বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজার গত ৭ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ। তার সন্ধান চেয়ে ‘শিক্ষক, বন্ধু ও স্বজন’ ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে। কিন্তু এখনও তার কোনও খবর পাওয়া যায়নি। বাবা নিখোঁজের কথা এখনও জানে না মোবাশ্বারের ছোট্ট মেয়েটি। বাবা খেলনা নিয়ে ফিরবে, এই আশায় আছে সে। একথা জানা গেছে মোবাশ্বারের সাবেক স্ত্রীর পোস্ট থেকে। সেই পোস্টটি নিজের ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস হিসেবে দিয়েছেন মোবাশ্বারের ছোট বোন তামান্না তাসমিন। পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে দেওয়া হলো:
স্ট্যাটাসে তামান্না লিখেছেন,
‘আজ ৭ম দিন
গোটা একটা সপ্তাহ পার হয়ে গেল! কোনও খবর নাই। আমার আর লিখতে ভালো লাগে না। মনে হয় কী হবে লিখে! টায়ার্ড লাগে সবকিছুই। সবকিছুই বৃথা মনে হয়।
ভাইয়ার সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে আমার সবসময়ই ভালো সম্পর্ক ছিল। ওদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরেও আমাদের প্রায়ই কথা হতো। আজকের লেখাটা ওর। ওর অনুরোধে সবার জন্যে দিলাম-
“৭ই নভেম্বরের পর থেকে মোবাশ্বারের জন্যে অনেক লেখালেখি হচ্ছে, মানববন্ধন হচ্ছে। ওর বন্ধুরা ওকে ফেরত চায়,ওকে যারা গুম করেছে তাদের বিচার চায়। আমি শাস্তি বা বিচার চাই না। আমি শুধু চাই, আমার ছোট্ট মেয়েটার বাবা মেয়ের কাছে ফিরে আসুক। ও শুধু একবার ফিরে আসুক,আমি কথা দিচ্ছি ও আর জীবনেও কোনও কিছু লিখবে না। ওর ফেইসবুক প্রোফাইল থাকবে না, ওর ব্লগ থাকবে না। প্লিজ বিশ্বাস করেন।
আমাদের একটা মেয়ে আছে। ডিভোর্সের পর আমাদের কখনও দেখা বা কথা হয় নাই। মেয়ের পিতামাতা হিসেবে আমরা সিক্রোনাইজড ছিলাম। মেয়েটাকে আমি বলেছি তার বাবা বাইরে গেছে ৭ তারিখে পড়াশুনা করতে। ওর বাবা যেহেতু প্রায়ই বাইরে যায় তাই সে বেশি প্রশ্ন করেনি। কিন্তু প্রচণ্ড অভিমান করেছে। কারণ এমন কখনও হয়নি যে, ওর বাবা ওকে না জানিয়ে কোথাও গেছে। ও খুব অবাক হয়ে বলেছে "কই, বাবা তো আমাকে বলে গেলো না।”
আমার মেয়ে জানে যে তার বাবা শুক্রবার তাকে খেলনা কিনতে নিয়ে যাবে। কিন্তু বাবা তাকে না জানিয়ে বিদেশ যাবে এটা সে কিছুতেই মানতে পারছে না। ফুফুর সাথেও তার বেশ ভালো খাতির। বাবার উপর অভিমান করে সে ফুফুর সাথেও কথা বলে না এখন।
মেয়েটা জানে তার বাবা বাইরে থেকে খেলনা নিয়ে আসবে অনেক। নভেম্বরেই তার জন্মদিন। প্রতি বছর তার বাবা তার জন্যে একটা বার্থ ডে পার্টি করে। আর আমি একটা করি। এবারও সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, "আচ্ছা এবারও তো আমার ২টা পার্টি হবে তাই না?” বাবার সাথে খেলতে যাওয়া,মুভি দেখতে যাওয়ার খুব পাগল সে। আপনারা ইমোশন কতটুকু বুঝেন আমি জানি না, কিন্তু আমার মেয়ে বুঝে! এই মেয়েটাকে এভাবে মিথ্যা বলে আর কতদিন বুঝ দিয়ে রাখবো আমি?
কার কী যায় আসে আমি জানি না। কিন্তু মোবাশ্বারের বাবার গোটা দুনিয়া জুড়ে ছিল শুধু উনার ছেলে। উনাকে আমি যতটুকু চিনি, ছেলের অভাবে বেশিদিন সুস্থির থাকতে পারবেন না। ওর মেয়ে আর বাবার দিকে তাকিয়ে হলেও ওকে ফেরত আনার ব্যবস্থা করেন প্লিজ। দরকার হলে ও সারাজীবন বাসায় বসে থাকবে ওর বাবার কাছে। দরকার হলে ও চাকরি করবে না। তবুও ওর বাবা আর মেয়ের কাছে ওকে ফেরত দিন একটাবার।
আমার মেয়ের পছন্দের খেলনা My Little Pony। দুনিয়ার আর কোনও খেলনা ওকে টানে না। মোবাশ্বার যখনই বাইরে গেছে, খুঁজে খুঁজে ব্যাগ ভর্তি করে এই খেলনা নিয়ে এসেছে। আমার গোটা রুম এই খেলনা দিয়ে ভর্তি। আপনাদেরও নিশ্চই বাচ্চা আছে, আপনাদের বাচ্চার কোন খেলনা পছন্দ? আপনারা দূরে গেলে সেই বাচ্চার কি অবস্থা হয়?’
