তৃতীয় শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’তে ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতাটি ভুলভাবে প্রকাশিত হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এর আগে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এই ভুলের বিষয়টিকে সুকৌশলে বাংলা একাডেমি’র ঘাড়ে চাপাতে চেয়েছিলেন। তাই এখন প্রশ্ন উঠেছে, মন্ত্রীর বক্তব্যের পর এর দায় এনসিটিবি নেবে কি না?
এর আগে কুসুমকুমারী দাশের লেখা বহুলপঠিত কবিতাটি বদলে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এনসিটিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ছাপা সংস্করণই শুদ্ধ। তখন আরও দাবি করা হয়, কবিতাটির আগের রূপটিকে বাংলা একাডেমির পরামর্শে পরিবর্তন করা হয়েছে। আগে যা ছাপার অক্ষরে ছিল সেটিই বরং ভুল।
কুসুমকুমারী দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘আদর্শ ছেলে’র আদি সংস্করণের প্রথম লাইনটি হলো— ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’। তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইতে এই লাইনকে উল্টে লেখা হয়েছে— ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে’। কবিতার মধ্যেও রয়েছে নানা ধরনের শব্দগত পরিবর্তন।
কবিতার চতুর্থ লাইনে কুসুমকুমারী লিখেছেন, ‘মানুষ হইতে হবে’- এই তার পণ। বিকৃত রূপে ছাপা কবিতায় এই লাইনে ‘হইতে’ শব্দটিকে সম্পাদনা করে ‘হতেই’ লেখা হয়েছে। মূল কবিতার নবম লাইনে লেখা আছে, ‘সে ছেলে কে চায় বল কথায় কথায়’। এই লাইনের ‘চায়’ শব্দটিকে বদলে দেওয়া হয়েছে ‘চাই’ শব্দটি দিয়ে। কবিতার একাদশ লাইনে কুসুমকুমারী দাশ লিখেছিলেন ‘হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান’। এই লাইনে ‘খাট’ শব্দটিকে বিকৃত করে লেখা হয়েছে ‘খাটো’। আর ‘হাতে প্রাণে’র বদলে লেখা হয়েছে ‘মনে প্রাণে’।
আজ সকালে পাঠ্যপুস্তকের ভুল সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী কুসুমকুমারী দাশের কবিতা ভুল প্রকাশিত হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘না জানা থাকলে বিষয়টি জেনে নিতে পারতো। এধরনের ভুল গ্রহণযোগ্য না।’
এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর এনসিবিটির কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘একটু ঝামেলায় আছি, পরে কোনও সময় কথা বলব’। যদিও এর আগে কবির লেখা মূল চরণ ও বিভিন্ন চরণের শব্দ বদলে দিলেও তিনি দাবি করছিলেন, এটাই শুদ্ধ। এর জন্য তিনি বন্দুক রাখেন বাংলা একাডেমির কাঁধে। ছাপা সংস্করণটি শুদ্ধ হলে এতদিন কবিতাটি ভুল পড়ানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এনসিটিবি’র এই সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলা একাডেমি আমাদের এই কবিতাটি সরবরাহ করেছে। প্রতিবছরের পরিমার্জনের অংশ হিসেবে এটি সংশোধিত হয়েছে।’
তার এই দাবি ঠিক না দাবি করে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উনারা কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’
তাহলে এবিষয়ে এখন কার কাঁধে দায় চাপাবেন এনসিটিবি প্রশ্নে আব্দুল মান্নান হেসে হেসে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন কথা বলছি না।’ এর আগে পাঠ্যবইয়ে দু একটি প্রিন্টিং মিসটেক ছাড়া কোনও ভুল নেই বলে এ প্রতিবেদককে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি। সেই চ্যালেঞ্জ মনে করিয়ে দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন না’।
/ইউআই/টিএন/
আরও পড়ুন: পাঠ্যবইয়ের যে তিনটি ভুলের কথা স্বীকার করলেন শিক্ষামন্ত্রী