আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে জঙ্গিদের আটকের সময় তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক, অস্ত্রের পাশাপাশি ‘ইসলামি ও জিহাদি বই’ উদ্ধারের ঘটনা অহরহ ঘটছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা এসব বইয়ে ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদে উৎসাহিত করা বক্তব্য থাকে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জঙ্গিবাদকে উস্কে দেওয়া বিকৃত বইগুলোকে ঢালাও ভাবে ‘ইসলামি ও জিহাদি বই’ বলায় বিব্রত দেশের আলেমরা। একই সঙ্গে ধর্মের অপব্যাখ্যা ও জঙ্গিবাদের উস্কে দেয় এমন বইয়ের তালিকা প্রকাশ নিষিদ্ধের দাবিও করেছেন তারা।
পুলিশ সূত্র জানায়, দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। এসময় জঙ্গিদের আস্তানা থেকে বিস্ফোরক, অস্ত্র, ইলেকট্রনিক ডিভাইসের পাশাপাশি জিহাদি বই, ধর্মীয় উসকানিমূলক বই উদ্ধার করছে তারা। জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া এসব বইয়ের বেশির ভাগই ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদে উৎসাহ দিয়ে লেখা। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে তাদের মানুষ হত্যায় উদ্বুদ্ধ করা হয়। এসব বইয়ের মধ্যে রয়েছে উগ্রপন্থী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ জঙ্গি নেতাদের লেখা বই। মুফতি জসীমউদ্দিন মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন। এই মারকাজুলের অধীন তার ওয়াজ, জুমার নামাজের খুতবা সিডি-ডিভিডি আকারেও প্রচার করা হতো। এছাড়া তার বক্তব্য বই আকারেও প্রকাশ করা হয়। মূলত ধর্মের নামে উগ্র মতবাদ এবং তরুণদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা হয় এসব বইয়ের মাধ্যমে।
তবে জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া এসব বইকে ইসলামি ও জিহাদি বই বলা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন দেশের আলেমরা। তারা বলছেন, যেসব বই উদ্ধার হচ্ছে সেসব বইয়ে ধর্মের অপব্যাখ্যা রয়েছে। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে আগ্রহী করা হয়। কিন্তু ইসলামি বইয়ে সন্ত্রাসবাদের কোনও স্থান নেই। ঢালাও ভাবে উস্কানিমূলক বইগুলোকে ইসলামি বই, জিহাদি বই বলা হলে ধর্মীয় বইয়ের প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়, ঘৃণার সৃষ্টি হবে।
এ বিষয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ইসলামের সঙ্গে জঙ্গিবাদের কোনও সম্পর্ক নেই এটা সুস্পষ্ট। ধর্মের নামে জিহাদের ডাক দেওয়া হলেও মূলত ধর্মের অপব্যাখা দিয়ে যুবকদের বিপথগামী করা হয়। জঙ্গিরা জিহাদ বলে নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালালেও এটা সন্ত্রাসবাদ। ইসলামে জিহাদ আছে, তবে জিহাদের সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা আছে। জঙ্গিদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে ইসলামের জিহাদকে সঙ্গে মিলিয়ে এক করে দেখার সুযোগ নেই। এজন্য সন্ত্রাসবাদে আগ্রহী করে এমন কোনও বই ‘জিহাদি বই’ হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত এসব বইকে জিহাদি বই না বলে উগ্রবাদী বই কিংবা জঙ্গিবাদি বই বলা। সবার সর্তক থাকা উচিত, উগ্রবাদীদের বই এড়িয়ে চলা উচিত।
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, দেশকে ইসলাম শূন্য করার গভীর চক্রান্ত চলছে। একদিকে সন্ত্রাসবাদী চক্র নিরীহ, নিরাপরাধ মানুষ খুন করছে। অন্যদিকে, ইসলামের গায়ে সন্ত্রাসের তকমা লাগানোর অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। বুঝতে হবে, জিহাদ আর সন্ত্রাস এক নয়। দুটি বিষয় ভিন্ন ভিন্ন জগতের, ভিন্ন ধারা ও নীতির। এ দুয়ের মধ্যে আসমান জমিনের পার্থক্য। সব অমানবিকতা, জুলুম ও সন্ত্রাস নির্মূল করে ‘আল্লাহ নির্দেশিত জিহাদ’। অমানবিকতা, নৈরাজ্য ও ফেতনা সৃষ্টি করে ‘সন্ত্রাস’। নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা প্রকাশ করা উচিত। ‘জিহাদি’ বই নাম দিয়ে যাকে তাকে গ্রেফতার জনজীবনে ভীতির সৃষ্টি করবে। ইসলামি বই, জিহাদি বই না বলে এসব বইকে নিষিদ্ধ বই বলা উচিত। নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা প্রকাশ না হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে আলেম ও মাদ্রাসা ছাত্রদের হয়রানির সম্মুখীন হবে।
কোন বইগুলো রাখা ও পড়াকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বই পড়ে পর্যালোচনা করা হয়। যেসব বইয়ে জঙ্গিবাদের উস্কানিমূলক তথ্য থাকে সেগুলো জব্দ করা হয়। এছাড়া, এখন পর্যন্ত জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত যাদের আটক করা হয়েছে তাদের লেখা কোনও বই যদি থাকে সেগুলোও জব্দ করা হয়। দেখা গেছে, এসব বইয়ে ধর্মের ভুল ব্যাখা দিয়ে ধর্মমনা সাধারণ যুবকদের জঙ্গিবাদে আগ্রহী করে তোলা হয়। সবার উচিত এ বিষয়ে সর্তক থাকা।
/সিএ/টিএন/