বিশ্বজুড়েই মহররমের অন্যতম আকর্ষণ তাজিয়া মিছিল। বাংলাদেশেও শিয়া মতাবলম্বীরা তাজিয়া মিছিলে মধ্য দিয়ে কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন। তাজিয়া মিছিলের মূল লক্ষ্য হলো কারবালার ইতিহাস উপস্থাপন ও শোক প্রকাশ। কারবালার রক্তাক্ত স্মৃতির স্মরণে মিছিলে বুক চাপড়ে, জিঞ্জির (একাধিক ধারালো ছুরি বা ব্লেড দিয়ে তৈরি) দিয়ে শরীরে আঘাত করে মাতম করার রেওয়াজ ছিল দীর্ঘদিন ধরেই।
তবে গত দুই বছরের মতো এবারও জিঞ্জির দিয়ে শরীরে আঘাত করে রক্ত ঝরিয়ে শোকের মাতাম করতে দেখা যায়নি। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের নির্দেশনায় এবারও জিঞ্জির দিয়ে মাতম হয়নি তাজিয়া মিছিলে।
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর তাজিয়া মিছিলে প্রস্তুতির সময় রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসেনি দালানের সামনে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এরপর থেকেই তাজিয়া মিছিলকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হোসেনি দালানে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি তাজিয়া মিছিলে সব ধরনের ঢাল-ছুরি নিষিদ্ধ করা হয়। এবছরও ঢাকা মহানগর পুলিশ মিছিলে সব ধরনের ঢাল-ছুরি নিষিদ্ধ করে। মিছিলের নিশানা ১২ ফুটের বেশি না করারও অনুরোধ জানায় পুলিশ।
রবিবার (০১ অক্টোবর) ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযোগ্য মর্যাদায় আশুরা পালিত হয়। সকালে পুরান ঢাকার হোসেনি দালান থেকে ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল বের হয়। ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম হলেও জিঞ্জির দিয়ে রক্ত ঝরাতে দেখা যায়নি। হাজারো মানুষের শোকের মাতামে মিছিল এগিয়ে চলে আজিমপুর, নিউমার্কেট হয়ে ধানমন্ডি লেকের দিকে। শিশু, নারী-পুরুষ সবার অংশগ্রহণে মিছিল শেষ হয় ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়কের পাশের লেকে গিয়ে।
জিঞ্জির দিয়ে মাতম না করা প্রসঙ্গে হোসাইনী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মো. আরিফ বলেন, ‘ইমাম হোসাইনকে (রা.) রক্তাক্ত করার শোক নিজের মধ্য ধারণ করতেই জিঞ্জির দিয়ে মাতম করা হতো। তবে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ জিঞ্জির দিয়ে মাতম না করার অনুরোধ জানিয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে মিছিলে জিঞ্জির দিয়ে মাতম হয়নি।’
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন