারণ ক্ষমার আওতায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে অগ্রসর হবে না।

এটি আংশিক বক্তব্য এবং শুধু এ অংশটুকু প্রচার করলে এর গোটা চুক্তির মর্ম বিকৃত হয়ে যায়।

ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। এ চুক্তির কোথাও সামান্যতম ঈঙ্গিতও নেই বাংলাদেশি যারা যুদ্ধাপরাধী, যারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে এবং গণহত্যা সংঘটিত করেছে তারা  অব্যাহতি পাবেন একং তাদের বিচার পরিহার করা হবে।

আরও পড়তে পারেন: অভিনন্দনে কৃতজ্ঞচিত্তে ভাসছে বাংলা ট্রিবিউন
উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে যখন চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় এবং ১৯৭৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত অনেক স্বাধীনতাবিরোধী বাংলাদেশি জেলে ছিলেন। কিন্তু তখন পাকিস্তান কোনও বিবৃতি দেয়নি বা কোনও মন্তব্য করেনি।

 প্রশ্ন হচ্ছে, এ প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান এ ধরনের বিকৃত বিবৃতি কেন দিচ্ছে?

এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এবং মৃত্যদণ্ডের ঘটনায় শঙ্কিত পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষ।

এজন্য পাকিস্তান সবসময় যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া ও মৃত্যদণ্ডের বিরোধিতা করে আসছে।  শুধু তাই নয়, তারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা করেছিল সেটি পর্যন্ত অস্বীকার করছে।

এর আগে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলি আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের পর গত ডিসেম্বরে পাকিস্তান একটি বিবৃতি প্রকাশ করে, যেখানে তারা বাংলাদেশে গণহত্যা সংঘটনের কথা অস্বীকার করে।

বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী শঙ্কিত। কারণ বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ায় যে স্বাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে তা ভবিষ্যতে এ ধরনের মামলায় ব্যবহার করা যাবে।

১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী বা যারা বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং যাদের বিচার পাকিস্তান করেনি, তাদের বিরুদ্ধে যদি কখনও কোনও আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা হয় তবে বাংলাদেশের আদালতে উপস্থাপিত স্বাক্ষ্যপ্রমাণও ব্যবহার করা যাবে।

এটা ঠিক ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর অনেকে মারা গেছেন বা অবসর জীবনযাপন করছেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা তার আগে সংঘটিত অনেক যুদ্ধাপরাধের জন্য এখনও অনেক দেশকে ক্ষমা চাইতে বলা হচ্ছে।

নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে যদি কেউ বিচার করেন তবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী তার নিজের দেশের লোকের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এ ঘটনার দায় নিতে চায় না বলেই তারা বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে শঙ্কিত। এ জন্য গণহত্যার বিষয়টি তারা অস্বীকার করে।

আরও পড়তে পারেন: দুই বছর পূর্তি তিন বছরে পা
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ কোর্টে কোনও মামলা দায়ের করা যাবে না। কারণ ইসলামাবাদ এ কোর্টকে স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু এটি ছাড়াও নেদারল্যান্ডস বা আরও কয়েকটি ইউরোপিয়ান কোর্টে যে কোনও পাকিস্তানির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত মামলা করা যাবে।

১৯৭১ সালের পর অনেক যুদ্ধশিশুকে বিভিন্ন ইউরোপিয়ান পরিবার দত্তক নিয়েছিল এবং এ শিশুদের মধ্যে কেউ যদি তার পিতৃপরিচয় জানার জন্য মামলা করে তবে পাকিস্তান যে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছিল সেটি আন্তর্জাতিক কোর্টে উপস্থাপন করা যাবে।

/এমএসএম/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
শিবনারায়ণের চোখে আলো দেখছেন মশিউর ও কালাম
শিবনারায়ণের চোখে আলো দেখছেন মশিউর ও কালাম
ঢাকার কোথাও হালকা বৃষ্টি, কোথাও ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া
ঢাকার কোথাও হালকা বৃষ্টি, কোথাও ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া
সূর্যকুমারের ছক্কায় সেঞ্চুরি ও মুম্বাইয়ের জয়
সূর্যকুমারের ছক্কায় সেঞ্চুরি ও মুম্বাইয়ের জয়
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস