X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলা ট্রিবিউনকে বিজিবি’র ডিজি

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত খুবই জটিল

জামাল উদ্দিন
২০ অক্টোবর ২০১৬, ১০:৩৯আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০১৬, ২১:০৪

মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় অনেক জটিলতা রয়েছে। যে কারণে সীমান্তে দু’দেশের বাসিন্দা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলোকে নানামুখী সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। একদিকে আইনি বাধ্যবাধকতা, অন্যদিকে মানবিকতা। এসব দিক মাথায় রেখেই কাজ করে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে বিজিবি’র  মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদও স্বীকার করেন সীমান্ত জটিলতার কথা। তিনি বলেন, ‘সব বিষয় মাথায় রেখে আমরা সীমান্ত সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

রবিবার বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বিজিবি’র  মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের সীমান্ত এত জটিল যে, দেখা গেলো একই বাড়ির মধ্যে বোনের ঘরটা পড়েছে ভারতে, ভাইয়ের ঘরটা পড়েছে বাংলাদেশে। ছোট ভাই থাকে বাংলাদেশে, বড় ভাইয়ের ঘরটা পড়েছে ভারতে। একজনের কিচেন এ পাশে, আরেকজনের টয়লেট ওপাশে। এ ধরনের জটিল পরিস্থিতিও কিন্তু আমাদের সীমান্তে আছে। সেক্ষেত্রে আমরা এটাকে বলি ‘ইন-এডভার্টেন ক্রসিং’। অর্থাৎ অনিচ্ছাকৃত পারাপার। এটা একটা অনিচ্ছাকৃত অন্যায়। ইচ্ছাকৃত অন্যায় নয়।’

বিজিবি’র ডিজি বলেন, ‘এমন সীমান্ত এলাকার মানুষ তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে যায়, বা কারও মৃত্যু সংবাদ পেলে  কোনও অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যায়। ওপারের কিংবা এপারের বাজারটা যদি কাছে থাকে তখন ভাবে যে, সেখান থেকে একটু বাজার করে নিয়ে আসি, বা ওখানে চিকিৎসাটা ভালো তাই একটু চিকিৎসা করিয়ে আসি। এমন অবস্থায় তাদের যদি আমরা অ্যারেস্ট করে পুলিশে দেই, তখন কমপক্ষে ছয়মাস থেকে এক বছর জেল খেটে বেরিয়ে আসতে হবে। তার ভোগান্তিটা হবে অনেক বেশি।’

মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘সীমান্ত পারাপারের ক্ষেত্রে দেখা যায় বেশিরভাগ লোকই নিরীহ। তখন মানবিক কারণে এই নিরীহ লোকগুলোকে পুলিশে না দিয়ে আমরা পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে উভয়পক্ষ হস্তান্তর করি। তবে আমরা তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে সাবধান করে দেই যে, ভবিষ্যতে এমন হলে তোমার বিরুদ্ধে মামলা হবে। অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার অন্যায়। এ ধরনের কাজ ভবিষ্যতে না করার জন্য তাদের বলে দেই। গত তিন থেকে সাড়ে তিন বছর ধরে আমরা প্রতিটি মিটিংয়ে এ মানবিক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে আসছি।’

আজিজ আহমেদ বলেন, ‘অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারকারীদের মধ্যে যদিও কেউ কেউ মদ কিংবা ফেনসিডিল নিয়ে ধরা পড়ে বা আমরা কোনও ভারতীয়কে ধরলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি, বিএসএফও আমাদের বাংলাদেশি কাউকে ধরলে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। তখন মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার কোনও সুযোগ থাকে না।’ তিনি বলেন,  ‘‘মানবিক কারণগুলো সামনে রেখেই আমরা মিয়ানমার সীমান্তের মতো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তেও ‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’ চালু করা যায় কিনা, সেটা নিয়েও আলোচনা করেছি। এ নিয়ে উভয়পক্ষই নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। তবে এ বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।’’ সীমান্ত

মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘‘বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এক ধরনের। আর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত আরেক ধরনের। মিয়ানমার সীমান্তে একটা ‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’ দেওয়া হয়। যারা ওদিক থেকে এদিকে আসে কিংবা এদিক থেকে ওদিকে যায়, ইমিগ্রেশন থেকে তাদের ২৪ ঘণ্টা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেয়াদের শর্ট ট্রিপের জন্য একটা অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদন নিয়ে তারা কক্সবাজার কিংবা আশে-পাশের এলাকায় ঘুরে ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করে আবার চলে যায়। কতজন  এলো আর গেলো আমরা শুধু সেটা তদারকি করি। এ পদ্ধতিটা বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের আছে। আমাদের লোকজনও যখন মংডু বা ওইসব এলাকাতে যায়, তারা সেখানে গেলে একটা স্বল্প সময়ের জন্য ভিজিট পারমিট পায়। কাজ শেষে আবার সেটা জমা দিয়ে তারা বাংলাদেশে ফিরে আসে। এটা প্রতিদিনই হচ্ছে ওই সীমান্তে। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এই ব্যবস্থাটা নেই। সেজন্য আমাদের সেখানে ভিসা নিয়ে যেতে হয়। কেউ ভিসা ছাড়া ওইপারে গেলে সেটা হবে অবৈধ। তখন যে দেশের নাগরিকই হোক না কেন, ওই দেশের প্রচলিত আইনে কিন্তু সে অপরাধী। তাকে তারা অ্যারেস্ট করতে পারবে। বৈধ ভিসা ছাড়া আমাদের দেশে এলেও আমরা তাকে অ্যারেস্ট করে পুলিশে দিতে পারব।’

গরু পাচার ও সীমান্ত হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ নিয়েও উভয় পক্ষে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। ওই দেশের সাংবাদিকরাও এ নিয়ে কথা বলেছেন। কারণ, এটা সবাই বুঝতে পেরেছে যে, সব গরুতো শুধু সীমান্তে উৎপন্ন হয় না। এখানে যে ফার্মিং হয়, তাও নয়। এটা কিন্তু ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকেই আসে। সেক্ষেত্রে ভারতের অন্যান্য প্রদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও এ বিষয়ে দায়িত্ব রয়েছে। এ জিনিসগুলো আলোচনা হয়েছে। এ জন্য আমরা বলেছি, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হলে গরু পাচার বন্ধ করতে হবে। সীমান্তে ৯৫ ভাগ হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ এ গরু পাচার।’ তিনি বলেন, ‘বিজিবি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, অন্য জায়গা থেকে যেন সীমান্তের কাছাকাছি গরু আসতে না পারে, সেজন্য এগুলোর সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের দায়িত্ব নিতে হবে।’

ফেলানী হত্যাকাণ্ডের মতো সীমান্তের সব হত্যাকাণ্ডের বিচার কেন চাওয়া হয় না—জানতে চাইলে বিজিবি’র মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় যেটা জানতে পারি, তাহলো যারা সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে বিএসএফ। যাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তাদের বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়। তারা তাদের এসব কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যখন প্রতিবাদ পাঠাই, তখন তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেটি আমাদের জানানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়। প্রতিবাদলিপি যখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওদের ওখানে যায়, সেখানেও কিন্তু এটা আলোচিত হয়। কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, সেগুলোও বলা হয়ে থাকে।’

বিজিবি’র ডিজি বলেন, ‘গত মে মাসে ডিজি পর্যায়ে ঢাকায় যে সীমান্ত সম্মেলন হয়েছিল, সেই সম্মেলনের পর থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে—সীমান্তে কোনও হত্যাকাণ্ড হলে আমরা দুই পক্ষই ঘটনাস্থলে সরজমিন গিয়ে পরিদর্শন করব। দেখে যদি মনে হয়, এ হত্যাকাণ্ডটা এড়ানো সম্ভব ছিল কিংবা সঠিক হয়নি, এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন- 


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা বোর্ডের রশি টানাটানিতে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

/এমএনএইচ/আপ-এফএস/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পাচ্ছেন শাকিব খান!
আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা পাচ্ছেন শাকিব খান!
১৭ রোগীকে হত্যার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে এক নার্সকে ৭৬০ বছরের কারাদণ্ড
১৭ রোগীকে হত্যার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে এক নার্সকে ৭৬০ বছরের কারাদণ্ড
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সফলতায় কিছুটা দায়মুক্ত হয়েছি: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সফলতায় কিছুটা দায়মুক্ত হয়েছি: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী
ক্রিমিয়ায় মার্কিন নির্মিত ৪টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিতের দাবি রাশিয়ার
ক্রিমিয়ায় মার্কিন নির্মিত ৪টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিতের দাবি রাশিয়ার
সর্বাধিক পঠিত
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: স্টেশন মাস্টারসহ ৩ জন বরখাস্ত
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: স্টেশন মাস্টারসহ ৩ জন বরখাস্ত
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে